৯ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৫

কোলাহলপূর্ণ সিদ্দিকবাজার মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপ

নিহত ২০ আহত শতাধিক : স্বজনদের আহাজারি

 চিরচেনা পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার অন্যতম কোলাহলপূর্ণ জায়গা। প্রতিদিনের মতো মার্কেটগুলোতে চলছিল ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের কেনা-বেচার ধুম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে যেন স্তব্ধ হলো সেই কোলাহল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো সাততলা বিশিষ্ট একটি মার্কেট। শুরু হয় লোকজনের ছোটাছুটি-প্রাণ বাঁচাতে আঁকুতি আর আহাজারি। ধ্বংসস্তূপ থেকে একে একে বের করে আনা হচ্ছিল হতাহতদের।

পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনের দুই পাশে আরো দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা জেলা প্রশাসন। দুর্ঘটনার প্রথম দিনেই ১৮ জন নিহত হয়। গতকাল বিকেলে ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণে ভবন ধসে আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসাধীন আহতের মধ্যে অনেকেই শঙ্কামুক্ত নন। হাসপাতালগুলোতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।

সাততলা ভবন বিস্ফোরণের পরপরই সেখানে উদ্ধার তৎপরতার জন্য ছুটে আসে ফায়ারসার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। ভিড় জমে ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়া হতাহতদের স্বজন ও বিপুলসংখ্যক উৎসুক মানুষের। এক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের।

ভবন ধসের পর মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলে। পরে গতকাল সকাল থেকে আবার নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। সেই উদ্ধার অভিযানের সময় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দু’জনের লাশ উদ্ধার হয়। তাদের একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি মমিনুদ্দিন সুমন।

ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক আকতারুজ্জামান বলেন, দু’জনের লাশ ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ দুটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

আকতারুজ্জামান আরো বলেন, র্যাব ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে লাশ দুটির সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ভবনের বেজমেন্টের একটা জায়গায় অনেক মাছি ছিল। সেখানে লাশ থাকতে পারে এমনটা ভেবে আমরা র্যাবের ডগ স্কোয়াড কাজে লাগাই। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।

ব্যস্ত সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ : মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা। ঘটনাস্থল ঘিরে শত শত মানুষ। বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত দুটি বহুতল ভবনের নিচের দিকটা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনের নিচতলার কলাপসিবল গেট বিচ্ছিন্ন হয়ে সড়কে পড়ে আছে। তার সঙ্গে রয়েছে বিধ্বস্ত একাধিক মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান। ভবনের কাচ, ইট, বালুসহ নানা কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল সড়কে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তখন নর্থ সাউথ সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল করছিল। সদরঘাট থেকে গুলিস্তানগামী এই রাস্তাটি ঢাকা মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। বিস্ফোরণের পর সড়কের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত অবস্থায় অনেক মানুষ পড়ে ছিলেন। তাদের অধিকাংশই তখন সড়ক দিয়ে চলাচল করছিলেন। তাদের কেউ বাসের যাত্রী ছিলেন, কেউ রিকশা-ভ্যানে চড়ে ছিলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন পথচারী। কেউ কেউ দোকানে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে।

ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে একটি ভাসমান চায়ের দোকানদার জানান, বিস্ফোরণের সময় তিনি দোকানে ছিলেন। তিনি মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থলের সামনের কিছু দৃশ্যের ভিডিও করেছেন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পর তার মনে হয়েছিল বোমা ফুটেছে। তিনি দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, বহু মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন। তাদের কেউ কেউ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। এসব মানুষকে রিকশা-ভ্যানে করে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় সড়কে যানজট ছিল না। সদর ঘাটের দিক থেকে গুলিস্তানগামী যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলছিল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই দুটি বাসের যাত্রী ছিলেন। তারা তখন শুধু বাঁচার জন্য সহায়তা চেয়ে আর্তনাদ করছিলেন।

বিস্ফোরণের পর থেকে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করছিলেন। তাদের সরাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে। সরিয়ে দেয়া হলেও তারা আবার ঘটনাস্থলের আশপাশে এসে ভিড় করছিলেন। তাদের কারণে আহত কাউকে উদ্ধার করার পর হাসপাতালে পাঠাতে বেগ পেতে হচ্ছিল।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিস্ফোরণে সাততলা ভবনের বেজমেন্ট, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বেজমেন্ট ছাড়া পুরো ভবনেই উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সাততলা ভবনটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার সামনের অংশ ভেঙে মূল সড়কে এসে পড়েছে। সাততলা ভবনটির উত্তর পাশে ১৮০ নম্বর ভবন। এ ভবন পাঁচতলা। ভবনের নিচতলার একটি দোকান পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ভবনেরও প্রতি তলার জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে। বিস্ফোরণ স্থলের ভবন লাগোয়া দক্ষিণ পাশের সাততলা আরও একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের নিচতলার সিঁড়ির অংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ দিকে উদ্ধার কাজের অংশ হিসেবে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা পানি অপসারণ কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ কাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, সাততলা ভবনটির পানির ট্যাংক ও সেপটিক ট্যাংক ফেটে ভবনটির বেজমেন্টে পানি জমে যায়।

বিস্ফোরণের সম্ভাব্য পাঁচ কারণ : সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেটে কীভাবে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটি এখনো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছে, ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। তবে ভবনের ধ্বংসস্তূপ, লোকজন হতাহতের ধরন দেখে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলটি মনে করছে, ভবনের বেজমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যেকোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ে গ্যাস জমতে পারে বলে মনে করছে তারা।

