১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৫২

পরিবহন সংকট কাটেনি

ভাড়া-সন্ত্রাস চলছেই

দেড় যুগ ধরে চালু থাকা বাসের সিটিং সার্ভিস হঠাৎ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ায় রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সিটিং সার্ভিসবিরোধী অভিযানের তৃতীয় দিনেও তীব্র বাস সংকটে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কর্মঘণ্টা অপচয় ছাড়াও বাড়তি ভাড়ায় অন্য ছোট বাহনে চড়তে হয়েছে অনেককে। আবার অভিযান সত্ত্বেও গণপরিবহনে ভাড়া-সন্ত্রাস চলছেই। পরিবহন মালিকরা রাজধানীতে যাত্রীদের শায়েস্তা করতে বাসে বাসে মাস্তানও নামিয়েছেন এরই মধ্যে। বেশ কিছু পরিবহনের বাস লোকাল হিসেবে চালানো হলেও ভাড়া আদায় করা হয় সিটিং সার্ভিসের মতোই। যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলে কিংবা
পরিবহনকর্মীদের দাবিমতো ভাড়া দিতে রাজি না হলে তাদের মারধরও করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল পরিবহন খাতের পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে এ নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক হবে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধ করতে অভিযান চালানো হচ্ছে সেই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মালিক সমিতির দুই-তিনজনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি তাদের বলেছি বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। ’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ নানা অজুহাতে যদি গাড়ি না চালায় আমরা কি আমাদের দেশের বাস্তবতায় জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সঙ্গে যারা জড়িত তারা খুব সামান্য মানুষ না, তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী। ’
ওবায়দুল কাদের জানান, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও সেখানে ডাকা হবে।
পরিবহনকর্মীদের দাবিমতো ভাড়া দিতে রাজি না হলে তাদের মারধরও করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল পরিবহন খাতের পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে এ নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক হবে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধ করতে অভিযান চালানো হচ্ছে সেই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মালিক সমিতির দুই-তিনজনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি তাদের বলেছি বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। ’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ নানা অজুহাতে যদি গাড়ি না চালায় আমরা কি আমাদের দেশের বাস্তবতায় জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সঙ্গে যারা জড়িত তারা খুব সামান্য মানুষ না, তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী। ’
ওবায়দুল কাদের জানান, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও সেখানে ডাকা হবে।
জানা গেছে, সকালে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানকেও বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে দলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার মধ্যেও ওবায়দুল কাদের সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় গণপরিবহনে হঠাৎ সৃষ্ট বিপর্যয় তাঁর নির্দেশনায় নিরসন হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে যাত্রীরা। গতকাল বিকেলে কালশী সড়কে বাস না পেয়ে পৌনে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর যাত্রী হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি। ’
সিটিং সার্ভিসের যেসব বাস লোকাল হয়ে চলছে সেগুলোতে গতকালও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। মিরপুর-১০ থেকে কুড়িল পর্যন্ত আগে ২৫ টাকা আদায় করা হতো জাবালে নূর পরিবহনের বিভিন্ন বাসে। গতকালও এ দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে বাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। জাবালে নূর পরিবহনের ৬৩টি বাসের মধ্যে গতকাল রাস্তায় নামে ১৫টি। একজন চালক বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝতে পারছি না কত আদায় করব!’
