১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৮:৩৬

বন্ধ হোক জনপ্রতিনিধি বরখাস্তের অপকৌশল

হমান এই সময়ে

|| ব জি. মুনীর ||
এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে ক’টি দল বরাবর জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে প্রথম সারিতে থেকেছে, আওয়ামী লীগ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম দল হিসেবে বিবেচিত। দলটির একটি মজবুত জনভিত্তি রয়েছে, এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই। জনপ্রিয়তার ওপর ভর করেই এ দলটি স্বাধীনতার পর এ দেশের প্রথম সরকার হিসেবে ক্ষমতায় আসীন হয়। স্বাধীনতার ঠিক আগের কয় বছরে আমরা এ দলটির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা দেখেছি। এমনকি স্বাধীনতার পরের কয়েক বছরও এ দলটির জনপ্রিয়তার মাত্রা ছিল অসমান্তরাল। অতএব এ দলটির হাতে জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে ভবিষ্যতের পথচলার সহজ সুযোগ ছিল এবং এখনো তা শেষ হয়নি। সঠিক গণতান্ত্রিক পথ ধরে চলে এই দলটি সামনে যেতে পারত। কিন্তু পেছন ফিরে থাকলে দলটির একটি বিপ্রতীপ প্রকৃতি আমরা সহজেই লক্ষ করতে পারি। দলটি যখনই ক্ষমতায় বসে, তখন এর নেতানেত্রীরা যেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারে না। ফলে দলটি বারবার গণতন্ত্রের মহাসড়ক ছেড়ে ভিন্নপথে হাঁটতে শুরু করেছে। গণতন্ত্রের আবরণে ও আইনি অপকৌশল প্রয়োগ করে অগণতান্ত্রিক পথকেই বেছে নিতে প্রয়াসী হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে দলটি বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকার সময় এমন সব দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কার্যত গণতন্ত্রকে টুঁটি চেপে ধরারই শামিল। আওয়ামী লীগের মতো জনপ্রিয়তার দাবিদার এ দলটির কাছে এ ধরনের গণতান্ত্রিক বিচ্যুতি এ দেশের মানুষের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। এর পরও বাস্তবতা চলে গেছে জনগণের প্রত্যাশার বিপরীত মেরুতে। ইতিহাস তেমনটিই বলে। এ গণতান্ত্রিক বিচ্যুতি আমরা লক্ষ করেছি যেমন বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে, তেমনি আজকের দিনের আওয়ামী শাসনামলেও।
এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের বড়মাপের গণতান্ত্রিক বিচ্যুতি সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ করে তখন, যখন এ দলটি বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় প্রথমবার আসে। আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তার ‘দ্বিতীয় বিপ্লবে’র মাধ্যমে ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ ও ‘মেহনতি মানুষের সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন। এর পরপরই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে আধা ঘণ্টার মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে দেশে সংসদীয় ব্যবস্থার বদলে চালু করেন প্রেসিডেন্সিয়াল শাসনব্যবস্থা। নতুন এই সংশোধনী মতে, প্রেসিডেন্টকে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়। এতে সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তির জন্য মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়। তা ছাড়া, এ সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টকে রাখা হয় আইনের ঊর্ধ্বে, আদালতে তার কোনো কর্মকাণ্ডই চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রাখা হয়নি। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেয়া হয় সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বাতিল করে একটি একক জাতীয় দল গঠনের। এ সংশোধনীর পর বঙ্গবন্ধু হন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। বঙ্গবন্ধু এই সংবিধান সংশোধনীকেই আখ্যায়িত করেন ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ নামে। কিন্তু সমালোচকেরা এর নাম দেয় ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’। সে যা-ই হোক, এর কিছু দিন পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি একক জাতীয় দল হিসেবে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) গঠনের ঘোষণা দেন। সেই সাথে দেশের অন্য সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সবাইকে বাকশালে যোগ দিতে বলেন। রষ্ট্রীয় পরিচালনার আওতায় চারটি জাতীয় দৈনিক রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। বাকশাল নামের একটি একদলীয় অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করার প্রয়াসটি ছিল আওয়ামী লীগের প্রথম বড় ধরনের একটি গণতান্ত্রিক বিচ্যুতি। এর অর্থ আওয়ামী লীগ যেন আর জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছিল না। ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্রের পথ ছেড়ে ভিন্নপথে চলার এই স্বভাব বারবার ওই দলটির মধ্যে মাথাছাড়া দিয়ে ওঠে। সে স্বভাব-প্রকৃতি দলটি যেন কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারে না। ক্ষমতায় গেলেই দলটি বৈধ-অবৈধ পথ খোঁজায় ব্যস্ত থাকে কী করে প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন চালানো যায়। আওয়ামী লীগের আমলে জারি করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের কথা আজো এ দেশের মানুষ ভোলেনি। এটি ছিল প্রতিপক্ষ দমনের ক্ষেত্রে সরকারের জন্য একটি মোক্ষম আইনি হাতিয়ার।
কথাগুলো মনে পড়ল, সম্প্রতি দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার যে এক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি আওয়ামী চালু করেছে তা দৃষ্টে। আসলে এটি দলটির ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে প্রতিপক্ষ দমনের অপচেষ্টা অবলম্বনের প্রবণতাপ্রসূত একটি গণতান্ত্রিক বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের সব রাজনৈতিক দল-মহলের ঐকমত্য সূত্রে যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সূচনা করা হয়েছিল, তা সবার বিরোধিতার মুখে দলটি একতরফাভাবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে সংবিধান থেকে সরিয়েছে একই প্রবণতা থেকে। একই কথা খাটে সংবিধান থেকে গণভোট পদ্ধতি বাতিল করার ব্যাপারেও। কারণ, জনগণের ওপর আস্থাশীল থাকলে কখনোই গণভোট বাতিলের প্রশ্ন মাথায় আসত না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে এমন অনেক কিছু করেছে বা করছে, যা গণভোটে গেলে ঠিকবে না, সেটি আওয়ামী লীগ নেতারা ধরে নিয়েই সংবিধান থেকে গণভোটের ব্যবস্থা সরিয়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া বিগত কয়েক বছরে এই সরকার অগুনতি আইন সংশোধন করেছে কিংবা নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, যেগুলো প্রতিপক্ষ দমনের জন্যই করেছে বলে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। তেমনি একটি আইনি সংশোধন হচ্ছে আইসিটি আইনের সংশোধন। এ আইনের অপপ্রয়োগের প্রচুর জায়মান উদাহরণ গণমাধ্যম সূত্রে এ দেশের সাধারণ মানুষের জানা হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
সে যা-ই হোক, সম্প্রতি সরকার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল-মহলের নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের গণহারে বরখাস্তের যে প্রকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছে, তা সারা দেশের সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাপারটি আদালতে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচেষ্টাটি চালাচ্ছে আইনের আবরণে থেকেই। ২০০৯ সালে সংশোধিত স্থানীয় সরকার আইনের ১২(১) ধারা প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগ অনেকটা গণহারে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের বিরোধী রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীর নির্বাচিত জনপ্রতিধিদের হয় বরখাস্ত করা, না হয় কারাগারে পাঠানোর এক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি চালু করেছে, যদিও এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্রে খবরে প্রকাশ, বিগত সাড়ে তিন বছরে স্থানীয় সরকার পরিষদের ৩৮১ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করেছে বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের তালিকায় গাজীপুর, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রও রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয়কে আদালতের আদেশে পুনর্বহাল হলে চেয়ারে বসতে না বসতেই দ্বিতীয় দফা বরখাস্ত করা হয়। ইতোমধেই তারা আদালতের রায়ে আবারো নিজেদের পদ ফিরে পেয়েছেন। হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছও আদালতের রায়ে পদ ফিরে পেয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য মতে, সিটি করপোরেশনের মেয়র ছাড়া ৩৫ জন পৌরমেয়র, ৫৭ জন কাউন্সিলর, ৫৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৯১ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ৭৪ জন মেম্বারকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এসব জনপ্রতিনিধি