১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৮:৪৬

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার নামান্তর

|| আবদুল আউয়াল ঠাকুর || কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল গভীর আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। এই নির্বাচনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিশেষ বিবেচনায় দেখা হয়েছে। গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারটি কতটা টিকে গেছে তার জবাব একবাক্যে দেয়া যাবে না। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এটিকে এক ধরনের সুখবর হিসেবে দেখা যেতে পারে। কারণ এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে রকিব কমিশনের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোশেন নির্বাচনের পর। অনেকে আশা করেছিলেন, রকিব কমিশনের শেষ নির্বাচন বিধায় হয়তো তিনি একটু হলেও সততার পরিচয় দিতে পারেন। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। তার আমলে অন্য ক্ষেত্রে যা ঘটেছে এক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যত্যয় হয়নি। সে বিবেচনায় বর্তমান ইসির আমলে কুসিক নির্বাচনে নানা অনিয়ম সত্তে¡ও বিএনপি প্রার্থীর বিজয়কে খাটো করে দেখার নয়। বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশন খানিকটা হলেও সাহসের পরিচয় দিয়েছে। এই নির্বাচন সম্পর্কে পত্র-পত্রিকা এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্যে জালভোট হয়েছে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানে সবকটি বুথে জোর করে ব্যালট বই ছিনিয়ে নিয়ে মেরেছে থাকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। বলা হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসার বিষয়টি র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। বলা হয়েছে, চৌয়ারা কেন্দ্রে নৌকার ব্যাজ পরা পাঁচ থেকে সাতজনকে প্রতিটি বুথে সিল মারতে দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন সাড়া না পেয়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে কেন্দ্র থেকে চলে গেছেন। নির্বাচন শুরু হওয়ার পরপরই অনেক কেন্দ্র থেকেই পুলিশের সহায়তায় সরকারদলীয় ক্যাডাররা অস্ত্রের মুখে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। এদিকে খবর সংগ্রহ করার কারণে একটি টিভি চ্যানেলের একজন নারী সংবাদকর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার ব্যক্তিগত সহকারীকে আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে জোর করে ভোট দেয়ার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করায় দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। এত কিছু সত্তে¡ও নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ১১ হাজারের বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ বিজয় নিঃসন্দেহে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। প্রথমত, নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে কোথাও কোনো প্রতিরোধ করা হয়নি। ব্যাপক অনিয়ম সত্তে¡ও বিএনপির এই বিজয় মূলত সেখানকার জনগণের ঐক্যবদ্ধতারই প্রতিফলন। যদি অনিয়ম-কারচুপি-মাস্তানি না হতো তাহলে ভোটের ব্যবধান আরো দেশী হতে পারত। সে কারণেই এ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্টজনরাও। মূলত নির্বাচনের আগেই বলা হয়েছিল নির্বাচন স্থানীয় সরকারের হলেও এটি মূলত নৌকা-ধানের শীষের প্রতীকী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। সে ইজ্জতের লড়াইয়ে ধানের শীষ জিতেছে। সে বিবেচনায় শুভ সূচনা মনে করা যেতে পারে। নির্বাচনের ফলাফলের পর বিশ্লেষকরা বলেছেন, স্থানীয় নানা সমীকরণ থাকলেও জয়-পরাজয়ে সরকারবিরোধী নেগেটিভ ভোট মূল ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। সাধারণ ভোটাররা সরকারকে একটি বার্তা দিয়েছেন। যাকে আরো সহজভাবে বললে বলতে হয়, সাধারণ জনগণ পরিবর্তন দেখতে চান। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, সরকারবিরোধী নেগেটিভ ভোট ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয় জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছে। টিআইবির প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামানও মনে করেন, এ নির্বাচনে ভোটাররা দলগুলোকে কিছু বার্তা দিয়েছে। সেটি হলো, তারা যখন সুযোগ পায় তখন নিজেদের পছন্দের প্রতিফলন ঘটায়। কুসিকে তাই দেখিয়েছে। ব্যাপারটি যদি এভাবেই চলে তাহলে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হলে এক ধরনের ফলাফল আশা করা যায়। আর যদি মাস্তানী-গুন্ডামি প্রবণতা বন্ধ করা না যায় তাহলে নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার অর্থহীন হয়ে যাবে। অন্যদিকে এই নির্বাচনে দেখা গেছে নির্বাচন কমিশন সকলের দাবি ও বাস্তবতার আলোকে নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে যাদের নিয়োগ দিয়েছে তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচনে জালিয়াতিকেই উৎসাহিত করেছে। সেক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভাববার রয়েছে আরো অনেক