১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:০০

শাবিতে সাংবাদিক পেটালো ছাত্রলীগ উত্তেজনা

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবসহ সিলেটের সাংবাদিকরা মানববন্ধন ও র্যালি করেছে। এদিকে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের কর্মসূচি চলাকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি অবজারভারের সিলেট প্রতিনিধি সরদার আব্বাস আলী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক সকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈয়দ নবীউল আলম দিপু ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থের নির্দেশে সাংবাদিকদের পিটুনি দেয় তার অনুসারী কর্মীরা। ঘটনার পর রাতেই ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার স্বজনরা প্রক্টরিয়াল বডি বরাবর অভিযোগ করেছেন। শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসে পাঠানটুলা এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা দেয়া এক ছেলে ও এক মেয়ে। ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে তারা এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার এলাকায় যায়। এ সময় তাদের পিছু নেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থের কয়েকজন কর্মী। মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছুড়ে এবং নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। ছাত্রলীগ কর্মী ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান রুদ্র, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ রিয়াদ সহ আরো কয়েকজন ওই ছাত্রীকে মারধর করে। এমনকি পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা। এ সময় তারা ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা ভাইকেও মারধর করে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি নবীউল আলম দীপু ও সরদার আব্বাস আলী। ছুটে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থও। সাংবাদিকরা যাওয়া মাত্র পার্থ নির্দেশ দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। এর পরপরই ছাত্রলীগ কর্মীরা সাংবাদিক দীপু ও আব্বাসকে মারধর শুরু করে। তাদের মারধরে এক পর্যায়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন দুই সাংবাদিক। পরে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের পার্থ গ্রুপের কর্মীরা তাদের মারধর করেছে। এর আগে রাকিব যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন এবং রাহাত সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে পদার্থ বিজ্ঞানের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগও ছিল। ওদিকে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। কর্মসূচি মোতাবেক গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শাবি প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব ও সিলেট প্রেস ক্লাবের সিনিয়র নেতারা অংশ নেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় তারা বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কোনো নারী নিরাপত্তা না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। পাশাপাশি যারা সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তারা একাডেমিক ভাবে জুনিয়র ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও সিনিয়র-জুনিয়রিটির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। তারা অবিলম্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে তারা র্যালি বের করেন। র্যালিটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এদিকে সাংবাদিকরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করছিলেন তখন হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গোলচত্বরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ সময় তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। সাংবাদিকদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর ছাত্রলীগও তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত করে। এরপর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওসি আক্তার হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা তারা শুনেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। কিংবা যারা আহত হয়েছে তাদের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি। প্রক্টর মুনশী নাসের ইবনে আফজাল বলেন, ‘যৌন হয়রানির শিকার পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া এক ছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি লিখিত কোনো অভিযোগ পাননি। মৌখিকভাবে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ভিসির সঙ্গে কথা বলেছেন। ভিসি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা ছাত্রলীগ অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ বলেন, ‘যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে তারা আমার কর্মী তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ হামলাকারীরা তার দলের কেউ নয় বলে দাবি করেন তিনি।

শাবি প্রশাসনের তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সংবাদকর্মীর উপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংবাদকর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিকে অতি দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মুনশী নাসের ইবনে আফজাল জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর জাহিদ হাসান, শাকিল ভূইয়া, কৌশিক সাহা ও গোলাম মর্তুজা।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=60974&cat=3/