১৭ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ১০:১৫

হজযাত্রী নিবন্ধনে ঘোর অনিশ্চয়তা

হজযাত্রীদের নাম নিবন্ধন নিয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মধ্যে টানাপড়েনে এবার হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরকার দুই দফা সময় বাড়ালেও নিবন্ধন থেকে বিরত রয়েছে এজেন্সিগুলো। প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ এনে এজেন্সিগুলো নিবন্ধন বন্ধ রাখায় বিপুলসংখ্যক হজযাত্রীর এবার হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সৌদি আরব সরকারের বেঁধে দেওয়া কোটা অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৫৮ জন পবিত্র হজব্রত পালন করতে পারবে। আর সে জন্য প্রাক-নিবন্ধন শেষে নিবন্ধনের শর্ত বাধ্যতামূলক। নিবন্ধনের তালিকা দিতে সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অথচ গতকাল রবিবার পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে মাত্র তিন হাজারের মতো। বাকিগুলোর নিবন্ধন করবে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। কিন্তু প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়মে বঞ্চিত এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমহারে কোটা বণ্টনের দাবি তুলে তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে।
জটিলতা নিরসনে হাব গত বুধবার এজিএম করে দাবি পূরণে একটি রূপরেখা তৈরি করলেও তা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেনি। উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই সভাও হয়নি। এ অবস্থায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আজ ১৭ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ না করলে পরে আর হাবের দাবি নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে না। দুই পক্ষের এমন অনড় অবস্থানে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হজের প্রাক-নিবন্ধনের সময় কোনো কোনো এজেন্সি একটিও রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি। আবার অনেক এজেন্সি কয়েক শ হজযাত্রীর নাম নিবন্ধন করেছে। এ অবস্থায় শতাধিক এজেন্সি এ বছরের কোটাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বঞ্চিত এজেন্সিগুলোকে সমহারে কোটা বণ্টনের দাবি হাব নেতাদের।
নিবন্ধনের জন্য সরকারের নিয়োগ করা আইটি ফার্মের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে হাবের। গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, বর্তমান আইটি ফার্মের অধীনে তারা নিবন্ধন করবে না। নতুন আইটি ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারকে সুপারিশ করা হবে। আর ১৫০ জন হজযাত্রী-সংবলিত এজেন্সিগুলোর হজযাত্রী নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া গত বছরের প্রাক-নিবন্ধনকৃত ৩৭ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করে সরকারি কোটার সাড়ে ছয় হাজার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দিতে হবে। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন করা থেকে বিরত থাকতে সব এজেন্সির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এজেন্সিগুলোর উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, প্রাক-নিবন্ধনে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মার্চ মাসের প্রথম থেকে দুই দফা সময় দিয়ে গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও হাবের সাড়া না পাওয়ায় প্রথমে ১৫ এপ্রিল ও পরে আরো দুই দিন সময় বাড়িয়ে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধিত অবশিষ্ট হজযাত্রী ও চলতি বছরে প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের যাদের ক্রমিক নম্বর ১,৪০,৯৯৫ থেকে ২,১৭,২৮৮-এর মধ্যে রয়েছে তাদের আজ সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এই সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে তাদের আর নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে না। জাতীয় হজ ও ওমরাহনীতির ৩.১.৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরবর্তী অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রম অনুযায়ী কোটার সমসংখ্যক প্রাক-নিবন্ধিত হজ গমনেচ্ছুকে নিবন্ধনের জন্য আহ্বান করা হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, গত বছরের ধারাবাহিকতায় ই-হজ সিস্টেমে ২০১৭ সালের হজের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী চক্র বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে ই-হজ ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাক-নিবন্ধনে আমরা কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাইনি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে সেখানেও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তবে কারো কোনো দাবি বা অভিযোগ থাকলে মন্ত্রণালয় তা খতিয়ে দেখবে। আর সৌদি আরব সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় আগামী ১৭ এপ্রিলের পর হজযাত্রী নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে না। কারণ নিবন্ধিতদের তালিকা আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে সৌদি আরবে পাঠাতে হবে। ’
হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ফরিদ উদ্দিন এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রীর দেওয়া সময়সীমা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তের আগে আমরা কোনো নাম নিবন্ধন করব না। বিষয়টি নিয়ে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/17/487513