১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৫৫

করোনাকালের শিক্ষা নিয়ে জরিপ

প্রাথমিক-মাধ্যমিকে ঝরল বেশি

করোনা মহামারীর আগে একজন শিক্ষার্থীর দৈনিক গড় পড়াশোনা ছিল ৬ ঘণ্টা। করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় এই পড়ালেখার হার গড়ে ৪ ঘণ্টা কমেছে। অর্থাৎ স্কুল বন্ধ থাকায় একজন শিক্ষার্থী গড়ে দুই ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে। আর এ সময় ঝরে পড়াদের হার বেশি দেখা গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে। এর মধ্যে প্রাথমিকে ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৫ শতাংশ ঝরে পড়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ভবনের অডিটোরিয়ামে গতকাল বৃহস্পতিবার শিশু শিক্ষা জরিপ-২০২১ এর রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বিবিএস ও ইউনিসেফ যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মো: মতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্পিয়ার শাখার প্রধান স্টানলি গোয়াভুয়ার। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ডেমোগ্র্যাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো: মাসুদ আলম।

মাসুদ আলম বলেন, আন্তর্জাতিক মানের জরিপ পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র অনুসরণ করে সারা দেশে মোট ৯ হাজার খানায় ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর হতে ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি সময়ে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপ অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরিচালিত বিভিন্ন দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে।

এ ছাড়া এই বন্ধের কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের শিশুরা। যাদের ইন্টারনেট ও টেলিভিশন ব্যবহারের সুযোগ সীমিত এবং যাদের বাড়িতে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মতো সহায়ক ডিভাইসের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া শহর এলাকার শিশুদের (২৮ দশমিক ৭ শতাংশ) তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় কমসংখ্যক শিশু (১৫ দশমিক ৯ শতাংশ) দূরশিক্ষণ ক্লাসে অংশ নেয়।

ফলাফলে দেখা গেছে, কোভিডকালে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় উপস্থিতি যথাক্রমে ৮০.৫, ৫৯. ৬ ও ৫০.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৯ এর তুলনায় প্রাথমিকে কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুটা বেড়েছে। আর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার হার বেশি। ২০২১ সালে প্রাথমিকের ৪ শতাংশ ছাত্র পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। মেয়েরা ছেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রাথমিকে ঝরে পড়া মোট শিক্ষার্থীর হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ। মাধ্যমিকেও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এটি ছিল ৫ শতাংশ। অথচ কডিডের আগে এ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বেশি। কোভিডে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে আর মেয়েদের মধ্যে এ হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

জরিপে আরো দেখা গেছে, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থী যেখানে বাসা, স্কুল ও কোচিং মিলিয়ে দৈনিক গড়ে ৬ ঘণ্টা পড়াশুনা করত, সেখানে স্কুল বন্ধ থাকাকালে দৈনিক পড়াশোনা করেছে ২ ঘণ্টা। কোভিডকালীন শিক্ষার্থীদের পড়া ও গাণিতিক দক্ষতা যথাক্রমে ৪৯.৮ ও ২৫.৮ শতাংশ। যা ২০১৯ এর তুলনায় গণিতে কিছুটা কমলেও পড়ার দক্ষতার ক্ষেত্রে বেড়েছে। জরিপের ফলাফলে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরিচালিত বিভিন্ন দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে। দেখা গেছে, করোনাকালে প্রাথমিকে ৮০ দশমিক ৫, মাধ্যমিকে ৫৯ দশমিক ৬ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ উপস্থিত ছিল। অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় প্রাথমিকে কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুটা বেড়েছে। তা ছাড়া কোভিডকালে স্কুল বন্ধ থাকার সময় ২০ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষক ফোনে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিয়েছেন, ২০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিয়েছেন। ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট ও এসাইনমেন্ট শিট দিয়েছেন। আর ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কোনো খোঁজই নেননি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, সরকারের গৃহীত ত্বরিত পদক্ষেপের কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব সহনশীল মাত্রায় ছিল। এ ধরনের জরিপ পরিচালনার জন্য বিবিএস ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান।

ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব বিষয়ে আগে নির্ভরযোগ্য তেমন কোনো সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তুলে এনেছে। এ জরিপের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এখন শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/734842