স্বাধীন এক্সপ্রেস, হিমাচল পরিবহন, শিকড় পরিবহন, কোমল মিনিবাস সার্ভিস, মেঘলা ট্রান্সপোর্ট লি., বেকার মিনিবাস সার্ভিস, শ্রাবণ ট্রান্সপোর্ট কম্পানি, শ্রাবণ সুপার, গুলিস্তান-আদমজী ট্রান্সপোর্ট কম্পানি, ভূইয়া পরিবহন, দিশারী পরিবহন, নূরে মক্কা, অনাবিল, সুপার, অসীম, পরিস্থান, অগ্রযাত্রা, রবরব, গ্যালাক্সি, তেঁতুলিয়া পরিবহনের বেশির ভাগ বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। শতাব্দী, আল মক্কা, মনজিল, মালঞ্চ, বসুমতি, গাজীপুর পরিবহন, রাইদা, সময় নিয়ন্ত্রণসহ বহু বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা আদায় করা হয়েছে। সুপ্রভাত, শুভেচ্ছা, ওয়েলকাম, তানজিল, গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন লি., মেশকাত, ৭ নম্বর রুটের মিনিবাসেও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে মাসুল দিচ্ছে যাত্রীরা। কয়েকটি রুটে সিটিং থেকে লোকাল সার্ভিসে পরিণত হওয়া কিছু বাসে গতকাল সরকারি হারে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশ আওয়ারে যে পরিমাণ গাড়ি থাকে সে তুলনায় কম, তবে গাড়ি আছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি, জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি একটু সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করা উচিত। পত্রপত্রিকার লেখালেখিও আমার চোখে পড়েছে। ’
সরকারি অভিযানের মধ্যেই মিরপুর রুটে বেশির ভাগ বাসে মাস্তান প্রকৃতির লোক রেখে যাত্রী শায়েস্তা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে যাত্রীদের অপদস্থ করা হচ্ছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত দুই দিনে নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহনের প্রায় ৪০ শতাংশ রাস্তায় নামানো হয়নি। বাসে চলতে গিয়ে নারী, শিশু ও বয়স্ক নাগরিকরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে। বাসে সরকারি ভাড়ার তালিকা দেখতে চাওয়ায় বা তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাওয়ায় অনেক যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার এমনকি হাত তোলার মতো ঘটনা ঘটছে। কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে তেড়ে এসে নানাভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে। মিরপুর রুটে অধিকাংশ বাসে মাস্তান প্রকৃতির তিন-চারজন করে লোক রাখার দৃশ্য দেখা গেছে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে ‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এতে যেসব বাস জড়িত, তাদের রুট পারমিট বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একদিকে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। নগরীতে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর পাঁচটি স্থানে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে ১৪০টি মামলা করা হয় এবং জরিমানা করা হয় চার লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
রুট পারমিট বাতিল করতে বাসের তালিকা হচ্ছে : সিটিং সার্ভিস পরিচালনাকারী বিভিন্ন পরিবহন কম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ওই সব কম্পানির প্রায় ৫০ শতাংশ বাস গতকাল রাস্তায় নামানো হয়নি। এর আগে কোথাও বন্ধ ছিল ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ সিটিং বাস। এ অবস্থায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ রাস্তায় না নামা বাসের তালিকা তৈরি করছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জানিয়েছেন, যাত্রী পরিবহনের জন্য অনুমোদিত বাস রাস্তায় না নামায় রুট পারমিট বাতিল করা হবে এগুলোর।
সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরেই রয়েছে এই বাসসেবা। নতুন বাস নামিয়ে সিটিং সার্ভিস বা অন্যান্য বিশেষ নাম গায়ে লিখে নিজেদের মর্জিমাফিক ভাড়ার হার নির্ধারণ করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ১০ কিলোমিটার ভ্রমণ করলেও যে ভাড়া নেওয়া হয়, এক কিলোমিটারের জন্যও একই ভাড়া আদায় করা হয়। এ অবস্থায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি মূল উদ্যোগী হয়ে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে ওই সব বাস লোকাল হিসেবে চালানোর ঘোষণা দেয়। গত ৪ এপ্রিল সংগঠনের ঘোষণার পর শেষ পর্যায়ে বিআরটিএতে সভা হয়। সভার পর দিন রবিবার থেকে শুরু হয় সিটিং সার্ভিসবিরোধী অভিযান। তবে অভিযান শুরুর পর পরিবহন মালিক ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেই অভিযোগ উঠেছে, কিছু পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতার স্বার্থরক্ষার জন্য সরকারকে এড়িয়ে জনস্বার্থের নামে সিটিং সার্ভিসবিরোধী উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে জনস্বার্থের জন্য ওই উদ্যোগ মনে হলেও বাস্তবে এর মধ্য দিয়ে সরকারের সামনে দাবির ঝাঁপি নিয়ে বসবেন পরিবহন খাতের শীর্ষ নেতারা।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/19/488329