১৭ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ১০:২৩

বিদ্যুতের ২৯ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি শূন্য

প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ

চলতি অর্থবছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৯টি প্রকল্পে অগ্রগতি শূন্য। এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্পে বরাদ্দ থাকার পরও এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। আর ১৫টি প্রকল্পে কোনো বরাদ্দই দেয়া সম্ভব হয়নি। এগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত প্রকল্পই বেশি। এছাড়া বিতরণ, প্রিপেইড মিটারিং সংক্রান্ত প্রকল্পও রয়েছে।
এমন নেতিবাচক তথ্য জানার পর কেন এমন হয়েছে তার কারণ খুঁজে বের করে প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া শ্লথগতিসম্পন্ন প্রকল্পের পরিচালকদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, এ সিদ্ধান্তসহ প্রকল্পের অগ্রগতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে সভা থেকে নেয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আবশ্যিকভাবে পাঠানোর নির্দেশও দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শূন্য অগ্রগতির কিছু প্রকল্প চার বছর আগে হাতে নেয়া হলেও এখনও বাস্তবায়ন কাজই শুরু হয়নি। অথচ মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালকরা বলেছেন, বৈদেশিক সহায়তা থাকায় উন্নয়ন সহযোগীদের নানা প্রক্রিয়ার ধাপ পেরোতেই এত বছর সময় চলে গেছে। তবে এখন বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগটি সময়োপযোগী। কেননা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর অন্যান্য খাতের অগ্রগতিনির্ভর করে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও এর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার ৮৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৪০ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর বাইরে সংস্থা বা কোম্পানিগুলোর ২৯টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সব মিলে ১১৪টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ১২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৪৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। কিন্তু অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় চলমান ৮৫টি প্রকল্পের মধ্যে আট মাসে ২৯টি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ রকম হতাশাজনক প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম কনভারশন অব শাহজিবাজার ২৩৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট টু ১০৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় ২০১৩ সালে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও এখনও বাস্তবায়ন কাজ শুরুই হয়নি। সবে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আলতাফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পে ইউরোপীয় ইনভেসমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়ন রয়েছে। এ সংস্থাটির নানা প্রক্রিয়া পার করতেই অনেকটা সময় চলে গেছে। যেমন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে গত বছর। আগামী ৩ মে পর্যন্ত দরপত্র জমার সময় রয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এছাড়া কনভারশন অব বাঘাবাড়ী ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট টু ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পটিরও একই অবস্থা। এ প্রকল্পের ইউরোপীয় ইনভেসমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়ন রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক খন্দকার আবুল আসলাম বলেন, ইআইবি প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করছে। ফলে তাদের নানা প্রক্রিয়া মানতে হয়। এখন দরপত্র আহবান করা হয়েছে। বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় বাড়লে অবশ্যই ব্যয়ও কিছুটা বাড়বে।
শূন্য অগ্রগতির অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রিপেইড মিটারিং ফর ডিস্ট্রিবিউশন কুমিল্লা অ্যান্ড ময়মনসিংহ, সোলার স্ট্রিট লাইটিং প্রোগ্রাম ইন সিটি কর্পোরেশন, কনভারশন অব সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট টু ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ইজিসিবি লিমিটেডের আওতায় কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই, আশুগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা বিভাগীয় অঞ্চলে প্রি-পেমেন্ট ই-মিটার স্থাপন (প্রথম পর্যায়), প্রিপেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট অব সিক্স এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি এবং প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ৫ এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি প্রজেক্ট।
সূত্র জানায়, সভায় কয়েকটি প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কনস্ট্রাকশন অব বিবিয়ানা সাউথ ৪০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সভায় জানান, ২ মার্চ ইপিসি ঠিকাদার ও ওনার্স ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে ইপিসি ঠিকাদার জানান, তারা বর্তমানে অর্থনৈতিক অসুবিধায় রয়েছেন। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে চলতি মাসের মধ্যে কাজের গতি ত্বরান্বিত করতে পারবে বলে আশা করছেন।
সভায় বিদ্যুৎ সচিব বলেন, এপ্রিলের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা সম্ভব না হলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে মনপুরা ও রাঙ্গাবালী উপজেলা বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়েছে, মনপুরা উপজেলায় ইতিমধ্যেই সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের মাধ্যমে সার্ভে করা হয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা সার্ভের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সচিব প্রকল্পটির অগ্রগতি বাড়াতে ইডকলের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্থা সে ডাকে যুক্ত করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন।
ডেসকোর বাস্তবায়নাধীন কনস্ট্রাকশন অব ১৩২/৩৩/১১ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন প্রকল্পের উপকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে জনতে চাওয়া হলে ওই সভায় জানানো হয়, ডিপিডিসির মালিকানাধীন বনানীর ৫নং রোডের জমি হস্তান্তর না হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/04/17/117894/