১৪ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:১৭

‘২০০ টাকার তরকারিতে এখন আর ব্যাগ ভরে না’

‘আগে একশ’ টাকার তরকারি কিনলে ব্যাগ ভরে যেত। কিন্তু এখন ২০০ টাকায়ও অর্ধেক ভরছে না। পটল ৭০ টাকা কেজি, বেগুন ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মতো দিনমজুররা তো আর চলতে পারছে না। কীভাবে সবজি কিনে খাবো? সামনে রোজা আসছে আর দাম হু হু করে বাড়ছে। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তিন বেলা খেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।’

ঝিনাইদহ সদরের নতুন হাটখোলা বাজারে সবজি কিনতে এসে কষ্টের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন কালীকাপুরের দিনমজুর কৃষক জালাল বিশ্বাস।

নাহিদ হাসান আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘মুরগির দাম আকাশচুম্বি। সাধারণ মানুষ আগে ব্রয়লার মুরগি কিনে খেত, তার দামও এখন নাগালের বাইরে। এক কথায় বাজার ব্যবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ নেই। সাধারণ মানুষের দিকে কেউ তাকায় না। ব্যবসায়ীদের নজর খালি লাভ আর লাভ করা।’

জালাল আর নাহিদের মতো নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ১৫ টাকা। ছোলা, চিনির দামও বেড়েছ ৫ থেকে ১০ টাকা। আর নানা অজুহাতে মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৬০, সোনালি ৩৩৫, লেয়ার ৩৪০ ও দেশি বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা কেজি দরে।

আসন্ন রমজান ঘিরে সামনে আরও দাম বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে। তবে বাজার তদারকিতে জেলা বিপণন বিভাগ কিংবা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।

নতুন হাটখোলা বাজারে নিয়মিত তরকারি কিনতে আসেন মুক্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের তরকারির দাম বেশি। এতে আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে।’

সবজির দাম বাড়ার কথা জানান বিক্রেতা রাজ হোসেন। তিনি দাবি করেন, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই।
মুরগি বিক্রেতা ও খামারি হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ বেশি না হলেও মোটামুটি রয়েছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। খামার থেকে মুরগি কিনতে কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। সেখান থেকে খুচরা পর্যায়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় দাম বললে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় ক্রেতারা।

মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ায় তা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাবিবুর। তিনি বলেন, ৫০ কেজি খাবারের বস্তায় গড়ে বেড়েছে ২০০ টাকা। বাচ্চার দামও বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তাই অনেক খামারি নতুন বাচ্চা আনতে পারছেন না। তবে ব্যবসায়ীক জীবনে পোল্ট্রি মুরগির দাম এত বেশি কখনও দেখেননি বলেও জানান তিনি।

সদর উপজেলার ভুটিয়ারগাতী এলাকার খামারি মোহাম্মদ আলীর দাবি, বড় বড় বাচ্চা উৎপাদনকারী খামারিরা সিন্ডিকেট করে তাদের বাচ্চা দিচ্ছে না। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন খামারিরা। আর এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর। প্রতি মাসেই খাবারের দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। এক কথায় খামারি ও মুরগির খাবার সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি।

বাজার মনিটরিংয়ের ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা গোলাম মারুফ খান। তিনি বলেন, এখন যেসব সবজি বিক্রি হচ্ছে এর মধ্যে অনেক বাইরের জেলা থেকে আনছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় উৎপাদিত নতুন সবজি বাজারে এলেই দাম কমে যাবে।

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, আসন্ন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছেন। সে মোতাবেক জরুরি সভা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যদের নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযানে নামবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যরা।

https://samakal.com/whole-country/article/2303162157