১৬ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ৮:২৫

ঢাকা-দিল্লি রোমান্স দুর্ভাগ্যের জালে

চারপাশ ঘিরে আছে ভারত। পশ্চিম, উত্তর ও পূর্বদিকে বিরাট এই প্রতিবেশীর মাঝে বাংলাদেশকে দেখতে ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু দেশটি বিশ্বের ৮ম জনবহুল দেশ। দ্রুত বর্ধনশীল অন্যতম একটি অর্থনীতি তাদের। আর ভারত 

মহাসাগরে দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা নিয়ে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝে দেশটির অবস্থান ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
চীন স্পষ্টত কিছু সম্ভাবনা দেখছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত বছর বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন ১৫০০ কোটি ডলার ঋণের। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার চীন। আর এ বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে অস্ত্র। মার্চ মাসে দুটি চীনা সাবমেরিন এসে পৌঁছেছে ঋণে। বাংলাদেশ চীনা অস্ত্রের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। তাদের আগে রয়েছে ভারতের অপর দুই প্রতিবেশী- পাকিস্তান ও মিয়ানমার।
ভারত তাদের দিক থেকে জোরোশোরে নিজস্ব আকর্ষণ উপস্থাপন করে জবাব দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১০ই এপ্রিল শেষ হওয়া চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি গেলে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিশ্চিত করেছেন তিনি যেন খালি হাতে না ফেরেন। তিনি ৫০০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান পৃষ্ঠপোষতায় নির্মাণাধীন পারমাণবিক কেন্দ্রের জন্য ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রথম। আর ভারতীয় অস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি ডলার। দেশ দুটি একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে আরো গভীরতর সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে তারা। আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ ও রেললাইনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ভারত।
তবে, শেখ হাসিনার কাছে সব থেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সে ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয় নি। সেটা হলো: ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়া ৫৩টি নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি। এর মধ্যে বিশেষ করে তিস্তা নদী আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ চায় এর পানি সমানভাগে ভাগ হোক। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দাবি করে ৫৫ শতাংশ। এ ইস্যুটি সমাধা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। কিন্তু তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চারটি রাজ্যের মাত্র একটিতে ক্ষমতায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তায় তার রাজ্যের ভাগ ছাড় দেয়ার সুযোগ মোদিকে দিতে নারাজ। শেখ হাসিনা ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য হিন্দুতে জরুরি এক বার্তা উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব বহতা নদীর মতো।’ বলেছেন, ‘চেয়েছিলাম পানি, পেলাম বিদ্যুৎ।’
তিস্তার পানি দেয়ার সুযোগ যদি মোদির হাতে থাকতোও, তারপরও মোদি হয়তো শেখ হাসিনার সঙ্গে অতিরিক্ত বন্ধুভাবাপন্ন হতে বিব্রত বোধ করতেন। মুসলিম আর বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উস্কে দেয়া বিজেপির নির্বাচনী সফল ফর্মুলা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা তার দিক থেকে ভারতের নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সহজাত সন্দেহ উপেক্ষা করছেন। বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার বিরুদ্ধে বিকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতায় এলেই এ চুক্তি বাতিল করবে। সরকারকে ঘায়েল করার জন্য বিএনপির কাছে তিস্তা আরেকটি কাজের হাতিয়ার। ভৌগোলিক অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশকে একসঙ্গে ঠেলে দিয়েছে বটে, কিন্ত অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখনো তাদের দূরে সরিয়ে দেয়।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=61660&cat=3/