১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:০৯

রেলওয়ের চার প্রকল্প বাতিল

বিশ্বব্যাংক কথা না রাখায় ও ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়ন জটিলতায় এই সিদ্ধান্ত

অবশেষে রেলের চারটি প্রকল্প চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত সহায়তা না পাওয়ায় তিনটি এবং ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নের জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ঝুলে থাকায় একটি। ২ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভায় প্রকল্পগুলো বাতিল করা হয় বলে জানা গেছে। তবে কী কারণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করেনি তা জানে না কোনো পক্ষই।
প্রকল্পগুলো হল- রেলওয়ের ২৬৪টি এমজি যাত্রীবাহী গাড়ি ও দুটি বিজি ইন্সপেকশন কার সংগ্রহ; রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন; বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, সেফগার্ড পলিসি, বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ও টেন্ডারিং সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প। প্রাথমিক কাজ সারতে এসব প্রকল্পের পেছনে ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের রেল উইংয়ের প্রধান মো. নজরুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কেন অর্থায়ন করেনি বৈঠকে তা জানতে চাওয়া হলে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেনি রেল সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কোনো কারণে অর্থায়ন করেনি। কিন্তু এর পরও চীন ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাইসংক্রান্ত কাজ ও রফতানি অবকাঠামো উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ চলছে। এ ছাড়া ভারতীয় ঋণের অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে যাত্রীবাহী গাড়ি কেনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নের কথা ছিল। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১৪০ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ছিল ৮৫০ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন করেনি বিশ্বব্যাংক। ফলে প্রকল্পটির কাজই শুরু করা যায়নি।
এ ছাড়া রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তুতির জন্য কারিগরি সহায়তা শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ কোটি দুই লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ১০ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা থাকলেও তা করেনি। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে সাত লাখ ৩৫ হাজার টাকা, কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি ছিল শূন্য শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, সেফগার্ড পলিসি, বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ও টেন্ডারিং সার্ভিস দেয়ার লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি ২০০৮ সালের মে মাস থেকে ২০১০ সালের এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয় ১২ কোটি ২১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। এ প্রকল্পেও কথা দিয়েও অর্থায়ন করেনি বিশ্বব্যাংক। জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পে কেন অর্থায়ন করেনি তার কোনো ব্যখ্যা বিশ্বব্যাংক দেয়নি। সাধারণত বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠালে যে প্রকল্পে অর্থায়ন করতে তারা রাজি থাকে সেটি নিয়েই পরে আলোচনা হয়। যেগুলোতে অর্থায়ন করে না, সেগুলোর কোনো কারণ জানায় না।’ এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব বলেন, ‘গত ৯-১০ বছরে বিশ্বব্যাংক রেলওয়েতে অর্থায়ন করেনি। আগামীতেও করবে না। তাহলে ওইসব প্রকল্পে কেন এমন হয়েছে সেটি আমার জানা নেই।’
এ ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২৬৪টি এমজি কোচ ও দুটি বিজি ইন্সপেকশন কার সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। এর মোট ব্যয় ধরা হয় ৯৮৩ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয় ৬৮৮ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দুইবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও ভারতীয় কৃতকার্য দরদাতা পাওয়া যায়নি। ফলে ভারতীয় এলওসির অর্থে বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দেয়। পরে অন্য কোনো দাতাও পাওয়া যায়নি। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন লাখ তিন হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/10/116474/