১৯ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৪৮

আচমকা ঘোষণা বিলাতে নির্বাচন ৮ই জুন

ফের নাটকীয়তা বৃটিশ রাজনীতিতে। আচমকাই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। বললেন, দেশ একতাবদ্ধ কিন্তু দ্বিধা-বিভক্ত ওয়েস্টমিনস্টার। ব্রেক্সিটের পর দেশে স্থিতিশীলতার জন্যই জাতীয় স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন একটি জাতীয় নির্বাচন। আর সেটা এখনই প্রয়োজন। নির্বাচন ৮ই জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেন মে। আজ নির্বাচনসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে কমন্সে। বিরোধী দল লেবার পার্টি আগাম নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সমালোচনা করেছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি এসএনপি। ব্রেক্সিট সামলানো যখন সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ তখন বিরোধী দলগুলোকে জনগণের ম্যান্ডেট অর্জনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তেরেসা মে। এ খবর দিয়েছে গার্ডিয়ান, বিবিসি ও স্কাই নিউজ।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠক শেষে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মে। তিনি বলেন, বৈঠকে আমরা সম্মত হয়েছি যে সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচন ডাকা যেটা ৮ই জুন অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন থেকে আগাম নির্বাচন নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি বরাবরই বলে আসছিল ২০২০ সালের আগে আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। গতকালের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ধোয়াশা স্পষ্ট করলো মে নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ সরকার। সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে মে বলেন, ‘গত বছর ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দেয় বৃটিশ জনগণ। এরপর বৃটেনের প্রয়োজন ছিল নিশ্চয়তা, স্থিতিশীলতা আর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। আর আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সরকার ঠিক সেটাই নিশ্চিত করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গণভোটের ফল আমাদেরকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছিল আমরা সে দায়িত্বও ঠিকভাবে পালন করেছি। বৃটেন ইইউ ছাড়ছে আর পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।’ তেরেসা মে বলেন, ইউরোপের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে সমঝোতার সঠিক পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আমাদের অর্থ, আইন ও সীমান্তের ওপর আমরা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবো। বিশ্বজুড়ে আমাদের পুরনো মিত্র ও নতুন অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবো অবাধে। এটাই সঠিক পথ আর এটা জাতীয় স্বার্থে। তেরেসা মে বিরোধী দলদের সমালোচনা করে বলেন, তারা এর বিরোধিতা করছে। মে বলেন, ‘এত বিরটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্তে ওয়েস্টমিনস্টারে একতা থাকা উচিত। কিন্তু এর পরিবর্তে রয়েছে বিভক্তি। দেশ একতাবদ্ধ হচ্ছে কিন্তু ওয়েস্টমিনস্টার নয়। লেবার দল হুমকি দিয়েছে তারা ইইউ’র সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবে। লিবারেল ডেমোক্রেটরা বলেছে তারা তারা সরকারের কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি বলেছে, তারা ইইউ থেকে বৃটেনের সদস্যপদ প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। আর হাউজ অব লর্ডসের অনির্বাচিত সদস্যরা প্রতি পদক্ষেপের আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।’ তেরেসা মে বলেন, ‘আমাদের বিরোধিতা মনে করছে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কম হওয়ায় তারা আমাদের সংকল্পের দৃঢ়তাকে টলাতে পারবে আর আমাদের চলার পথ পাল্টাতে বাধ্য করতে পারবে। কিন্তু তারা ভুল।’
সতর্কবার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মে বলেন, ‘তারা যা করছে তাকে ব্রেক্সিটের প্রস্তুতিকাজকে ভণ্ডুল করে দিতে পারে। ইউরোপের সঙ্গে সমঝোতায় সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। আমরা যদি এখনই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন না করি তাহলে তাদের রাজনৈতিক খেলা চলতে থাকবে। আর ইইউর সঙ্গে সমঝোতা আগামী নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের আগ দিয়ে জটিল অবস্থায় পৌঁছুবে। ওয়েস্টমিনস্টারে বিভক্তি ব্রেক্সিট সফলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। দেশ হয়ে পড়বে অস্থিতিশীল। কাজেই আমাদের প্রয়োজন একটি জাতীয় নির্বাচন। আর সেটা আমাদের এখনই প্রয়োজন।’
আজ হাউজ অব কমন্সে আগামী ৮ই জুন আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। বিরোধী দলগুলোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার কথা বলে মে বলেন, ‘আপনারা ব্রেক্সিট নিয়ে সরকারের ভিশনকে সমালোচান করেছেন। আমাদের লক্ষ্যগুলোর সমালোচনা করেছেন। পার্লামেন্টে আমাদের আনা আইনগুলো আটকে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এবার আপনাদের সামনে নিজেদের অবস্থান প্রমাণের সুযোগ। এটা দেখানোর সুযোগ যে আপনারা স্রেফ বিরোধিতা করার জন্য সরকারের বিরোধিতা করছেন না। আসুন আমরা আগামীকাল নির্বাচনের জন্য ভোট দেই। ব্রেক্সিট নিয়ে আমাদের পরিকল্পনাগুলো উপস্থাপন করি। সরকারের জন্য আমাদের বিকল্প কার্যক্রমগুলো তুলে ধরি। আর এরপর জনগণ সিদ্ধান্ত নিক।’
প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, ‘বৃটিশ জনগনকে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার একটি সরকারের পক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।’ তার দল সরকারের কার্যকর একটি বিকল্প প্রস্তাব করবে করবে বলে আশ্বাস দেন লেবার। কমন্সে আগাম নির্বাচন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে বলে নিশ্চিত করেছে লেবার শিবির।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন আয়োজন করার জন্য তেরেসার মে’র প্রয়োজন এর পক্ষে দুই তৃতীয়াংশ এমপির ভোট। অর্থাৎ ৪৩৪ জন এমপিকে এর পক্ষে ভোট দিতে হবে। কনজারভেটির দলের ৩৩০ জন এমপি আর লেবার দলের ২২৯ জন এমপি আগাম নির্বাচনের পক্ষে ভোট দিলে প্রধানমন্ত্রী মে তার কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবেন সহজেই।
স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি এসএনপি নেতা নিকোলা স্টারজন তেরেসা মে’র সামলোচনা করে বলেছেন, ‘এ ঘোষণা সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাসের অন্যতম বিস্ময়কর এক ঘোষণা। আর এতে উঠে এসেছে যে তেরেসা মে ফের দেশের সবার আগে নিজের দলের স্বার্থকে আগে রাখছেন। বিরোধী লেবার দলে মারাত্মক তালগোল লেগে রয়েছে। এর মধ্যে মে স্পষ্টতই বাজি ধরছেন যে টোরিরা ইংল্যান্ডে আরও বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা জিততে পারবে।’ স্টারজন আরও বলেন, ‘স্কটল্যান্ড প্রশ্নে এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক হিসাবনিকাশের বিরাট ভুল।’
প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পরপরই রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে বৃটিশ পাউন্ডের দর। বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার পর তা আরেক দফা বেড়ে যায়।
জরিপগুলো থেকে ইঙ্গিত মিলছে তেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টির পালেই জোয়ার বেশি। ইউগভ-এর সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী বিরোধী লেবার পার্টি থেকে ২১ পয়েন্টে এগিয়ে আছে কনজারভেটিভ পার্টি। গার্ডিয়ান/আইসিএম জরিপ বলছে, লেবার দল থেকে অন্তত ১৮ পয়েন্টের ব্যবধান উপভোগ করছে টোরিরা। এ অবস্থায় কনজারভেটিভরা খুব সহজেই উতরে যাবেন বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=62092&cat=2/