১৩ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:২৭

গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নগরজীবনে ঘটেছে ছন্দপতন। অন্যদিকে ডায়রিয়া আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। ভিড় বাড়ছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। মহাখালী আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা এখন দ্বিগুণ। ৭ থেকে ১২ই এপ্রিল সেখানে যথাক্রমে ৪৩১, ৫০৪, ৫০২, ৫০৬, ৫৩৩ ও গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসাম্মৎ শামিমা আক্তার জানান, এমনিতে নিয়মিত ২০০ থেকে ২৫০ রোগী ভর্তি হয়। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ৫শ’র ওপরে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ইতিমধ্যে হাসপাতালের নির্ধারিত সব বেড পূর্ণ হওয়ার কারণে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


ওদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯১%। আগামী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়েছে, আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে। আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে, যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। সরজমিন আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালে দেখা যায়, রোগীদের জন্য নির্ধারিত সকল বেড কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাইরে অতিরিক্ত বেড দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় শ্রয়নি দেব নাথ (১০ মাস)-এর মা কাকলি দেবনাথের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ৫ দিন ধরে আমার বাচ্চা অসুস্থ। বমি আর সঙ্গে পাতলা পায়খানা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর যখন পাতলা পায়খানা বন্ধ হচ্ছিলো না তখন এখানে নিয়ে আসি শনিবার। এখনো পুরোপুরি ভালো হয় নি। একই অবস্থা শ্যামলী কাওসার (২০)-এর। তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা করে ভালো না হওয়াতে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, কিছু দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আর আমি শ্রমিকের কাজ করি। সারাদিন বাইরে নানা রকম খাবার খাই। ডাক্তার বলেছেন নোংরা ও বাসী খাবারের জন্য এই সমস্যাটা হয়েছে। তিনদিন ধরে পাতলা পায়খানা আর বমি বন্ধ হচ্ছে না ১১ মাস বয়সী আফরোজা খাতুন ইরিনের। তাই তাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। তার মা আমেনা বেগম জানান, গরম পড়ার পর থেকে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করি। ঠিকমতো খাবার খেতো না। ঘুমাতো না। আর শুধু কান্নাকাটি করতো। পরে শুরু হয় পাতলা পায়খানা আর বমি। তাই এখানে নিয়ে আসি। এবিষয়ে হাসপাতালের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. তাহমিনা আলম বলেন, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগ একটু বেশি থাকে। কারণ এই সময়টা গরম থাকে প্রচুর। মানুষ বাইরে খাবার খায়। আর বাইরের খাবারে জীবাণু থাকে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই খাবার তৈরি হওয়ার কারণে রোগ জীবাণু বেশি ছড়ায়। এখানে গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর পরিমাণ আরো বাড়বে। ডায়রিয়া রোগীদের ভালো চিকিৎসা এখানে হয়। এজন্য সবাই এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। আমাদের নির্ধারিত সব বেড পূর্ণ হওয়ার কারণে আমরা অতিরিক্ত বেড দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। বেডের জন্য আমরা কাউকে চিকিৎসাবঞ্চিত করবো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ.বি.এম আব্দুল্লাহ বলেন, একদিকে যেমন বেশি তাপমাত্রা অন্যদিকে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি। আর এ জন্য মানুষের পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে। আর এই সময়টা দেখা যায় মানুষ বাইরে খাবার বেশি খায়। বাইরের কোনো খাবারই স্বাস্থ্যকর না। অনেকেই পিপাসা পেয়ে শরবত পানিসহ আরো অনেক কোমল পানীয় খায়। এর অধিকাংশই দূষিত। তাই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দূষিত পানি ও পচা-বাসী খাবারের জন্য জন্ডিস, টাইপয়েড, পানিবাহিত রোগের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে গার্মেন্ট বা বিভিন্ন শ্রমিক লেবেলে যারা কাজ করেন তারা এখন ঘন ঘন অসুস্থ হবে। তাছাড়া শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য বেশি তাপমাত্রায় নানান রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন তাপমাত্রাজনিত কারণে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, এই সময়টা সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। মোটা কাপড়ের পরিবর্তে হালকা ও ঢিলে-ঢালা কাপড় পরার অভ্যাস করতে হবে। শিশু এবং বয়স্কদের বিশেষ কারণ ছাড়া রোদের মধ্যে ঘুরাঘুরি থেকে বিরত রাখতে হবে। খাবার দাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গরমে অতিরিক্ত লবণ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এজন্য পানির সঙ্গে একটু লবণ আর ওরস্যালাইন মিশিয়ে খেতে হবে। বাইরের শরবত বা অন্য পানীয় খাবার দাবার এড়িয়ে চললে কোনো সমস্যা হবে না।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=61385&cat=3