১৬ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:০৪

এবার রিকশার জমা বাড়িয়ে দিলেন মালিকরা


‘আমগো উপরেও গজব নামছে। মনে হয় আর রিকশা চালাতি পারমু না। দেড় মাসের ভিতর দুইবার জমা বাড়ছে। কয়দিন আগেই ২০ টাকা বাড়াইছে। গতকাল আবার মালিক আইসা কইলো, কাল থেইক্যা জমা আরও ৩০ টেকা বেশি দিতে হইবো। নইলে রিকশা দিবো না। এজন্য গ্যারেজে নতুন জমার নোটিশও ঝুলাইয়া দিয়া গেছে। বুঝতাছি এইবার ঢাকা ছাড়তে অইবো। এইহানে আর থাকা যাইবো না টিকা যাইবো না। গেরামে কামাই নাই দেইখ্যা ঢাকা আইলাম।

কিন্তু এহানে যে খরচ, যা আয় করি নিজেরই চলে না। বাড়ি টেকা পাঠামু কেমনে। হঠাৎ ঢাকা মহানগরে রিকশা জমা বাড়ায় এমনভাবে নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন রিকশাচালক জলিল মিয়া। বলেন, জিনিস পাতির দাম বাড়ছে। মানুষ অহন রিকশায় উঠতে চায় না। ভাড়া একটু বেশি চাইলেই হাঁটা শুরু করে। অহন আগের মতো কামাই নাই। সারাদিন ৪০০ টাকা তুলতে খবর হয়ে যায়। জমা ১২০ টাকা দিতেই কষ্ট হইতো। অহন ১৫০ টাকা দিলে টেকাই থাকবো না। বাড়ি পাঠামু কি? জানা গেছে, রিকশা ও ভ্যানের জমা ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করেছেন ঢাকা মহানগর রিকশা ও ভ্যান মালিক কল্যাণ সমিতি। গতকাল থেকে রাজধানীর সকল জায়গায় নতুন এ ভাড়া কার্যকর হয়েছে। হঠাৎ জমা বাড়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালকরা। এ সিদ্ধান্তকে তারা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। রিকশাচালকদের কেউ কেউ এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মোহাম্মদপুর তুরাগ হাউজিং এলাকার আনিচুর রহমানের গ্যারেজে কথা হয় রিকশাচালক বাবুল শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, মালিকরা মন চাইলেই জমা বাড়ায় দেয়। তারা কখনো আমাগো কথা চিন্তা করে না। হেগো কথা হলো জমা বাড়ামু, রিকশা নিলে নেও, না নিলে যাওগা। হেগো লোকের অভাব নাই। পেট চালাতে আমাদের বাধ্য হয়েই নিতে হয়। তাছাড়া কি করমু। পেটের জ্বালা আছে। রিকশা না চালাইলে ভাত জুটবো না। পোলামাইয়া আমগো দিকে তাকায় থাকে। টেকা পাঠামু তারা চলবে। পার্টস পাতির দাম বাড়লে মালিক জমা বাড়ায় দেয়। কিন্তু আমগো কি হইবো? রিকশা ভাড়াতো বাড়ে না। আগের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি চাইলে যাত্রীরা দৌড় মারে।

এহন লোকজন অল্প দূরত্ব পায়ে হাঁইটা যায়, রিকশায় উঠে না। তারাও খরচ বাঁচায়। তবে জমা বাড়ার বিষয়ে তুরাগ হাউজিংয়ের দুই নম্বর রোডের গ্যারেজ মালিক আনিচুর রহমান বলেন, রিকশার সকল পার্টসের দাম বেড়েছে। আগে যেই টায়ার কিনতাম ৪১০ টাকা দিয়ে সেটা এখন ৫৩০ টাকা হইছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। তাই রিকশার জমা না বাড়িয়ে উপায় ছিল না। আর এই সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। এটা রিকশা-ভ্যান- মালিক কল্যাণ সমিতির সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে তারা আরও বিস্তারিত বলতে পারবেন। ঢাকা মহানগর রিকশা ও ভ্যান মালিক কল্যাণ সমিতির প্রচার সম্পাদক বাবুল রশিদ বলেন, চলতি মাসের ১ তারিখেই জমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা আরও ১৫ দিন পরে বাড়ালাম। পার্টসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে জমা বাড়ানো ছাড়া পথ ছিল না। যদি পার্টসের দাম কমে তাহলে জমা আবার কমানো হবে। রিকশার পার্টসের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিকশার চাকার টিউব আগে ছিল ৪০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে। এক্সেল আগে ছিল ৩৭০ টাকা এখন ৫৫০ টাকা। বেলবাটি আগে ছিল ৩৫ টাকা এখন ৬৫ টাকা। প্যাডেল রাবার আগে ছিল ১০ টাকা এখন হয়েছে ২০ টাকা। সিট কভার আগে ছিল ২০ টাকা এখন ৪০ টাকা। চেইন আগে ছিল ২২০ টাকা এখন ৩৩০ টাকা। গিয়ার বক্স আগে ছিল ২২০ টাকা এখন ৩৩০ টাকা। স্পোক আগে ছিল ১৬ টাকা এখন হয়েছে ৩০ টাকা। টায়ার ৪১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৩০ টাকা। হুড কাভার আগে ছিল ১৬০০ এখন ২৮০০ টাকা। বিয়ারিং আগে ছিল ৩৫০ টাকা এখন ৪৩০ টাকা। আগে পুরো একটি রিকশা তৈরিতে খরচ হতো ১৩ হাজার টাকা। এখন সেখানে ৩০ হাজার টাকা লাগছে।

https://mzamin.com/news.php?news=46963