১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ১০:১৭

চামড়া শিল্প ধ্বংসে চলছে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত

# ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সাভারে পূর্ণাঙ্গ শিল্পের রূপ পেতে আরও ৩ বছর সময় লাগবে

চামড়া শিল্প ধ্বংসে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। দেশে এখন চামড়া শিল্পে দুর্যোগ চলছে। আর এটি হয়েছে এ দেশের কিছু পরিবেশবাদীর কারণে। আর তাদের ব্যবহার করছে কোনো তৃতীয় শক্তি। এরা মিলে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার হাজারীবাগের ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আয়োজিত ট্যানারি শ্রমিকদের পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে এসব কথা বলা হয়। ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় শাহীন আহমেদ বলেন, দেশে এখন চামড়া শিল্পের ইতিহাসে দুর্যোগ চলছে। আর এটি হয়েছে এ দেশের কিছু পরিবেশবাদীর কারণে। আর তাদের ব্যবহার করছে কোনো তৃতীয় শক্তি। এরা মিলে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন,আমাদের এখান থেকে সরালে নাকি বুড়িগঙ্গা নদী ঠিক হয়ে যাবে। কই বুড়িগঙ্গা নদী কি ঠিক হয়ে গেছে? এখনো তো বুড়িগঙ্গা নদীতে নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তা কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? আসলে আমাদের এখান থেকে সরানোই ছিল মূল লক্ষ্য।
শাহীন আহমেদ বলেন, আমাদের সাভারের বিসিক নগরীতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে এখন পর্যন্ত যে সুযোগ-সুবিধা আমাদের ও শ্রমিকদের দেওয়ার কথা আমরা জানিয়েছিলাম, তা আমাদের দেওয়া হয়নি। ওখানে শ্রমিকের জন্য বাসস্থানের, মেডিক্যাল সুবিধা ও শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাহলে শ্রমিকরা থাকবে কোথায়? আর অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিবে কোথায়? তারা মনে হয় ভুলে গেছে যে, কোটি কোটি টাকার মেশিন কিনলেই হয় না, তা চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়া।
আমরা বিসিকের বিরুদ্ধে মামলা করব। কারণ তারা আদালতকে মিথ্যা বুঝিয়ে আমাদের এখান থেকে অপসারণ করেছে। আর শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল আমরা তাদের প্রত্যয়নপত্র দেব। যে সকল ট্যানারি মালিকরা এখন পর্যন্ত এ প্রতয়নপত্র তাদের শ্রমিকদের দেননি, তারা অতি শিগগিরই এটি দিয়ে দেবেন। আর যারা এটি করবেন না আমি মনে করি তারা ট্যানারি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যুক্ত।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, ট্যানারিগুলোতে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন কাজ করছে । কিন্তু কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। তাই মালিক-শ্রমিকদের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তির আওতায় শ্রমিকদের চাকরির প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার কথা। ২০১৬ সালে এ চুক্তি হয়েছে। এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন অনেক মালিক প্রত্যয়নপত্র দিতে চাচ্ছেন না। সব ট্যানারি শ্রমিকদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার দাবি জানান তারা। তা না হলে ট্যানারি ঘেরাও করা হবে।
তারা বলেন, ট্যানারি শিল্প আজ দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার। মালিক-শ্রমিক যৌথভাবে এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে কিছু মালিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
এসময় শ্রমিক নেতারা সাভারে চামড়াশিল্প নগরীতে শ্রমিকদের বাসস্থান, ৫০০ শয্যা হাসপাতালসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৫ দিনের মধ্যে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ অবকাঠামো নিশ্চয়তার দাবি করেন। এসব দাবি পূরণ না হলে শিল্পমন্ত্রণালয়, বিসিক ও পরিবেশ অধিদপ্তর ঘেরাও করা হবে হুঁশিয়ার দেয় ট্যানারির শ্রমিকরা।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের জাহাজ ডুবে গেছে। আমরা এখন বাঁচার জন্য ছোট নৌকাতে করে সাগরে ভাসছি। তাই আমাদের বাঁচার জন্য সকলে (ট্যানারি মালিক-শ্রমিক) মিলে এক সঙ্গে নৌকার বৈঠা বেয়ে একটি লক্ষ্য ঠিক করে তীরের দিকে যেতে হবে। সামনে আরো বড় ঝড় আসতে পারে। তাই আমরা আমাদের লক্ষ্য ভিন্ন রাখলে সামনে এগিয়ে যেতে পারব না।
ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সমস্যা আমাদের সকলের রয়েছে। তাই আমি ট্যানারি মালিকদের বলব, অন্যায় ও অযৌক্তিক কোনো আচরণ শ্রমিকদের সঙ্গে করবেন না। আপনারা (শ্রমিকরা) প্রত্যয়নপত্র চেয়েছেন এবং এটি আপনাদের চুক্তিতেও রয়েছে, অবশ্যই আপনাদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে এবং আপনাদের বাদ দিয়ে আমরা সাভারের শিল্প নগরীতে যাব না। আপনাদের চাকরি হারানোর কোনো ভয় নেই।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,চামড়া শিল্প ধ্বংসের অংশ হিসেবেই সাভারে স্থনান্তর করা হয়েছে। সাভারে এখনও যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে পূর্ণাঙ্গ শিল্পের রূপ পেতে আরও কম পক্ষে তিন বছর সময় লাগবে। এসময়ের মধ্যে চামড়া শিল্পের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। বুড়ি গঙ্গাকে বাচাতে নয় মূলত চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠি পরিবেশবাদীদের ব্যবহার করেছে। সরকার যদি এখানেই বর্জ্য শোধনাগার করতো তাহলে এ শিল্পও বাঁচতো নদীও বাঁচতো। কিন্তু সরকার তা না করে বিসিকের কথা মতো এ শিল্প সাভারে স্থনান্তর করলো। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আজ কয়েক লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই শতাধিক ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে যে ক্ষতি ট্যানারি শিল্পের হয়েছে তা কোন দিনই পূরণ হবে না। তবে সরকার যত আগে সাভারে গ্যাস বিদ্যুৎ পানির সংযোগ দিতে পারবে ততই ক্ষতি কম হবে। তানা হলে এ শিল্পের পাট শিল্পের মত ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিবে।

http://www.dailysangram.com/post/280312-