১২ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ১০:৫৬

লোডশেডিং বাড়ছে

শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই লোডশেডিং। একে তো গরমের দিন, তার ওপরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কোথাও কোথাও পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন সেচের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। লোডশেডিংয়ের

কারণে অফিস-আদালতেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানীতে দুই থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার দেশের কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ আসছে অহরহ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহে সটেজের কারণে এক হাজার বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, গত ১০ই এপ্রিল পিক আওয়ারে সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে আট হাজার ৯৬৮ মেগাওয়াট। সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল একই পরিমাণ মেগাওয়াট। কাগজে-কলমের এই হিসাবে দেশে বিদ্যুতের কোনো লোডশেডিং নেই। এটা সরকারি হিসাব। কিন্তু সারা দেশে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার আচরণ বলে দেয় কি পরিমাণ লোডশেডিং হয়। উৎপাদন ক্ষমতা আছে ১৩ হাজার ১৭৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ভারত থেকে আসছে ৬০০ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রকৃত চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। ফলে লোডশেডিং এক হাজার মেগাওয়াটের উপরে। সরকার যে হিসাব দেয় তা সঠিক নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সন্ধ্যার পর বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করায় মেশিন-যন্ত্রপাতিতে সুষ্ঠুভাবে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে সেচে এর প্রভাব পড়েছে। গ্রামগঞ্জে বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দিনে-দুপুরে সেচ পাম্প প্রায় বন্ধ থাকছে। রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা আপেল অভিযোগ করে বলেন, সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ থাকে না। প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুতের এরকম ঘটনা ঘটে। গতকালও গভীর রাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ গেছে। গরম আসার পর পরই শোডশেডিং দেখা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, গরম আসার পরপরই তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় মারাত্মক ক্ষতি করে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, কিছু কিছু সমস্যা আছে। সঞ্চালন ও বিতরণের সমস্যা আছে। গ্যাস থেকে প্রায় ৬ হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কিন্তু সেখান থেকে পুরোটা পাওয়া যায় না। ফলে প্রকৃত উৎপাদন কমে যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি)-এর চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, গ্যাসের কারণে উৎপাদনে একটু ঘাটতি আছে। তবে প্রকৃত হিসাবটা বলতে পারছি না। তিনি স্বীকার করেছেন কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের মূল জ্বালানি হলো গ্যাস। ৬৭ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস দিয়ে। গ্যাসের অভাবে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এই গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। বহু সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের অভাবে অচল বসে আছে। তেল দিয়ে উৎপাদন হয় ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ। বাকিটা কয়লা ও জলবিদ্যুৎ। অতিমাত্রায় গরম ও অতিরিক্ত লাইনের কারণে পল্লী এলাকায় লোডশেডিং হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। গরম বাড়ার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে এসি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক মেশিনের ব্যবহার। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের ফ্রিজ ও এসির দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, এসব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক জিনিসের বিক্রি-বাট্টায়ও পড়েছে ধুম। ফ্রিজ ও এসির দোকানের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শীত মৌসুমের তুলনায় গ্রীষ্মের শুরুতেই গরমের কারণে তাদের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। গত এক মাসে তিন-চারগুণ বেড়েছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক চার হাজার ৮০৭ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে দুই হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। এতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে জনরোষ সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক সময়ই ওয়াসার পাম্প বন্ধ থাকছে। ওয়াসার বহু পাম্পে জেনারেটর নেই।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, সরকারের হিসাবের স্বচ্ছতার অভাব আছে। সরকার তার অভ্যন্তরীণ হিসাব ধরে। এক্সট্রানাল হিসাব ধরে না। প্রতি বছরেই এরকম ঘটনা ঘটে। এখন বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। কোনো সমন্বয় নেই। উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু জ্বালানির সরবরাহ বাড়েনি। সরকার বিদ্যুতের যে লোডশেডিংয়ের হিসাব দিয়েছে, তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে চাহিদা আরো বেশি। তিনি বলেন, কারিগরি বিষয়ে অনুমান নির্ভর কথা বলা উচিত নয়। সরকার বিদ্যুতের নিয়মতান্ত্রিক কোনো হিসাব রাখে না। অনুমাননির্ভর বলে থাকে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=61212&cat=3/