১৪ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:৩৩

পশুর নদীতে ড্রেজিং লাগছে ১১৯ কোটি টাকা

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি ও কয়লা নেয়ার সুবিধার জন্য পশুর নদীতে ড্রেজিং করতে যাচ্ছে সরকার। মংলা বন্দরের নয় নম্বর জেটি থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ৩৮ দশমিক ৮১ ঘনমিটার খনন করা হবে। সব মিলিয়ে পশুর নদীতে সাত দশমিক ৯৫ কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। এসব ড্রেজিং কাজে ট্রেলিং সাকশন হপার ড্রেজার এবং কাটার সাকশন হপার মেশিন ব্যবহার করা হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজটি পেতে যাচ্ছে ড্রিডগিং করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় এ কোম্পানিকে কাজ দেয়ার প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। আগামী ১৬ই এপ্রিল মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি উঠছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর নদীতে ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং নামের প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পশুর চ্যানেলে মংলা বন্দরের ৯ নং জেটি থেকে ১৩ কিলোমিটার উজান পর্যাপ্ত নাব্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। এর ফলে চ্যানেলটি দিয়ে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা পরিবহনকারী জলযানের নিরাপদ ও সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত হবে। এর আগে গেল বছরের ১০ই মে একনেক সভায় ১৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার এ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে একই বছরের ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন আদেশ জারি করা হয়। প্রশাসনিক অনুমোদন জারির আগে ১৫ই জুন ড্রেজিং কাজের জন্য আন্তর্জাতিক প্রাক-যোগ্যতার আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। প্রাক-যোগ্য আবেদন জমা দেয়ার নির্ধারিত সময়ে ড্রিডগিং করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া, হল কনট্রাকটিং প্রাইভেট লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়া, চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, চায়না, ন্যাশনাল মেরিন ড্রেডগিং কোম্পানি পিজেএসসি, ইউএই, সিআরসিসি হার্বার- সিসিইসিসি জে. ভি গ্রুপ, চায়নাসহ ১২টি কোম্পানি অংশ নেয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ১২টি কোম্পানির মধ্য থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে কৃতকার্য হিসেবে সুপারিশ করে। এরপর কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অংশ নিতে গেল বছরের ৮ই ডিসেম্বর ড্রেজিং কাজের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। আন্তর্জাতিক দরপত্রে কৃতকার্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ড্রেডগিং করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া, চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, চায়না এবং এইচপিচিপিই- এমবিইএল জেভি (চায়না অ্যান্ড বাংলাদেশ)- কে কারিগরিভাবে কৃতকার্য ঘোষণা করে। কৃতকার্য তিনটি কোম্পানির মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ায় ড্রেডগিং করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া-এর দর প্রস্তাব গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে মূল্যায়ন কমিটি। এর ভিত্তিতে প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবের শেষে বলা হয়েছে, প্রস্তাবটি নৌ- পরিবহন মন্ত্রী দেখেছেন এবং মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালের এপ্রিলে একটি চুক্তি হয়। চুক্তির শর্তের আওতায় মংলা বন্দর থেকে রামপাল জেটি পর্যন্ত পশুর নদী ড্রেজিং করতে হবে সরকারকে। পরবর্তী সময় মংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত নদীর নাব্য রক্ষার কাজও সরকারকে করতে হবে। এ কারণেই সরকারি অর্থায়নে ড্রেজিং করতে হচ্ছে। নৌ- পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাঁচামাল সাড়ে ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজে প্রস্তাবিত কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। এ ধরনের জাহাজ পরিবহনের নাব্য পশুর নদীর নেই। এ সমস্যা দূর করতে ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ঘনমিটার নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। এদিকে নদী ড্রেজিং করতে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এর প্রতিবেদনের আলোকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ২০১৮ সালের মধ্যে চালু করতে কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকা ফাস্ট ট্রাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। এরই মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। এখন দেশে ১১ হাজার ৫৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এর ৭২ শতাংশ আসে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে। ২০২১ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালে চাহিদা হবে ৩৩ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট। এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১০ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বহুমুখীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্ব বাড়ছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=61507