১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৮:৫৩

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে এলপি গ্যাসের

দেশে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের মূল্য কমলেও দেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চরম সংকটে ক্রেতারা এলপি গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিপিসি’র এলপি গ্যাস প্রতি বোতল (১২ কেজি) ৭০০ টাকা দামে বিক্রির সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর এলপি গ্যাস প্রতি বোতল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বাসা-বাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ছোট শিল্প-কারখানায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে বলে এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীরা জানান। বিপিসি’র সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে এলপিজি ব্যবসায় বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০টি বেসরকারি কোম্পানি এলপিজি বাজারজাত করছে।

বেসরকারি কোম্পানিগুলোর এলপিজি বিপণনে কোনো বিক্রি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এতে এলপি গ্যাসের বিশাল বাজার বেসরকারি কোম্পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তারা এলপিজি’র মূল্য ইচ্ছামতো নির্ধারণ করছে। ব্যবহারকারী ক্রেতারা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে এলপি গ্যাসের মূল্য অনেক কমেছে। কিন্তু দেশে বেসরকারি কোম্পানিগুলো প্রায় ৬/৭ মাস আগে সিলিন্ডার প্রতি গ্যাসের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আমদানি মূল্য কমলেও এলপি গ্যাসের মূল্য কমাচ্ছে না কোম্পানিগুলো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস প্রতি বোতল (১২ কেজি) ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার বাইরে কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডারের মূল্যে ভিন্নতা রয়েছে। বিপিসি সূত্র জানায়, দেশে বেসরকারি ৫০টি কোম্পানির মধ্যে এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে ৭টি কোম্পানির। আমদানি করা তরলীকৃত গ্যাস তাদের প্ল্যান্টে বোতলভর্তি করে বাজারজাত করছে। থাইল্যান্ড, মালেশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে এলপিজি আমদানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি কোম্পানি বিন-হাবিব-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম হাবিবুর হক ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের মূল্য কিছুটা কমেছে। আমরাও বোতলপ্রতি ৩০/৩৫ টাকা কমিয়ে দিয়েছি। চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাস সংকটের কারণে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প-কারখানায় বোতলজাত এলপিজি চাহিদা বেড়েছে।’

এলপি গ্যাস বিক্রেতারা জানান, শহর ছাড়িয়ে এখন প্রত্যন্ত গ্রামে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। শহর ও গ্রামের মধ্যে সিলিন্ডার প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার কারণে এখন মুদি দোকানেও এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। যত্রতত্র রাখার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে নতুন সংযোগের জন্য প্রায় ২৫ হাজার আবেদন দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত্ জমা রয়েছে। সংযোগ বন্ধ থাকায় এসব আবেদনকারীরা এলপি গ্যাস ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

খুচরা বাজারে দেখা গেছে, বিপিসি’র এলপি গ্যাস বোতলের মূল্য ছাড়া প্রতি বোতল ৬৭৫ টাকা হারে ডিলারদের সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। আর ডিলারদের প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস ৭০০ টাকা দরে বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিপিসি’র এলপি গ্যাসগুলো ডিলাররা সিন্ডিকেট করে বেসরকারি কোম্পানির ন্যায় চড়া দামে বিক্রি করছে।

দেশে সরকারিভাবে ইস্টার্ন রিফাইনারি ও সিলেটের কৈলাশটিলা প্ল্যান্টে বছরে ২০ হাজার টন এলপি গ্যাস উত্পাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু গত বছর উত্পাদন হয়েছে ১৬ হাজার টন। সরকারি প্ল্যান্টে উত্পাদন হ্রাসে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে এলপিজি’র বাজার। বেসরকারি ৫০টি কোম্পানি থাকলেও ৭টি কোম্পানির এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট রয়েছে। প্রতিটি প্ল্যান্ট বছরে ৫০ হাজার টনের বেশি সরবরাহ দিতে পারেনি। সেই হিসাবে বেসরকারি কোম্পানি বছরে সাড়ে ৩ লাখ টন এলপিজি সরবরাহ দিচ্ছে।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/last-page/2017/04/10/188197.html