১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৫০

হজের খরচ ও ধর্মীয় অধিকার

-ইবনে নূরুল হুদা

এবারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকার তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। কারণ, এ বছর হজের জন্য যেভাবে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে তা কোন মহলের কাছ গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না বরং বিষয়টিক ধর্মমন্ত্রণালয়ের এক ধরনের দায়িত্বহীনতা ও অবিবেচনাপ্রসূত কাজ বলেই মনে করা হচ্ছে। হজ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ও সর্বসাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ দেখে একথা মনে করার যৌক্তিকতা রয়েছে যে, সরকারের ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণেই মানুষের ধর্মীয় অধিকার সংকোচিত হচ্ছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে হজযাত্রীদের জন্য নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলেও আমাদের দেশে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনাকাক্সিক্ষতভাবে হজের খরচ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য ইসলামের এই মৌলিক ইবাদত পালন প্রায় নাগালের বাইরে চলে গেছে। এমনকি অতিমাত্রায় ব্যয়বৃদ্ধির কারণে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে হজ করতে ইচ্ছুকদের ক্ষেত্রে স্ত্রীদেরই কপাল পুড়েছে। অথচ আমাদের সংবিধানে দেশের সকল ধর্মের মানুষের ধর্মপালনের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২(ক)-এ বলা হয়েছে, প্রজতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। কিন্তু হজকে কেন্দ্র করে সরকার যে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি, বোধ-বিশ^াস, আবেগ-অনুভূতির প্রতি অশ্রদ্ধা ও সাংবিধানিক অধিকারের ক্ষেত্রে কৌশলী প্রতিবন্ধকতা কি না তা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে নানাবিধ প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

বস্তুত, হজ ইসলামের অন্যতম মৌলিক এবং সামর্থ্যবানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত। ইসলামের পরিভাষায়, হজ হল ‘বাইতুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহর ঘর’ কাবার উদ্দেশ্যে যাত্রা ও এতদসংক্রান্ত যাবতীয় বিধিবিধান নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে পালন করা। এটি শাহাদাহ (আল্লাহর কাছে শপথ), সালাত (প্রার্থনা), যাকাত (দান) এবং সাওম (রোজা)-এর পাশাপাশি এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। হজ মুসলিম উম্মাহর সংহতি এবং আল্লাহর কাছে তাদের আত্মসমর্পণের একটি বাহ্যিক প্রকাশ।

হজের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। মূলত ইসলামপূর্ব তথা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই হারাম শরীফে প্রতি বছরই হজের আনুষ্ঠানিকতা পালিত হয়ে আসছে। সামর্থ্যবান মুসলমানরা অত্যাবশ্যকীয় হিসাবে প্রতিবছরই এই পবিত্রতম কাজটি যথাযথ গুরুত্বের সম্পাদন করে থাকেন। মুসলিম বিশে^র দেশগুলোসহ বিশে^র অমুসলিম রাষ্ট্রেও হাজীদের হজ পালনকে নির্বিঘœ, উৎসাহিত ও সহজীকরণ করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এমনকি বিশে^র বিভিন্ন দেশে সহজ শর্তে ঋণ ও হাজীদের জন্য প্রণোদনা প্রদানেরও ব্যবস্থার কথা জানা যায়। নিকট অতীতে আমাদের দেশেও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখা হয়েছে। ফলে আমাদের দেশের হজযাত্রীরা খুব সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যেই হজব্রত পালন করে আসছেন। কিন্তু চলতি বছরের হজ যাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষতভাবে ও অতিমাত্রায় হজের খরচ বাড়ানো হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে হজ নিবন্ধনে। আমাদের দেশ থেকে হজযাত্রীদের লক্ষাধিক কোটা থাকলেও দফায় দফায় নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানোর পরে ১০ হাজারের বেশি হজ প্রত্যাশী নিবন্ধিত হননি। আগের নিবন্ধিত অনেকেই আর্থিক সামর্থহীনতার কারণে হজে যেতে সমস্যায় পড়েছেন। যা সরকারের ধর্মীয় অধিকার সঙ্কোচনেরই নামান্তর।

