১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৫৬

লাভ হয় তবুও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি

সমন্বয়ের খোঁড়া অজুহাত : জনদুর্ভোগ, সুযোগ নিচ্ছে এলপিজি ব্যবসায়ীরা

শুধুমাত্র সমন্বয়ের খোঁড়া অজুহাত এনে আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাবে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। আর এই সমন্বয়ের কথা বলা হচ্ছে-পাইপলাইনের গ্যাসের সাথে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) দামের। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, এসব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এলপিজি ব্যবসায়ীদের আরও অধিক লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে-আবাসিক খাতের গ্যাস থেকে পেট্রোবাংলার লাভ সবচেয়ে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় সরকার আবাসিক খাতের গ্যাসের দাম না বাড়ালেও পারত।
পেট্রোবাংলা তথ্যানুযায়ী, অন্যান্য খাতের তুলনায় আবাসিক খাতে গ্যাসের ব্যবহার হয় সবচেয়ে কম। জ্বালানি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্যাস বিক্রি থেকে বছরে মোট আয়ের প্রায় অর্ধেকই আসে আবাসিক খাত থেকে। অথচ মোট গ্যাসের মাত্র ১২ ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক খাতে। আরও জানা যায়, বিভিন্ন খাতে মোট ব্যবহৃত গ্যাসের ৭৮ ভাগ বিক্রি করে যে আয় হয়, আবাসিত খাতের মাত্র ১২ ভাগ বিক্রি করে প্রায় সমপরিমাণ আয় করে পেট্রোবাংলা।
স¤প্রতি যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে সেখানেও আবাসিক খাতে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম নির্ধারণের পর গ্যাস বিক্রির আয় পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গ্যাস বিক্রি থেকে বছরে চার হাজার ১৮৫ কোটি টাকা আয় বাড়বে। এর মধ্যে আবাসিক খাত থেকেই আসবে এক হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর বাকি দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা আসবে ৮৬ ভাগ বিক্রি করা গ্যাস থেকে।
বর্তমানে গ্যাস বিক্রি থেকে বছরে মোট আয় হয় ১৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবাসিক খাত থেকে আয় হয় পাঁচ হাজার ৬৯৯ হাজার কোটি টাকা। নতুন দাম বাড়ানোর পরে বছরে গ্যাস বিক্রি থেকে আয় হবে ২২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবাসিক খাত থেকে আয় হবে সাত হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ খাতে। যা মোট গ্যাসের ৪৩ ভাগ। বিদ্যুতে গ্যাস বিক্রি থেকে বছরে আয় বাড়বে ৪২৫ কোটি টাকা। বর্তমানে বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বিক্রি করে পাওয়া যায় তিন হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। দাম বাড়ার পরে এই আয় দাঁড়াবে তিন হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। বিদ্যুতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ১২ শতাংশ। আর সার উৎপাদনে গ্যাস বিক্রি থেকে আয় বাড়বে ১৯ কোটি টাকা। সারের গ্যাসের দাম সবচেয়ে কম বাড়ানো হয়েছে। এজন্য এ খাত থেকে আয়ও কম। সারে দুই ধাপে দাম বেড়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ।
সিএনজি থেকে বছরে আয় তিন হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। দাম বাড়ানোর কারণে এ আয় বাড়বে ৬৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আয় হবে চার হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। মোট গ্যাসের প্রায় পাঁচ ভাগ ব্যবহার হয় সিএনজিতে।
শিল্পের গ্যাস থেকে বছরে আয় ছিল দুই হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন আয় বাড়বে ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এখন থেকে শিল্পে দেয়া গ্যাস থেকে বছরে আয় হবে তিন হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। মোট ব্যবহার করা গ্যাসের ১৫ ভাগ শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপটিভ বিদ্যুতে মোট গ্যাসের ১৬ ভাগ ব্যবহার হয়ে থাকে। ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাস দিয়ে বছরে আয় তিন হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। দাম বাড়ানোর পরে আয় বাড়বে ৫৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আয় হবে চার হাজার ৪২১ কোটি টাকা। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকে অনুৎসাহিত করতে এর দাম তুলনামূলক বেশি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। ক্যাপটিভে দেয়া গ্যাসের দাম ১৫ ভাগ বাড়ানো হয়েছে।
বাণিজ্যিক খাতে মাত্র এক ভাগ গ্যাস ব্যবহার হয়। এ খাতে বছরে গ্যাস বিক্রি হয় ৩০৬ কোটি টাকার। দাম বাড়ানোর পরে বাড়বে ১৫৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ৪৫৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, মোট গ্যাসের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে বাসাবাড়িতে। অথচ তাদের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ফলে এই খাত থেকেই সরকার সবচেয়ে বেশি আয় করবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে গ্যাস কম ব্যবহার করে বেশি টাকা দিতে গিয়ে সব দিক থেকে অর্থনৈতিক বোঝার নিচে পড়বে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ লাভ করছে তাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোরই দরকার ছিল না। তার ওপর আবাসিকে দাম বাড়িয়ে এলএনজির জন্য তহবিল গঠন করতে গিয়ে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন এক ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিইআরসি’র সদস্য আজিজ খান বলেন, বিশ্বের কোনো দেশেই আবাসিকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এত কম দামে গ্যাস সরবরাহ করা হয় না। একদিকে পাইপ লাইনের গ্যাস অন্যদিকে এলপিজি। দামের পার্থক্য অনেক। এই দাম সমন্বয় জরুরি ছিল।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/75560/#sthash.Hx8iVIi5.dpuf