১১ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৩৮

ভিজিডি’র এনজিও নিয়োগে কেলেঙ্কারি

ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচির ৮৫ কোটি টাকা বিতরণে শুরুতেই ঘটেছে কেলেঙ্কারি। নামসর্বস্ব, চেনা মুখ এবং জোর তদবিরকারীরাই পেয়েছেন এর তদারকির দায়িত্ব। অথচ ডাকসাইটের মন্ত্রীদের কাছ থেকে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) নিয়েও অনেক এনজিও তদারকির দায়িত্ব পাননি। ফলে সুষম ও সুষ্ঠু বণ্টন এবং কাজের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তদারকির দায়িত্ব পাওয়া এনজিও’র মধ্যে এমনও রয়েছে যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বলতে কিছুই নেই। এমন অবস্থার মধ্যে গত ১৩ই মার্চ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের হলরুমে এনজিও প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত অনেক এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক তাদের কাজ কি সেটা বুঝে নিতেই কর্মকর্তাদের পেছনে দৌড়ঝাঁপ করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জন্য ৪১৫টি এনজিওকে নিযুক্ত করলেও তালিকায় এমন এনজিও রয়েছে যাদের অতীত কর্মকাণ্ড বিতর্কে ভরপুর। এসব কারণে যোগ্য ও অভিজ্ঞ এনজিওগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে ক্ষমতার দাপটের কারণে যোগ্য এনজিওরা এখন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুঃস্থ মহিলাদের সহায়তা দেয়ার জন্য সারা দেশের ১০ লাখ মহিলাকে ভিজিডি কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। এসব মহিলা মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে এসব দুঃস্থ মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এজন্য গত মার্চের শুরুতে ৪১৫টি এনজিওকে ১০ লাখ কার্ড ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫০০ ও সর্বনিম্ন ১২০০ কার্ড এনজিও’র আকার অনুযায়ী ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এনজিওগুলোকে প্রতি কার্ডপিছু বছরে ৪২৫ টাকা দেয়া হবে। ওই হিসেবে এনজিওগুলোকে ২০১৭ সালে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের জন্যও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। সব মিলিয়ে দুই বছরে ৮৫ কোটি টাকা দেয়া হবে এনজিওগুলোকে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আত্মীয়দের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভিজিডি কর্মসূচিতে নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে বাবরের ভাগ্নের প্রতিষ্ঠান উইমেন্স এনভারনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (উইডু), বোনের প্রতিষ্ঠান ঘরণী এবং তার আরেক আত্মীয় ‘বন্ধন সোসাইটি‘ নামক এনজিও’র ভিজিডি কার্ডের দায়িত্ব পেয়েছেন। অথচ অনেক যোগ্য এনজিও বাদ পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নানা দফারফার কারণেই বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার এনজিওগুলোকে নিয়োগ করা হয়েছে। এনজিও নিয়োগের আগে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও ‘হি’ ও ‘সি’ আদ্যাক্ষরের দুই এনজিও মালিক ছিলেন ওই সিন্ডিকেটের সদস্য। এনজিও মালিকরাই এনজিও নিয়োগে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সিন্ডিকেটের কাছে নজরানা ছাড়া কারও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি। তারা এনজিও সংক্রান্ত দফারফা করে ১৭-১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সততাকে পুঁজি করেছে সিন্ডিকেটটি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নানা কায়দা কানুনের মাধ্যমে এসব এনজিও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এনজিও নিয়োগ নিয়ে নেপথ্যে থেকে কাজ করেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম, সহকারী পরিচালক মজিবর এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মো. মাজেদুল ইসলাম সেলিম। তারাই আন অফিসিয়ালি বসে এনজিও নিয়োগ চূড়ান্ত করেন। এজন্য বাইরে কয়েক দফা মিটিং করেন তারা। যদিও অফিসিয়ালি এনজিও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মো. মাজেদুল ইসলাম সেলিম মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, আমি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কেউ নই। তাই আমি কীভাবে এনজিও নিয়োগ করবো? সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবরের আত্মীয়দের গণহারে এনজিও নিয়োগ পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ওরা গত সাত বছর ধরে নিয়োগ পেয়ে কাজ করে আসছে। আগে থেকে তারা কীভাবে কাজ করে? হেসে তিনি বলেন, আমাদের টাকা কে দিয়ে গেছে? আপনি যদি আমাকে টাকা দেন তবে প্রমাণ রেখে দেবেন। বেনামি চিঠি দিলে কেউ ঠেকাতে পারবে। আমার প্রতিপক্ষ জামাত- বিএনপি এসব কথা ছড়াচ্ছে। মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় আমার কাছে কিছু পলিটিক্যাল তদবির আসবে। এটাতো অস্বীকার করার কিছু নেই। ওই সব তদবিরতো আমাদের শুনতে হয়। এপিএস বলেন, কমিটি’র মাধ্যমে এনজিও নিয়োগ করা হয়। সেখানে আমাদের করার কিছু নেই। এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমি ভিজিডিতে এনজিও নিয়োগের সঙ্গে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে উপ-পরিচালক আবুল কাশেমকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব দেননি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=61120&cat=2/