দীর্ঘমেয়াদে করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে শুধু বাংলাদেশে নয় বরং পুরো বিশ^ অর্থনীতিতে টালটামাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের আমদানি নির্ভরতায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির কারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়তই বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ জ¦ালানির দাম। দোহাই দেয়া হচ্ছে করোনা আর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও আন্তর্জাতিক বাজরের। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, চলমান সঙ্কটকে অজুহাত বানিয়ে যেসব ক্ষেত্রে আমরা আমদানি নির্ভর নই সেসব পণ্যের দামও দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর এই মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে সরকার সব সময়ই অবৈধ বাজার সিন্ডিকেট, অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপতা ও ক্রেতাদের আবেগকে দায়ী করে আসলেও সরকারের এসব দাবির যৌক্তিকতা ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কারণ, হজের খরচ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজার সিন্ডিকেট, অসাধু ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের আবেগের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। সরকার হজের খচর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে নানাবিধ অজুহাত দাঁড় করালেও এসব কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

হজ, ওমরা ও ভিজিটের বিমান ভাড়া পর্যালোচনা করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, আমাদের দেশ থেকে হজের বিমান ভাড়া ১ লক্ষ হাজার টাকা, ওমরার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ এবং ভিজিটের জন্য মাত্র ৬ হাজার টাকা। এতে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে, ধর্মপ্রাণ মানুষের হজব্রত পালনকে সহজীকরণ না করে ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণ নানাধিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের হজের খরচ পর্যালোচনায় বিষয়টি আরো দিবালোকের মতই স্পষ্ট। জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে হজের খরচ ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬শ, ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪শ ৫৩ টাকা এবং ভারত থেকে মাত্র ৩ লক্ষ টাকা। যা সরকারের ধর্মীয় অধিকার সংকোচনেরই নামান্তর।

মূলত, সরকার চলতি বছরের হজ যাত্রীদের জন্য বর্ধিতহারে বিমান টিকেটের যে দাম নির্ধারণ করেছে তা দেশের আত্মসচেতন মহলসহ সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। হজ্জ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ বা আটাব বলছে, বিমান ভাড়া এতো বেশি করে ঠিক করা হয়েছে যে এটি তাদের মতে ‘অবিচার’। ফলে কয়েক দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অস্বাভাবিক বিমান ভাড়ার কারণে হজ প্যাকেজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ওই দু’টি সংগঠনের নেতারা। অবশ্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বলছে, সার্বিক পরিস্থিতি ও খরচ বিবেচনা করেই বিমান ভাড়া ঠিক করা হয়েছে, যেন বিমানের লাভ না হয়, অন্তত লোকসান যেন এড়ানো সম্ভব হবে। কিন্তু বিমানের এই দাবি কেউই যুক্তিযুক্ত মনে করছে না।

এখন সৌদি আরবে আসা-যাওয়ার খরচ এয়ারলাইন্স ভেদে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা বলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো দাবি করছে। বছরের অন্য সময় ওমরাহ পালন বা অন্য কোনো কারণে সৌদি আরবে ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যেই রিটার্ন টিকেট পাওয়া যায়। যদিও মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের ভিড় বাড়লে অনেক সময় কিছু এয়ারলাইন্স ওই সুযোগে দাম হুট করে বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও আছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ যে বছরের অন্য সময়ের লোকসান কাটাতে হজ মৌসুমকে ব্যবহার করছে বিমান। যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বিষয়ে বলেছেন, চলতি বছরের জন্য ভাড়া প্রথমে তারা দু’লাখ ১০ হাজার টাকা প্রস্তাব করলেও পরে হজ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সেটি কমিয়ে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে এই ভাড়া ছিল এক লাখ ১৮ হাজার টাকা, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ছিল এক লাখ ২৮ হাজার টাকা করে, ২০২০ সালে ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা, ২০২২ সালে ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর চলতি বছরের জন্য ভাড়া ঠিক হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৭ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর বক্তব্য হলো, ‘সাধারণত বিভিন্ন খরচের কারণে নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে হজ যাত্রীদের ক্ষেত্রে ভাড়া ৫০/৬০ ভাগ যোগ করে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ বছর অনেক বেশি ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। ভাড়া এতটা বৃদ্ধির সাথে আমরা একমত নই’।

