১৩ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ১২:২৬

‘কবে গোশত খেয়েছি মনে নেই’

কবে গোশত খেয়েছি তা মনে নেই। নিত্যপণ্য চাল, ডাল, তেল, আটা, শাক-সবজি কিনতেই টাকা থাকছে না। অন্য কিছু ভাবা তো দূরের কথা। ভুলে গেছি, ডিম-দুধ ও মাছ খাওয়া। কথাগুলো বলছিলেন শালবন এলাকার ষাটোর্ধ্ব পেয়ারু হোসেন। তিনি বলেন, আগে ঘড়ি মেকানিকের কাজ করতাম। সেই আয় দিয়ে ছেলেমেয়েকে অনার্স ও মাস্টার্স পরিয়েছি। এখন আর আগের মতো আয় নেই। ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। সংসার চলছে স্ত্রীর কাপড় সেলাইয়ের টাকা ও ছেলের টিউশনির টাকা দিয়ে।

এদিকে নিত্যপণ্য বাজার এখন বড়লোক-টাকাওয়ালাদের জন্য এমন মন্তব্য করেছেন শমসের আলীসহ বাজারে আসা অন্যরা।

রিকশাচালক সেলিম মিয়া বলেন, আগে তো ব্রয়লার মুরগি মাঝেমধ্যে কিনে খেতাম। এখন সেটাও স্বপ্ন হয়ে গেছে। এখন যেদিন একটু ভালো ভাড়া মারতে পারি সেদিন ব্রয়লারের মাথা, পাও ও চামড়া কিনে খাই। ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন, করোনার ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে দিশাহারা হয়ে পড়েছি। সন্তানদের লেখাপড়াও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আর কতো ধারদেনা করবো, পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সংবাদকর্মী পিয়াল বলেন, বাজারের দামের যে অবস্থা। বোধ হয় আর চলতে পারবো না। এমনিতেই আমাদের বেতন কম, তার উপর জিনিসপত্রের দামের কারণে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রংপুর সিটি বাজার, কামাল কাছনা বাজার, টার্মিনাল বাজার, লালবাগহাট, সিও বাজারসহ সর্বত্রই সরজমিন দেখা গেছে, নানা অজুহাতে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।

কেনার আগে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা চাহিদা অনুযায়ী কোন জিনিস নিতে পারবেন সেই হিসাব মেলাচ্ছেন বারবার। অনেকে পণ্য না কিনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল খুচরা বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিকন চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, গরুর মাংস সাড়ে ৭ শ’ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা, দেশি মুরগি সাড়ে ৫ শ’ টাকা, সোনালি সাড়ে ৩ শ’, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, বড় রুই-কাতলাসহ অন্যান্য মাছ ৪ শ’ থেকে ৬ শ’ টাকা, দেশি শোল, মাগুর, শিং, টেংরা, গড়াই, গচি, পাবদা প্রকারভেদে ৫ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। ডিম ডজন ১ শ’ ৩৫ টাকা থেকে ১ শ’ ৪৫ টাকা। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করলা ১৪০ টাকা কেজি, পটল ৯০ টাকা কেজি, ঢেড়স ১২০ টাকা কেজি, সজনা ২ শ’ টাকা কেজি, টমেটো ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা, আদা ১৪০ টাকা কেজি, রসুন ১৪০ টাকা কেজি, শুকনা মরিচ ৩ শ’ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, পিয়াজ ৩০ টাকাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। কেন পণ্যের দাম বাড়ছে জিজ্ঞাসা করতেই দোকানিরা বলেন, পাইকারি মহাজনেরা দাম যেভাবে বাড়াচ্ছে, আমরাও এনে সেভাবে বিক্রি করছি। পাইকারি আড়তদারদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বাড়ছে বিধায় তাদের করণীয় কিছু নেই।

লাল মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারের মাছ মাংস দেখেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই। তিনি বলেন, আগে দেশি মাছের বাজারে সের, কেজি দরে দাম বলতো দোকানিরা। এখন সের, কেজি দরে বলে না, বলে পোয়া দরে।

এ ব্যাপারে মাছ ব্যবসায়ী বাবু বলেন, দেশি মাছ ৮ শ’ টাকা কেজি বললে ক্রেতারা আর এক সেকেন্ড দাঁড়ায় না। তাই ২ শ’ টাকা পোয়া বললে তারা হয়তো দাঁড়িয়ে কেনার চিন্তা করে। গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে গোশত ব্যবসায়ী দুলারা মিয়া বলেন, গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি ও চামড়ার দাম না পাওয়ার কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়ে চলেছে।

https://mzamin.com/news.php?news=46469