১৭ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ১০:২২

বিমান সিবিএ সভাপতির ফেসবুক স্ট্যাটাস

শ্রমিক-কর্মচারীর কণ্ঠ রোধে অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিস

বাংলাদেশ বিমানের প্রতিটি শাখাকে জরুরি সেবার আওতায় এনে অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিস ঘোষণা করা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিমান শ্রমিক লীগ (সিবিএ) সভাপতি মসিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান বাঙালিদের দমন-নিপীড়নের জন্য এ অর্ডিনেন্সটি তৈরি করেছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী পাকিদের অনেক কিছুই ঝাড়ামোছা করে বাতিল করলেও কিছু আইন বিশেষ যত্নে সিন্দুকের কোঠরে রেখে দেয়া হয়েছে। তার একটি হল এই অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিস। জনস্বার্থের কথা বলা হলেও অতীতে বাঙালি দমন হতো এই আইন দিয়ে। এখন অর্ডিনেন্সটি ব্যবহার করা হচ্ছে বাঙালি গরিব মেহনতি শ্রমিক-কর্মচারীদের কণ্ঠ রোধ, জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে।
৬ এপ্রিল সিবিএ সভাপতি তার ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন। পোস্টে মসিকুর আরও বলেন, বাঙালি নিন্ম আয়ের মানুষ জেলের ভয় পায় না। তারা ভয় পায় পরিবার-পরিজনের। জেলে গেলে সন্তান-সন্ততি, বৃদ্ধ মা-বাবাকে না খেয়ে মরতে হয়। তবে ইতিহাস যা বলে তা হল তাদের জীবিকা ও দেশের স্বার্থে আঘাত লাগলে তারা জেলের কথা ভুলে যায়।
তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানে দাবি আদায়ের নামে তেমন কোনো আন্দোলন বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। কোনো কর্মবিরতি বা ধর্মঘটও হয়নি। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪৬ বছরে বাংলাদেশ বিমানে মাত্র দু’বার কর্মবিরতি হয়েছিল মাত্র পাঁচ ঘণ্টার জন্য। ২০১০ সালে বিমান পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বিমান শ্রমিক লীগকে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালনে বাধ্য করেছিল তৎকালীন বিমান ম্যানেজমেন্ট। বর্তমানে বিমানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, শৃঙ্খলা খুবই ভালো। যদিও বিমানের বাইরের অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করবেন না। যারা শ্রমিক সংগঠন করেন এ দেশে সাধারণত তাদের কেউ বিশ্বাস করে না। তাদের সবাই অশিক্ষিত, চোর, ডাকাত, টেন্ডারবাজ, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলেই মনে করে থাকে। মসিকুর বলেন, বর্তমানে বিমানবহরে নতুন জাহাজ সংযোজিত হয়েছে। সেবার মান বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যাওয়ায় বিমানের পক্ষ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না। তবে সরকারের নির্দেশনায় বিমান বোর্ড যে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার ফল যাত্রীরা ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। বর্তমানে বিমানের সিডিউল ডিপার্চার প্রায় ৮০ শতাংশ অনটাইম। আগত যাত্রীদের ব্যাগেজ পেতে আগে ২ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন ৪০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যেই যাত্রীরা ব্যাগেজ হাতে পাচ্ছেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ কাটা বা ছেঁড়া, ব্যাগেজ চুরি এখন নেই বলেই চলে।
কিন্তু এই মাহেন্দ্রক্ষণে কেন বিমানকে আইয়ুব খানের তৈরি অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিসের শিকলে বাঁধতে হল? সামরিক জান্তা আইয়ুব এই অর্ডিনেন্স প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার আমলে কেন বিমানকে এর জাঁতাকলে আটকে দেয়া হল। তার প্রশ্ন- শ্রমিকের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হবে সে কি হয়? নাকি, এর পেছনে অন্য কোনো গভীর রহস্যময় চক্রান্ত রয়েছে? না কোনো উচ্চাভিলাষী আমলা, সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী বঙ্গবন্ধুর কন্যার দৃষ্টিকে আড়াল করে সুযোগের সন্ধানে আছে?
মসিকুর তার ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন রেখে বলেন, সাগরে ঝড় নেই, তুফান নেই অথচ ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত দিলে নৌকার মাঝিমাল্লারা কি সে সংকেত মানবে? উল্টো এই সংকেতই এক সময় মূল্যহীন হয়ে যাবে। আর সেই মাঝি যদি হয় আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকার তাহলে তো কথাই নেই। ৬ এপ্রিল পোস্ট করার পরপর বিমানের শ্রমিকদের মধ্যে পোস্টটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। এই লেখাটি পড়ে শত শত কমেন্টস ও শেয়ার করেন সিবিএ নেতারা। মোহাম্মদ হাসান নামে একজন তার কমেন্টসে লিখেছেন, অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিসের নামে একটি গ্রুপ বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। তার দাবি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বাঁচলে বিমান বাঁচবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
জিএম জাকির হোসেন মেহেদী তার মন্তব্যে বলেছেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সরকারকে বিপাকে ফেলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেশের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। যেমনিভাবে ফ্লাই দুবাইকে তড়িঘড়ি করে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কোডে সিলেট থেকে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এতে করে কিছুদিনের মধ্যে বিমান সিলেটের সব যাত্রী হারাবে। তার মতে, শাহজালালে অ্যারাইবল বেল্ট মাত্র আটটি। এ কারণে জাহাজ থেকে ব্যাগেজ নামানো হলেও বেল্টের অভাবে সেগুলো ডেলিভারি করা যাচ্ছে না।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/17/117904/