সেগুুলো হলো- ভবনের মাটির নিচে পানির ট্যাংক থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে, দুটি ভবনের মাঝখানে একটি সেপটিক ট্যাংক ছিল, সেখান থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে, বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস জমতে পারে বা দেয়ালে মিথেন গ্যাস জমে থাকতে পারে, পয়োনিষ্কাশন লাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস জমতে পারে এবং ভবনে থাকা বড় জেনারেটর থেকেও কোনোভাবে গ্যাস জমতে পারে।

সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, যেকোনো উপায়েই হোক ভবনের আবদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমেছিল। সেখানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা অন্য কোনো উপায়ে স্পার্ক থেকে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।

এ বিস্ফোরণ কোনো নাশকতা নয় বলেও প্রাথমিকভাবে মতামত দিয়েছেন রহমত উল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, কোনো বিস্ফোরক বা আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) সার্কিটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কোনো বিস্ফোরক ব্যবহার হলে ধোঁয়ার সময় কোনো রঙিন বা কালো ধোঁয়া হয়। কিন্তু সেখানে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের গায়ে আঘাতের ধরনও বলছে এটি গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হয়েছে। ধরন দেখে মনে হয়েছে, গ্যাসের স্তরটি তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় ছিল। এতে মনে হয়েছে এই বিস্ফোরণ মিথেন গ্যাস থেকে হয়েছে।

নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর : এ দিকে বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৭টি লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনদের আবেদনে পুলিশের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লাশ হস্তান্তরে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী হাফিজুল আমিন জানান, মঙ্গলবার রাত থেকেই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিহতের স্বজনদের আবেদনে পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত ১৭টি লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া অন্য লাশগুলো স্বজনরা আবেদন করলেই তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, এপর্যন্ত হাসপাতালে আমরা ১৭টি আবেদন পেয়েছি। আরো একটি লাশের হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি জানান, বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।

যাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে- মো: সুমন (২১), বাবা : মমিন হোসেন, বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায়। ইসহাক মৃধা (৩৫), বাবা মরহুম দুলাল মৃধা, বাড়ি বরিশাল জেলার কাজিরহাট থানার চর সন্তোষপুরে, মুনসুর হোসেন (৪০), বাবা মোশাররফ হোসেন, ঢাকার পশ্চিমপাড়া যাত্রাবাড়িতে বাসা। মো: ইসমাইল (৪২), বাবা-মরহুম মো: হোসেন আলী, বংশালের ৯৭ লুৎফর রহমান লেন, আলু বাজারে বাসা। আল আমিন (২৩), বাবা-বিল্লাল হোসেন, বাড়ি চাঁদপুরের মতলবের পশ্চিম লালপুর। রাহাত (১৮) বাবা-জাহাঙ্গীর আলম, বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ চুনকুটিয়া। মমিনুল ইসলাম (৩৮) ও তার স্ত্রী নদী বেগম (৩৬), ঢাকার ইসলামবাগে বাসা। মাঈন উদ্দিন (৫০), বাবা-মরহুম: ছমির উদ্দিন আকন, বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর। নাজমুল হোসেন (২৫), পিতা-ইউনুছ হোসেন, বংশাল এলাকায় বাসা। ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), বাবা-মরহুম: শেখ সাহেব আলী, ঠিকানা-চর বেউথা গ্রাম, মানিকগঞ্জ সদর। আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), বাবা -মরহুম: মোজাম্মেল হক, ঠিকানা-জেলা মুন্সিগঞ্জ, থানা গজারিয়া, গ্রাম-বালুয়া কান্দি। আকুতি বেগম (৭০) স্বামী-মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম, বংশালে বাসা। মো: ইদ্রিস মির (৬০), বাবা-মরহুম কালাচান মির, মীর হাজারীবাগ যাত্রাবাড়ী। নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (৫৫), বাবা-মরহুম আলি মোহাম্মদ ভূঁইয়া, মাতুয়াইল , যাত্রাবাড়ী। এ ছাড়া গতকাল উদ্ধার হওয়া দু’জনের নাম-মো: মোমিনুল ইসলাম (সুমন) ও মোহাম্মদ রবিন হোসেন শান্ত (১৯)।

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন কেউই শঙ্কামুক্ত নন : বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা: সামন্ত লাল সেন গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ১১ জন রোগী ছিল, তার মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ট্রান্সফার করা হয়েছে, তার শরীরে কোনো দগ্ধ নেই। এখন ১০ জন আছে তার মধ্যে তিনজন আইসিইউতে, দু’জন লাইফ সাপোর্টে। অন্যরা আছেন এইচডিইউতে। তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। কারো শরীরের ৮০ শতাংশ, কারো ৯০ শতাংশ, কারো ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আমরা কাউকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারব না। আমাদের মতো আমরা তাদেরকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে তাদের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন : বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল দুর্ঘটনার পরদিন এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। ফায়ার সার্ভিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির বাকি তিন সদস্যের নাম পরে জানানো হবে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে কাজ পরিচালনার জন্য।

বিস্ফোরণ গ্যাস লিকেজ থেকে হয়নি : তিতাস গ্যাস
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের সাথে গ্যাস লিকেজের কোনো সম্পর্ক নেই।গতকাল বুধবার বিকেলে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনের পর তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) সেলিম মিয়া সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুসন্ধানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে বিস্ফোরণের সাথে গ্যাস লিকেজের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে গ্যাসের কোনো উপস্থিতি খুঁজে পায়নি তিতাস দল। তিনি বলেন, দলটি পুরো এলাকা পরীক্ষা করে দেখেছে, কিন্তু কোনো প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিল্ডিংটিতে একটি গ্যাস-রাইজার ছিল, কিন্তু সেটি অক্ষত ছিল। দ্বিতীয়ত, যদি কোনো গ্যাস লিকেজ হতো তাহলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত।’ এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার সিদ্দিক বাজারে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কাছে একটি পাঁচতলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/732936