কিছু। এ কথা পুনর্বার প্রমাণিত হলো যে, একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই দলীয় এখতিয়ারের বাইরে থাকতে হবে। কুসিক নির্বাচনের আগে বিএনপি সমর্থকদের হয়রানি করার অভিযোগে একজন ওসিকে প্রত্যাহার করেছিল নির্বাচন কমিশন। দেখা গেল, নির্বাচন চলাকালে যতগুলো অভিযোগ উঠেছে তার সাথে প্রকারান্তরে কোনো না কোনোভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই জড়িত। তাহলে একটি জাতীয়ভিত্তিক নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে সুসম্পন্ন হতে পারবে? কুসিক নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষকরা যাই বলুক, সরকারি মহলে কিন্তু দুর্ভাবনা ততটা নেই। না থাকার আলামত একদিকে যেমনি বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে, তেমনি তাদের আচার-আচরণেও প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি দলেরে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঘাবড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেনি। কারণ তাদের ভাষায় আন্তর্জাতিক লবি এখনো তাদের সমর্থন করছে। এই মহল মনে করছে বিগত নির্বাচনে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের সমর্থন দেয়া হয়েছিল মাঝখানে এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও এখন এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফলের আগেই দলের বিশেষ দূতের মাধ্যমে তার নিরসন হয়েছে। সেদিক থেকে তারা সফরকে ফলপ্রসূ মনে করছেন। আরো যে কারণে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে নীতিনির্ধারকরা তা হলো, কুুমিল্লায় বিএনপি প্রার্থী বিজয়ের পরপরই দেশের তিনটি বড় সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা থেকে বিএনপির নমিনেশনে জয়ী মেয়র ও পৌর চেয়ারম্যানদের ‘বরখাস্ত’ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, সরকার সিটি করপোরেশনের মেয়রদের দায়িত্ব গ্রহণের ওপরে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রাষ্ট্রের করা আপিল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে আনন্দিত হওয়ার মতো কিছু নেই। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আগেও যেসব বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ী হয়েছিল তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যদি কুমিল্লা থেকে সরকার ইতিবাচক শিক্ষা নিত তাহলে ঘটত ভিন্ন কিছু। বাস্তবে একটা ড্যামকেয়ার ভাবই পরিলক্ষিত হয়েছে। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনা এই প্রথম নয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর থেকেই লাঞ্ছিত হয়ে আসছেন। এ প্রবণতায় নতুন বিষয় হচ্ছে, স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে উচ্চতর আদালত সঙ্গত মনে করছে না এবং বারবার সরকারি সিদ্ধান্ত স্থগিত করছে। ব্যাপারটি যেন এক গভীর রহস্যের জন্ম দিয়েছে। সঙ্গত প্রশ্ন উঠছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, তারা আইনগতভাবেই করছে। তাহলে কি উচ্চতর আদালত আইন বুঝছে না ? অথচ সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টই হচ্ছে আইনের ব্যাখ্যাদাতা।
দেখা যাচ্ছে, সরকার বারবার বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিতদের বরখাস্ত করছে আর উচ্চতর আদালত তা স্থগিত করছেন। এ নিয়ে প্রকাশিত খবরাদিতে দেখা যাচ্ছে, সরকারদলীয়দের বেলায় এই আইনের ভিন্ন প্রয়োগ হচ্ছে। একটি ইংরেজি দৈনিক নাম-ঠিকানা তুলে ধরে এ সম্পর্কে রিপোর্ট করেছে। সর্বশেষ মেয়রদের বরখাস্ত করার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরাও স্বাভাবিকভাবে নেননি। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ এ বিষয়টিকে কাকতালীয় নয় বরং পরিকল্পিত বলে মনে করছেন। তার মনে করার বিষয়টিকে যুক্তিহীন ভাববার কোনো কারণ নেই। এ যাবৎকালের অভিজ্ঞতা বলছে, যে কটি স্থানে বিরুদ্ধ মতের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটছে। প্রথমে একটি মামলা দেয়া অথবা বলা যায় এরা তো বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়েই নির্বাচন করেছেন। জনগণ তাদের সমর্থন দিয়েছেন। আর এটাই তাদের জন্য কাল হয়েছে। আদালত ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিদ্যমান বিরোধের সূত্র-উৎস খুঁজেছে একটি দৈনিক। দৈনিকটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর মূলে রয়েছে বিগত আমলে সেনাসমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের করা একটি অধ্যাদেশ, যা কিনা বর্তমান সরকার আইনে পরিণত করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় বরখাস্ত করছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো মেয়র অথবা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগগত্র আদালতে গৃহীত হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র বা কাউন্সিলরদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে। এই ক্ষমতাবলে গত সাড়ে তিন বছরে ৩৮১ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন সিটি মেয়র, ৩৬ জন পৌর মেয়র, ৫২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৯২ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ৭৪ জন মেম্বার রয়েছেন। