১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ১০:১৩

যশোরে চালের দাম আকাশছোঁয়া নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

চালের বাজার আকাশচুম্বি। অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে এবার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে চালের দাম। এর মধ্যেই সরকার সংগ্রহ নীতিমালা ঘোষণা করেছে। নীতিমালায় যে মূল্য ধার্য করা হয়েছে, বাজারে মূল্য তার চেয়ে বেশি। ফলে, এ বছর ধান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ধান, চাল সংগ্রহের নীতিমালা ঘোষণা করেন। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিকেজি ধান ২৪ টাকা এবং প্রতিকেজি চাল ৩৪ টাকা হিসেবে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনা হবে। আগামী ২ মে থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। গত বছর সরকারি সংগ্রহ মূল্য ছিল যথাক্রমে ২৩ টাকা ও ৩২ টাকা। এ বছরের বাজার মূল্যের তুলনায় সরকারের ধার্যমূল্য অনেক কম। ফলে, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তার সফলতা অর্জনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ী ও মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর চালের মূল্য বৃদ্ধিতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। খুচরা দোকানে ৩৬ টাকা কেজি দরের নিচে কোন চাল বিক্রি হচ্ছে না। তাও খাবার অনুপযোগী মোটা চাল। মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে এর দাম সামান্য কম।
যশোরের প্রধান চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সোনালী স্টোরে গতকাল প্রতিকেজি চালের পাইকারি মূল্য ছিল স্বর্ণা (মোটা) ৩৪ টাকা ৮০ পয়সা, মিনিকেট ৪২ টাকা ৮০ পয়সা, কাজললতা ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা ও বিআর ২৮ ৪১ টাকা ৮০ পয়সা। বড় বাজারের বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বদরুল আলম জানান, বাজারে নতুন চাল এসেছে। তবে দামের ওপর তার কোন প্রভাব পড়েনি। গতকাল মানভেদে চালের পাইকারি মূল্য ছিল বিআর ২৮ নতুন ৪১ থেকে ৪২ টাকা, পুরনো ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, মিনিকেট নতুন ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, পুরনো ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা। ব্যবসায়ীদের মতে, চালের এ মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। একজন নিম্নআয়ের ম্নাুষকে প্রতিকেজি চাল ৪৫/৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চালের বাজারে এমন আকাশছোঁয়া অবস্থা নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। চলের এমন অস্বাভাবিক মূল্যের কারণ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন, আপাতত চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে এবং দেশীয় চালের সরবরাহও কমে গেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে এবং নতুন চাল বাজারে আসবে। তখন চালের দাম কিছুটা কমবে। অবশ্য, মনিরামপুরের দিঘিরপাড় বাজারের আড়তদার সোহান জানান, চালের দাম আকাশচুম্বি হলে কৃষক কখনোই ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না। নতুন ধান উঠলে তাদের বরাবরের মতো কম দামে বিক্রি করতে হবে। তারপরও চালের বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
এদিকে, সরকারি ক্রয় মূল্যের তুলনায় বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে ব্যবসায়ীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান, চাল সরবরাহ করতে নানা জটিলতা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। দামও কম। এ কারণে কৃষক যেখানে সহজেও বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে, সেখানে ধান, চাল সরবরাহ করবে।

http://www.dailysangram.com/post/280393-