১৪ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:২৩

হজযাত্রী নিবন্ধন নিয়ে সরকার-হাব মুখোমুখি

আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ সময় বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। এ নিয়ে তৃতীয় দফা সময় বাড়াল সরকার। তবে নিবন্ধন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব। তারা মাত্র দুই দিন সময় বাড়ানোকে হটকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছে।
গত ২৮ মার্চ থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এরপর ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ায় সরকার। কিন্তু আইটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নিবন্ধন কার্যক্রম বর্জন করে হাব। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে হাব নেতাদের সাথে মন্ত্রী-সচিবের সভায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয় ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ২ লাখ ১৭ হাজার ২৮৮ সিরিয়াল পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করলে পরবর্তী সিরিয়াল থেকে নিবন্ধন গ্রহণ করা হবে। ফলে শুক্র ও শনিবার বন্ধের পর রোব ও সোমবার মাত্র দুই দিন সময় পাবেন বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকেরা। এ ঘটনায় ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হাব নেতারা। তারা বলেছেন, এটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের হটকারী সিদ্ধান্ত। হাবের সভাপতি মো: ইব্রাহিম বাহার নয়া দিগন্তকে বলেন, মন্ত্রী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সচিব ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেয়া আমাদের সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে আমরা মন্ত্রীর সাথে কথা বলব।

এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (হজ-১) গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মাত্র দুই দিন সময় বাড়ানো হয়নি। গত ২৮ মার্চ থেকেই নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান। এর মধ্যে কেউ নিবন্ধন না করলে দায়দায়িত্ব তাদের।
এ দিকে গতকাল সকালে ঢাকা অফিসার্স কাবে তড়িঘড়ি করে বিশেষ সাধারণ সভা করে হাব। এ সভা থেকে হাবের সব পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এ সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। ইজিএম এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, বর্তমান আইটি ফার্মের অধীনে হজযাত্রী নিবন্ধন করা হবে না। নতুন আইটি ফার্ম নিয়োগ দেয়ার জন্য সরকারকে সুপারিশ করা হয়। ১৫০ জন হজযাত্রী সংবলিত এজেন্সিদের হজযাত্রী নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরের প্রাক-নিবন্ধনকৃত ৩৭ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারি কোটার সাড়ে ৬ হাজার বেসরকারি ব্যবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে। গত বছর এবং এ বছরে প্রাপ্ত সংখ্যা কোটা পূরণে অক্ষম ৫০৩টি এজেন্সির মধ্যে সুষম বণ্টন করতে হবে। নতুন কোটা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত নিবন্ধন করা থেকে বিরত থাকার জন্য সব এজেন্সির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

অন্য দিকে গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, গত বছরের ধারাবাহিকতায় ই-হজ সিস্টেমে ২০১৭ সালের হজের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। অনুমোদিত হজ এজেন্সিগুলো, সারা দেশের ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও কেন্দ্রীয় অফিস, অনুমোদিত ব্যাংক, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ সাত হাজারের বেশি ইউজার সরাসরি এ সিস্টেমে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হজ ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড হওয়ায় হজ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সারা বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। ওয়েবসাইটে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য হালনাগাদ বা কল সেন্টার সেবার মাধ্যমে তথ্য প্রদানের ফলে বিশেষ কোনো মহলের পক্ষে হজযাত্রীদের প্রতারণা করে অবৈধ ফায়দা গ্রহণের সুযোগ কমে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, একটি স্বার্থান্বেষী চক্র বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে ই-হজ ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিবরণীতে আরো বলা হয়, হজের প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমে ব্যাংক সার্ভারে প্রাক-নিবন্ধনের ফি ও জামানতের টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেই ওই সময়ের খালি ক্রমিক নম্বরটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাক-নিবন্ধনকারীকে প্রদান করা হয়, যা ২০১৬ সালের মার্চ থেকে বিদ্যমান। চলতি বছর হজের প্রাক-নিবন্ধন শুরু হওয়ার আগে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সহ একটি কারিগরি দল প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমটি কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত হিসেবে প্রত্যয়ন করে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাক-নিবন্ধন শেষে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ প্রত্যয়নপত্র প্রদান করে, প্রাক-নিবন্ধনের কারিগরি প্রক্রিয়ায় সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল এবং এ সিস্টেমে কাউকে কোনো বিশেষ সুযোগ দেয়ার অবকাশ ছিল না। কিন্তু প্রাক-নিবন্ধনের একপর্যায়ে এসে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) পক্ষ থেকে প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমে কারিগরি অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন সিনিয়র অধ্যাপকসহ কারিগরি বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সিস্টেমে কোনো কারিগরি অনিয়মের সত্যতা পায়নি। এ ছাড়াও ৩২টি হজ এজেন্সি কর্তৃক হজের প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (৩০০৭/২০১৭) দায়ের করে। হাইকোর্টের শুনানি চলাকালে, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পিটিশনের প্রতিটি বিষয় ও হজ এজেন্সি এবং আদালতের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে যাবতীয় দালিলিক প্রমাণ হাইকোর্টে উপস্থাপন করে। শুনানিতে হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের উপস্থাপিত দালিলিক প্রমাণ গুলোর সত্যতা খণ্ডন করতে সক্ষম হয়নি। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও আদালতের শুনানির প্রেক্ষিতে এ কথা প্রমাণিত হয়, ২০১৭ সালের হজে প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/212126