৯ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:০৭

দেশে ২ কোটিরও বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারেন না ৮০% রোগী

বিশ্ব কিডনি দিবস আজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও “বিশ্ব কিডনি দিবস” পালিত হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন দিবসটি পালনের মূল আয়োজক। এবছর বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য “সুস্থ কিডনি সবার জন্য-অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা!”

বর্তমান বিশ্বে কিডনি রোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম কিডনি রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীর প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা। যেকোনো দুর্যোগে, প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম, স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিক, এসব রোগী অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির শিকার হয়। গত ৭ই মার্চ রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বিশ্ব কিডনি দিবস ২০২৩ উদ্যাপন উপলক্ষে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত। ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯০০ জন রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন।

এর মধ্যে নতুন রোগী ছিল প্রায় ১০ হাজার। তবে, ৮০ শতাংশের কিডনি রোগী আর্থিক সংকটে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারছেন না। ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯০০ জন রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন। এ সংখ্যার ২৫ শতাংশ নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে পারেন। এ ছাড়া বাকি কিডনি রোগে আক্রান্ত ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ডায়ালাইসিস নিতে পারেন না। তার মানে নিশ্চিত মৃত্যু। বাংলাদেশে এত মানুষকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়াও সম্ভব না। সবাইকে এ সেবার আওতায় নিতে স্বাস্থ্যসেবায় আরও ৫ গুণ বেশি বাজেট প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বাবরুল আলম বলেন, প্রতি বছরই কিডনি রোগী বাড়ছে তার হাসপাতালে। তার হাসপাতালে এখন থেকে প্রতি শনিবার কমপক্ষে ২টি করে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার প্রতিশ্রুতি দেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে এ পর্যন্ত ৩৮টি কিডনি প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) হয়েছে। চলতি বছরে প্রতিস্থাপন হয়েছে সাতটি। কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান, এ হাসপাতাল সব পরীক্ষা না হওয়ায় খরচ কিছুটা বেড়ে যায়। তবে, সর্বমোট ১ লাখ টাকা নিয়ে এলে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব। এতে কিডনি প্রতিস্থাপনসহ ১৪ দিন পর্যন্ত সেবাটা দিতে পারে হাসপাতাল। অনেক ওষুধের সাপ্লাই না থাকায় কিছু টাকা খরচ বাড়ে। ১৪ দিন পর ওষুধের জন্য রোগীকে নতুন করে অর্থ খরচ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে ২ কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লোক কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার বাংলাদেশে। আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার আকস্মিক কিডনি বিকল হয়। এদের বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন হয়। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় শতকরা ১০ জন-এর ব্যয় সংকুলান করতে পারে বলে গোলটেবিল বৈঠকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, কিডনি রোগী দুর্যোগের সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আমরা জানি কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। সারা বিশ্বে ৮৫ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লোক কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার বাংলাদেশে। তিনি বলেন, কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন। ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে। কিডনি সংযোজনের রোগীদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে, ওষুধ নিয়মিত না খেলে সংযোজিত কিডনি বাতিল হয়ে যেতে পারে। আবার দুর্যোগের সময়ে আঘাত, রক্তক্ষরণ, দুর্যোগ পরবর্তী ডায়রিয়া ইনফেকশন এসব কারণে তীব্রমাত্রার আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। যার জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। অল্প মাত্রার দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে সম্পূর্ণ কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তখন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হবে। তাই কিডনি রোগী দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ডায়ালাইসিস পেতে বিলম্ব হলে সাময়িক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমন-পানি কম, মাছ-মাংস কম, পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন-ফল ও সবজি পরিহার করতে হবে।

https://mzamin.com/news.php?news=45882