১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ১০:০০

মগবাজার ফ্লাইওভারের অসীম ক্ষুধা

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের পেট কত বড়? কারণ বছর ঘুরতেই এর ব্যয় বেড়ে কয়েক গুণ হয়ে যাচ্ছে। এর ক্ষুধার যেন শেষ নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে অতিরিক্ত খরচের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে গেলে হুলস্থ্থূল পড়ে যাচ্ছে। তা অনুমোদনের জন্য অনেকটা তোড়জোড় চলছে। প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর জন্য এলজিইডি থেকে এক গুচ্ছ কারণ দেখানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লাইওভারের অর্থ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিশোধ করা হয়। এমনিতেই ঋণ ও করের বোঝায় জনজীবন অতিষ্ঠ। এভাবে ব্যয়বৃদ্ধি মূলত অপচয়ের শামিল। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে এসে বলা হয়, বাংলাদেশে সব ধরনের মোটরযান ডান হাতে চালিত। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন অবকাঠামো। নকশাও প্রণয়ন করা হয় সে আদলেই। তবে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটির নকশা করা হয়েছে বাম হাতে চালিত গাড়ির কথা মাথায় রেখে। নকশা সংশোধনের যুক্তিতে সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১,২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রথম দফায় ৪৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা প্রায় ৫৮ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশা প্রণয়ন করে। সে নকশার ভিত্তিতেই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নকশা ক্রটির এটিই মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মোটরযানের সম্পূর্ণটাই বাম হাতে চালিত। তাই ওই দেশের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়ায় মূলত নকশায় ক্রটি দেখা দেয়। আর এলজিইডি গ্রামগঞ্জে সড়ক নির্মাণ করে। শহরে ফ্লাইওভার নির্মাণের কোনো ধরনেরই অভিজ্ঞতা তাদের নেই। ফলে নকশা প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্টরা ক্রটি চিহ্নিতই করতে পারেননি। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দুটি অংশের জন্য মোট ২৭১ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর আলাদা দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ২০১৩ সালের ৬ই অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অংশের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। যৌথভাবে এ কাজটি করছে এমসিসি ও তমা কনস্ট্রাকশন্স। সব মিলিয়ে ওই পর্যন্ত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ব্যয় দাঁড়ায় ১,৪৮৯ কোটি টাকা। এদিকে গত রোববার সর্বশেষ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মগবাজার ফ্লাইওভারের জন্য ১০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মূল চুক্তিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুযায়ী ভ্যাট-ট্যাক্সসহ এর মোট নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪৫২ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ব্যয় বেড়েছে ১০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের এখন পর্যন্ত ১,৫৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ শুরুতে প্রাক্কলনের দ্বিগুন অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এখন জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই নানা ধরনের কথাবার্তা চলছে। কয়েক দিন আগে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত বছর ধরে জনভোগান্তি চলছে। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা বর্ণনাতীত। এর আগে ২০১১ সালে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হওয়ায় বাড়ানো হচ্ছে বাস্তবায়নকাল, প্রকল্প সংশোধন প্রস্তাবে যা ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজের এ ধীরগতির কারণে কবে নাগাদ এ প্রকল্প শেষ হবে তা কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। দফায় দফায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাজমুল আলম বলেন, প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন অঙ্গ যোগ হওয়ার পাশাপাশি পরিধিও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যে কারণে ব্যয় বেড়েছে।

 

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=62091&cat=2/