১০ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৩৮

সুগন্ধি চালে দামের ভাপ

রমজান মাস সামনে রেখে সুগন্ধি বা পোলাওয়ের চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বিভিন্ন কম্পানির প্যাকেটজাত এক কেজির সুগন্ধি চাল বিক্রি করা হচ্ছে ১৭০ টাকায়। সুগন্ধি খোলা চালের দামও বেড়ে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ বাজারে সুগন্ধি চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই।

রমজানে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে সম্প্রতি সরকার চিনি আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমালেও এর কোনো প্রভাব এখনো খুচরা পর্যায়ে পড়েনি। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে মুরগির এখনো চড়া। বেড়েছে সবজির দামও। নতুন করে দাম না বাড়ায় ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে মাছের বাজার।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাবুবাজার, কারওয়ান বাজার, রামপুরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভালো মানের খোলা সুগন্ধি চাল কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা আগে ছিল কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এক কেজির প্যাকেটে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সুগন্ধি চালের দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা কেজি দরে। বাজারে প্যাকেট চিনি নেই। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা। ফার্মের ডিম ১৩৫ টাকা ডজন। দেশি আদা ১২০ টাকা, আমদানি করা চীনা আদার দাম এখনো বাড়তি, প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। দেশি রসুন কেজি ১০০ টাকা কেজি। আমদানি করা চীনা রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খুচরা বাজারে মোটা চাল ব্রি-২৮ ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, মিনিকেট ৭৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। এ ছাড়া বাজারে ডাল, ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুগন্ধি চালের বাজার এখন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বড় বড় গ্রুপ কম্পানি। তীর, প্রাণ, স্কয়ার, আকিজ, এসিআইসহ প্রায় ২০টি কম্পানি বাজারে সুগন্ধি চাল সরবরাহ করছে। ধানের মৌসুমে এসব কম্পানি বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ধান কিনে মজুদ করে। পরে তারা সুবিধামতো সময়ে প্যাকেটজাত করে যোগসাজশে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে।

চিনির দাম নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু শুল্ক কমালেই হবে না, বিক্রেতারা কম দামে চিনি বিক্রি করছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। তা না হলে শুল্ক কমিয়ে সরকারের রাজস্ব কমালেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না। সব টাকা চলে যাবে ব্যবসায়ীদের পকেটে।

রাজধানীর চালের পাইকারি বড় বাজার বাবুবাজারের সুগন্ধি চালের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স কনিক এন্টারপ্রাইজের মালিক জিয়াবুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুগন্ধি চালের বাজার এখন প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রাণ, স্কয়ার, তীর, আকিজ, এসিআইসহ প্রায় ২০টি কম্পানি। নতুন করে পাইকারি বাজারে সুগন্ধি চালের দাম বাড়েনি। তার পরও কম্পানিগুলো তাদের প্যাকেটজাতকৃত চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্যাকেট চালের সঙ্গে খোলা সুগন্ধি চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন; কিন্তু দেশের বাজারে সুগন্ধি চালের সরবরাহে কোনো ঘটতি নেই।’ তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে এখন সুগন্ধি চাল বস্তা (৫০ কেজি) ছয় হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দুই-তিন মাস আগে বাজারে নতুন সুগন্ধি চাল এলে তখন দাম কমে পুরাতন সুগন্ধি চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয় ৬২০০ থেকে ৬২৫০ টাকায়। ধানের মৌসুম শেষ হলে তখন আবার সুগন্ধি চালের দাম বেড়ে যায়। তবে এক মাস ধরে পাইকারি বাজারে সুগন্ধি চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।’

রাজধানীর রামপুরার চাল ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব কম্পানি নতুন করে সুগন্ধি চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে কম্পানিভেদে সুগন্ধি চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, এখন নতুন দাম করেছে ১৭০ টাকা। ভালো মানের খোলা সুগন্ধি চালও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’
চিনির বাজার সম্পর্কে জোয়ারসাহারা বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চিনি আমদানি শুল্ক কমানোয় আমরা ভেবেছিলাম দাম কমবে, কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে উল্টো আরো দাম বেড়েছে। গত ৪ মার্চ পাইকারি চিনির বস্তা কিনেছি পাঁচ হাজার ৪২০ টাকায়, গত ৮ মার্চ কিনতে হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪০ টাকায়। চার দিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় ২০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে আমাদের।’

কারওয়ান বাজারের মুরগির ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) আমরা ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি করছি ২৪০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা আর দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’
বাড়ছে সবজির দাম : রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ কিছু সবজির দাম বেড়েছে। ফুলকপি প্রতিটি ৫০ টাকা ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৭০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শজনে ২০০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি ১২০ টাকা হয়েছে। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।

তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মাছ : ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ অনেকে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তুলনামূলকভাবে কম দামে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া ও নলা কিনতে পারছে তারা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, নলা ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দুই কেজি ওজনের রুই মাছ ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, টেংরা ৪০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা ও মাঝারি চিংড়ি ৬০০ টাকা কেজি।

রামপুরা বাজারে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে মাছের দাম বেশি থাকায় সপ্তাহে তিন-চার দিনই ব্রয়লার মুরগি খাওয়া হতো। এখন মুরগির চেয়ে কম দামে পাঙ্গাশসহ অন্যান্য মাছ কিনতে পারছি। সপ্তাহে এক দিনের বেশি মুরগি খাওয়া হয় না এখন।’

 

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/03/10/1259550