১৩ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:২২

অভাবের আশঙ্কায় এলাকা ছাড়ছেন হাওরাঞ্চলের কৃষক

৬ হাজার কোটি টাকার ফসল পানির নিচে

সম্প্রতি হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অবহেলা ও অকাল বন্যায় ৬ হাজার কোটি টাকার বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় এ তথ্য প্রকাশ করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। এ সময় বক্তারা বলেন, অভাবের আশঙ্কায় শত শত মানুষ এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ঠিকাদারি প্রথা পরিচালনা করছে তা বাতিল করতে হবে। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে যে কমিটি প্রস্তাব করেন তাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ বাঁধ নির্মাণে যেসব ঠিকাদার কাজ করার কার্যাদেশ পান তাদের এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায় না।

আয়োজিত সংগঠনের সভাপতি কাসমির রেজা ‘আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের ফসল ও জনজীবন, সরকার ও জনগণের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মূল আলোচক ছিলেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আগাম বন্যায় গড়ে প্রায় ৭৫ ভাগ ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সুনামগঞ্জ। এ জেলায় প্রায় ৯০ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সময়মতো বাঁধ নির্মাণ না করা, নদী ভরাট হওয়া, অসময়ে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল, প্রশাসনের অসহায়ত্ব ও আর্থিক দুর্নীতিকে ফসলহানির জন্য দায়ী করা হয়। এতে বলা হয়, গত বছরও এসব এলাকার ৬০ ভাগ ফসল তলিয়ে যায়। এবার আবারও একই ক্ষতি পুনরাবৃত্তি হওয়ায় স্থানীয় কৃষকের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। কারণ অধিকাংশ কৃষক ঋণ নিয়ে ফসল ফলিয়েছিলেন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এখন শর্ষে ফুল দেখছেন। ইতিমধ্যে অনেকে অতি কম মূল্যে গবাদিপশু বিক্রি করা শুরু করেছেন। হাওরাঞ্চলে চালের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

বৈঠকে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বক্তব্য দেন। এর মধ্যে তাহিরপুরের শাহীন রেজা বলেন, ‘হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করতে হবে। ঠিকাদারি প্রথা বাতিল না করলে বারবার একই ঘটনা ঘটেই যাবে। কারণ যারা বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি পান তারা কেউই এলাকার বাসিন্দা নয়। বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব এমন লোককে দিতে হবে যাকে এলাকার মানুষ ধরতে পারবে।’ তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ সুনামগঞ্জের গ্রামে গ্রামে দুর্ভিক্ষ। তাই বৈশাখী উৎসব না করে এ টাকা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। সুনামগঞ্জের আবদুস সোবাহান বলেন, অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে বোরো ফসল ফলান। তাদের আশা থাকে বৈশাখ মাসে নতুন ধান বিক্রি করে তাদের পুরো বছরের সংসারের খরচ চলবে। আবার ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করবে। কিন্তু যে কৃষক আজ ক্ষতিগ্রস্ত হলো তার সংসার কিভাবে চলবে।

http://www.jugantor.com/news/2017/04/13/117209