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে রাজশাহী সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়রকে দুই দফায় বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট অধিকাংশ মামলাতেই স্থানীয় সরকারের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে শুধু রাজশাহীর মেয়র বুলবুলের রিট মামলটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। রায়ে বরখাস্তের আদেশকে বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহিভর্‚ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিমত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রায়ে হাই কোর্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আইনের অস্বচ্ছ, বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ বিষয়টি সরকার ও জাতীয় সংসদের নজরে আনার জন্য যাতে করে সংসদ এই আইনটি সংশোধন করতে পারে। একই সঙ্গে মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলার বিচার নিষ্পত্তির বিলম্বের কারণে নির্বাচিতদের কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সংশোধিত আইনে তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এই আইনটি যে তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রণয়ন করেছিল তাদের একটি অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। সম্ভবত তারা অধ্যাদেশটি ধার করেছিল পাকিস্তান আমলে সামরিক সরকারের করা ইবডো থেকে। কারণ দেশকে বিরাজনীতিকরণের চিন্তার সাথে দুই পক্ষেরই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেই অসৎ প্রবণতা যখন বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে তখন বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার নয় যে, তাদের উদ্দেশ্যও মহৎ নয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অধ্যাদেশে জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের অভিমত নেয়ার যে বিধান ছিল আইন করার সময়ে সেটি তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে এটি পুরোটাই কর্তৃত্ববাদিতায় পরিণত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উচ্চতর আদালত যে রায় দিয়েছেন মূলত সেটি জনস্বার্থ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিবেচনায় অপরিহার্য। এ কথা কারো অজানা নয় যে, অভিযাগ প্রমাণিত হওয়ার আগে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না।
সর্বশেষ তিন মেয়র বরখাস্তের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী জানতেন না। বিষয়টি গভীর ভাবনার। প্রথমত দেশে কি দ্বৈত কোন শাসন চলছে যে, কোনো সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী জানেন এবং কোনোটি তাকে না জানিয়ে নেয়া হয়। যদি ব্যাপারটি এমন হয় যে, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই তাহলে তো বলা যাবে সত্যিই দেশে এক মহাগণতন্ত্র চালু রয়েছে, যেখানে আইনের শাসন, সুশাসন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। আবার বিষয়টি যদি এমন হয় যে, সিদ্ধান্ত নেয়াই ছিল, তাই জানানোর কোনো প্রয়োজন হয়নি। যাই ঘটুক না কেন, দেখার রয়েছে, যা ঘটেছে তা কতটা যৌক্তিক এবং গণতান্ত্রিক চর্চার বিবেচনায় কতটা গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশে যখন আইপিইউর সম্মেলন চলছিল তখন তিন মেয়রকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যে সম্মেলনে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সমালোচনা করা হয়েছে তারা প্রত্যক্ষ করল বাংলাদেশে কার্যত কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অনেক দিন থেকেই অভিমত ব্যক্ত করে আসছে। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীও কারচুপিবিহীন নির্বাচন হওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। বর্তমান সিইসিও একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কথা বলে আসছেন। কথায় বলে, সকালের সূর্য নাকি দিনের পূর্বাভাস। কুসিক নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের পরই তিন মেয়রের বরখাস্ত মূলত সরকারের অসহিষ্ণুতারই পরিচায়ক। এ থেকে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, আগামী নির্বাচনের ফলাফল যদি তাদের বিপক্ষে যায়, তাহলে তারা তা মানবে কিনা। নির্বাচনের ফলাফল লুটে নেয়া না বা মানার ইতিহাস কম নেই। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর উচ্চতর আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পরেও কেবলমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ার কারণে নির্বাচিত মেয়রদের বরখাস্তের বিষয়টি শুধু একটি গতানুগতিক বা স্থানীয় সরকারের রুটিনওয়ার্ক মনে করার কোনো কারণ নেই বরং গণতন্ত্রের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার বিষয়কেই মূল বিষয় হিসেবে দেখা যৌক্তিক। অন্যদিকে নির্বাচনে জনগণের ঐক্যবদ্ধতাও বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে।
awalthakur@gmail.com

https://www.dailyinqilab.com/article/74001/