জানা গেছে, সাধারণত বিমান হজ যাত্রীদের ভাড়াসম্পর্কিত একটি প্রস্তাব এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটিতে উত্থাপন করে। পরে কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে একটি ভাড়ার পরিমাণ চূড়ান্ত করে থাকে। এ বছর শুরুতে বিমানের পক্ষ থেকে দু’লাখ ১০ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে জাতীয় কমিটি সেটি কিছুটা কমিয়ে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা ঠিক করেছে। এ বছর ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন চলতি বছর হজ করতে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে যাবেন। সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজ মৌসুমকে একটি ‘পিক টাইম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিমানের জন্য। এছাড়া চলতি বছর আটটি বোয়িং শুধুমাত্র হজ যাত্রীদের আনা নেয়ার কাজ করবে। ফলে বেশ কিছু রুটে বিমান চলাচল কমবে বা বন্ধ হতে পারে। এছাড়া জেট ফুয়েল ও ডলারের দাম বৃদ্ধিও বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্যাক্স অনেকে বেড়ে যাওয়াতেও বিমানের খরচ বেড়েছে। এছাড়া আশকোনা হাজী ক্যাম্পেও বিমানের অনেক খরচ আছে। এসব মিলিয়ে এবার যে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা লাভের উদ্দেশ্যে কিছু করিনি। বরং যেটা সর্বনিম্ন ধরলে লোকসান এড়ানো যাবে, সেটাই ধরা হয়েছে।’ সূত্র দাবি করছে, হজে মোট ১৬টি ক্যাটাগরিতে ব্যয় নির্ধারণ করে হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত হয়। এবার সব ক্যাটাগরিতেই ব্যয় বৃদ্ধির কারণে হজ প্যাকেজের দাম অনেক বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিমান জাতীয় সংস্থা। হজ যাত্রীদের প্রতি আমাদের দায়িত্বও আছে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি সবার জানা। তারপরও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, যেন ভাড়া যৌক্তিক নির্ধারণ করা যায়।’ তাদের এই দাবিকে কেউই কাক্সিক্ষত ও যৌক্তিক মনে করছেন না। বাস্তবতা যদি তাই হয় তাহলে বিশে^র বিভিন্ন এখনো কীভাবে কম খরচে নাগরিকদের হজ করার সুযোগ দিচ্ছে?

এমনকি বিমান কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্যের সাথে একমত নয় হজ্জ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সংগঠনটির পক্ষে বলা হচ্ছে, একটি টেকনিক্যাল কমিটি দিয়ে সব পর্যালোচনা করে ভাড়া ঠিক করা উচিত। এটা করা হলে ক্ষোভ বা অসন্তোষ থাকবে না। তারা আরো বলছেন, ‘যে ভাড়া ঠিক করা হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। গত বছরের চেয়ে ৫৮ হাজার টাকা বাড়ানোটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন, হজের সময় যাত্রী বহন করা বিমান আর সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের জন্য মনোপলি ব্যবসা। অন্য কোনো এয়ারলাইন্সকে হজ যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেয়া হয় না। তারা আরো বলছেন, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিমান নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে। সৌদিয়াকেও ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। কারণ, বিমানের ভাড়াই সৌদিয়ার জন্য প্রযোজ্য হবে। জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েই এটা করা হয়, যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ডলারের বিনিময় হার ও জেট ফুয়েলের দামের বিষয়ে বলা হয়, সেটি তো এখনো অনেক বাড়তি, তাহলে এখন যে দামে টিকেট দেয়া যাচ্ছে, সে দাম হাজীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না কেন? এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা আরো দাবি করছেন, ডলার ও জেট ফুয়েলের দাম তো আগেই বেড়েছে। এখন গড় ভাড়া ৭০/৮০ হাজার টাকা।

হজের ব্যবস্থাপনার জন্য এটা দ্বিগুণ করলেও ভাড়া এক লাখ ২০/৩০ হাজারের বেশি নির্ধারণের সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘হজ বিমান ও সৌদিয়ার জন্য একটি গ্যারান্টেড ব্যবসা। হজ যাত্রীদের জিম্মি করে এ সুযোগ নিচ্ছে সংস্থা দু’টি। বিমান তার সারা বছরের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ হিসেবেও ব্যবহার করে।

সার্বিক দিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, সরকারের ব্যবসায়িক মানসিকতা থেকেই পরিকল্পিতভাবে হজের খরচ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যেসব কারণ দাঁড় করানো হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার কোন যুক্তি বা ভিত্তি নেই। সরকার সরাসরি ধর্মপ্রাণ মানুষ হজ পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এমনটা না বলা গেলেও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণেই হজের মত মৌলিক ধর্মীয় বিধান পালনে যে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বিষয়টিকে ধর্মীয় স্বাধীনতায় অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও সামর্থ্য বিবেচনায় হজের খরচ পুনর্মূলায়ন করে নিবন্ধনের সময়সীমা আরো বাড়ানো উচিত। অন্যথায় মধ্যবিত্তের জন্য হজ পালন সহজসাধ্য হবে না।

https://dailysangram.com/post/519458