১৫ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ১২:৩৫

চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত

কিশোরগঞ্জের হোসেন্দী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। গত ৩ মার্চ কাঁচপুর মহাসড়কে ডিউটিরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গোড়ালিতে চোট পান তিনি। এরপর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)।

আলমগীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ভর্তির টিকিট ১৫ টাকা আর বিছানা ভাড়া ফি। বাকি সব নিজেদের কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন চারবার ইনজেকশন সঙ্গে ওষুধ কিনে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। সার্জারির জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। চিকিৎসা করতে গিয়ে এখন বাধ্য হয়ে ঋণ করছি।

গতকাল মঙ্গলবার নিটোর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীই বলছেন চিকিৎসা ব্যয় বেশি।
রোগীদের বেশি ভাগই তরুণ এবং তারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি ছোট সার্জারিতেই সাকল্যে খরচ হচ্ছে ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আর বড় সার্জারিতে আড়াই লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত।

দেশে প্রতিবছর যে বিপুলসংখ্যক লোক পঙ্গু হচ্ছে, তার একটি বড় অংশই হয় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। আর শিশুরা বেশির ভাগ পঙ্গু হচ্ছে ছাদ, গাছ কিংবা অন্যান্য জায়গা থেকে পড়ে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য কারণেও পঙ্গু হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পঙ্গু দিবস।

বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব ও নিটোরের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্ঘটনার শিকার একজন রোগীর চিকিৎসা ব্যয় গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যান্ডেজের গজ কাপড়, প্লাস্টার থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। আর এভাবে চিকিৎসা ব্যয় বাড়তে থাকলে দেশে পঙ্গুত্বের হার আরো বাড়বে।

আগারগাঁও এলাকায় অর্থোপেডিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রি করেন এমন কয়েকটি দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পায়ের গোড়ালি, পায়ের পাতায় ব্যথায় ব্যবহৃত ‘ফুট ড্রপ’ ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা, হাঁটুর টুপি বা নি ক্যাপের দাম ২১০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫০ টাকা, হাঁটুর বন্ধনীর দাম এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। হাঁটার ক্র্যাচ স্টিক তিন মাস আগে বিক্রি হতো ৪০০ টাকায়। এখন হচ্ছে ৬০০ টাকায়।

দুই বছরে সার্জারি রোগী বেড়ে দ্বিগুণ : নিটোরে গত বছর সার্জারি হয় ৪২ হাজার ৬৯৫ জনের। ২০২১ সালে হয় ২৯ হাজার ৬০৯ জনের, ২০২০ সালে সার্জারি হয় ২০ হাজার ৩৩১ জনের। অর্থাৎ গত দুই বছরে সার্জারি রোগী বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
গত বছর জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৬৮ হাজার জন। ২০২১ সালে চিকিৎসা নেয় ৭০ হাজার জন। ২০২০ সালে চিকিৎসা নেয় ৫০ হাজার জন। অর্থাৎ গত দুই বছরে জরুরি বিভাগে রোগী বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

হাসপাতালটিতে গত বছর ২০২২ সালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে দুই লাখ ৬৪ হাজার জন। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৭ হাজার।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জনের মৃত্যু ছাড়াও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছে।

অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যে সমস্যা হয়, এর মধ্যে আছে রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়া, ওপেন ফ্রাকচার ও হাড়ের ইনফেকশন। মূলত এই তিনটি রোগীদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/03/15/1261200