চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে
১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ১০:১৬

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ আহত ২০

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামের মাঠে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুইমিংপুল নির্মাণের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে বাধা এবং লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর এবং সড়ক অবরোধ করেছে। এ সময় পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধওয়া সংঘর্ষে গুলীবিদ্ধ হয়ে ৫ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ ছাত্রলীগ নেতা কর্মী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সুইমিং পুল প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে এবং কয়েকশ যুবক ব্যারিকেড ভেঙে নির্মাণ এলাকার টিনের বেড়া ভাংচুর শুরু করে। তাদের সরাতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে সংঘর্ষ বাঁধে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের শটগান থেকে গুলী ছুঁড়তে দেখা যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। কাজীর দেউড়ি এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশী হামলার প্রতিবাদের কাজীর দেউড়ির চতুর্দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এলাকায় বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। পরে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এলে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ওই সড়কে আবার যান চলাচল শুরু হয়। নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আউটার স্টেডিয়ামে নির্মাণাধীন সুইমিংপুল কমপ্লেক্সে প্রতিবাদে সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তা বিঘœ ঘটার আশঙ্কায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করেছে।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, আউটার স্টেডিয়ামের ঐতিহ্যবাহী মাঠ দখলে নিয়ে মেয়র নাছির বিনা টেন্ডারে সিডিএর অনুমতি না নিয়ে এবং ইমারত নির্মাণ আইন উপেক্ষা করে সুইমিং কমপ্লেক্সের নামে ব্যবসায়িক কেন্দ্র তৈরি করছে। ছাত্রলীগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। বিকেলে ছাত্রলীগ মাঠে অবস্থান করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ আমার নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে ১৫ জনকে আহত করেছে। আমরা নগর ছাত্রলীগ স্পস্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ দখল করে কোনোভাবেই স্থাপনা নির্মাণ করতে দেবো না।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। জসিম উদ্দিন বুকে ইটের আঘাত পেয়েছেন। অন্যদের মধ্যে একজন মাথায় ও আরেকজনের হাত ফেটে গেছে। বাকিরা ছোটোখাটো আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে সুইমিং পুল নির্মাণ হচ্ছে। এটা নিয়ে একটা বিতর্ক ছিল। পৌনে চারটার দিকে ছাত্রলীগের ইমু ও রনির নেতৃত্বে ৪০০-৫০০ লোক বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য আসে। সুইমিং পুলের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় আমরা তাদের তাৎক্ষণিকভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিই। কিন্তু একটা পর্যায়ে তারা ভেতরে প্রবেশ করে সরকারি কাজ নস্যাৎ করার চেষ্টা করে। সরকারি দলের একটি অংশ এটি করেছে। পরে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এই ঘটনায় মামলা হবে, এর সঙ্গে জড়িতরা এবং ইন্ধনদাতারাও গ্রেফতার হবেন। পুলিশের চার-পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এই ছাত্রলীগের দায় কে নেবে আমরা জানি না। আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা ইতিমধ্যে একজনকে আটক করেছি।
এদিকে এই সংঘাতের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি। তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তার উপর কর্মসূচি পালন করে জনদুর্ভোগ চাইনি। তাই বার বার মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলাম সুইমিং পুল নির্মাণ এলাকায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে। কিন্তু পুলিশ আমাদের দাবি না মানায় এই সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমাদের তিন নেতা গুলীবিদ্ধসহ মোট ১৫ জন আহত হয়েছেন। এই সংঘাতের দায় পুলিশকেই নিতে হবে।
এদিকে আউটার স্টেডিয়ামে পুলিশ ছাএলীগ সংঘর্ষের ঘটনার পর বিকেলে ছাত্রলীগের উত্তেজিত নেতাকর্মীদের একাংশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ, যানবাহন ভাংগচুর চালায়। এ সময় লালখান বাজার ওয়াসা এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এছাড়া কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সড়ক অবরোধ এবং গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
পুুলিশ জানায়, ওয়াসার মোড়ে ছাত্রলীগের এক গ্রুপের উপর হামলা হয়েছে। এরপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা হয়েছে। তবে আমাদের সামনে কোন গাড়ি ভাংচুর করতে দেখিনি। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। যানবাহন চলাচলে কোন সমস্যা হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, লালখান বাজারের ভেতর থেকে কয়েক রাউ- গুলীর শব্দ শোনা যায়। এরপর হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। দা, কিরিচসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই গ্রুপ মারামারি শুরু করে। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ওয়াসার মোড় থেকে সরিয়ে দেয়। নগর ছাত্রলীগের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, ওয়াসার মোড় দিয়ে যাবার সময় শরীফ নামে তাদের এক কর্মীকে কয়েকজন মিলে জোর করে ধরে লালখান বাজারের ভেতরে নিয়ে যায়। তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। শরীফকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ধাওয়া খেয়ে জিইসি মোড়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এসময় অন্তত ৪-৫টি যানবাহন তারা ঢিল ছুঁড়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে। লোহার রড, কিরিচ নিয়ে তারা গাড়ি ভাংচুর করেছে। এ সময় আতংকে কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় ।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গাড়ি ভাংচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। তারা জিইসি মোড়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এক গ্রুপ ষোলশহরের দিকে এবং আরেক গ্রুপ গোলপাহাড়ের দিকে চলে যায়।
ষোলশহরের দিকে যাবার পথে হোটেল লর্ডস ইনের সামনে আবারও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পুলিশও তাদের ধাওয়া দিয়ে সিএ-বি কলোনির গলিতে ঢুকিয়ে দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এদিকে নগরীর বহদ্দারহাটে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের গাড়ী ভাংচুর
জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরের সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজ শাখার ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার একদিন পর বিলুপ্ত করার প্রতিবাদে ঝটিকা মিছিল করে গাড়ী ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কলেজ শাখার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জানায়, দীর্ঘ দুই বছর পর গত ১৬ এপ্রিল সরকারী আশেক মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নিহাদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ বিন জালালের স্বাক্ষরে কমিটিতে খাবিরুল ইসলাম খান বাবুকে সভাপতি ও জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্ত কমিটি অনুমোদনের একদিন পর ১৭ এপ্রিল দুপরে ওই কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
বিলুপ্ত ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জামালপুর জেলা শাখার পরামর্শক্রমে ছাত্রলীগের সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজ শাখার কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। এখবর কলেজ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা শহরের ফৌজদারী মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বকুলতলা এলাকায় একটি ট্রাক, রাজীব বাস, কয়েকটি পিকআপ ভ্যানসহ ৮-১০টি গাড়ী ভাংচুর করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

http://www.dailysangram.com/post/280313-