নাশকতা, বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া এসব জনপ্রতিনিধির বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এসব জনপ্রতিনিধি ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগানো, বাসে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা রাজনৈতিক সহিংসতা মামলার আসামি। সংশ্লিষ্ট মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার পরপরই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভাইস চেয়ারম্যান হলেও চেয়ারম্যান প্রতিপক্ষ দলের, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিএনপি-জামায়াতের। ওইসব ভাইস চেয়ারম্যান অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যানকে সরানোর জন্য তাদের মামলায় জড়ানোর কলকাঠি নাড়ছেন বা নেড়েছেন। অনেকে এ ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন।
এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে অনেক জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিপুল ভোটে পরাজিত করেও চেয়ারে বসতে পারছেন না। এর ফলে তাদের সেবা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ, সরকারপক্ষ তাদের বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), স্থানীয় সরকার (পৌরসভা), স্থানীয় সরকার (উপজেলা), স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের ১২(১) ধারা প্রয়োগের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছেন। স্থানীয় সরকার আইনের এই ধারা অনুযায়ী, কোনো জনপ্রতিনিধি যেকোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে (আদালতে চার্জশিট গৃহীত হলে) কিংবা ওই প্রতিনিধি শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারালে কিংবা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। এ আইনের ধারায়ই মূলত সরকারবিরোধী জনপ্রনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে।
এই অপসংস্কৃতির চর্চাটি সরকার বেশ ক’বছর ধরেই চালিয়ে এলে এর সহজ শিকারে পরিণত হন প্রতিপক্ষের জনপ্রতিনিধিরা। উল্লিখিত ধারাটির অপপ্রয়োগের শিকার হয়ে অনেককেই অসহায়ের মতো হয় বরখাস্ত, না হয় কারাবাসের ভাগ্য বরণ করে নিতে হয়। কিন্তু অতি সম্প্রতি এ ক্ষেত্রে তাদের একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে ওঠে আদালত। এ ধরনের বরখাস্তকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করে আদালত অনেককে তাদের পদ ফিরিয়ে দিয়েছেন। স্থগিত করা হয়েছে সরকারের বরখাস্তের আদেশ। ফলে এই অপসংস্কৃতি অবসানে একটি নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে।
সম্প্রতি একটি রিট মামলায় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করার বিধান সংশোধন করতে বলেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন, জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সরকারকে এই আইন অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। হাইকোর্টের এই রায় আপিল বিভাগও গ্রহণ করেছেন। তবে আপিল বিভাগ ‘অবশ্যই সংশোধন’-এর স্থলে ‘সংশোধন করা উচিত’ বলে অভিমত দেয়। শব্দগত পার্থক্য যা-ই থাকুক না কেন, এই আইন সংশোধন ছাড়া আর প্রয়োগ করা যাবে না বলে আইনবিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তারা বলছেন, বরখাস্তের এই বিধানের আর কোনো কার্যকারিতা নেই। ফলে সরকার যদি এ ধরনের আর কোনো বরখাস্তের আদেশ দেয়, তবে তা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৭ মে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই সময় এবং এর আগে ও পরে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছসহ আরো অনেককেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উল্লিখিত আইনের ধারায়। এরা প্রত্যেকে হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে রিট করেন। হাইকোর্ট বেশির ভাগ মামলায়ই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে দেন। দায়ের করা এসব মামলার মধ্যে শুধু রাজশাহীর মেয়র বুলবুলের রিট মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে গত বছরের ১০ মার্চ। রায়ে বরখাস্তের আদেশকে বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করে। এ ছাড়া আদালত কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিমত ও নির্দেশনা দেন। রায়ে হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেন, আইনের অস্বচ্ছ, বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ বিষয়টি সরকার ও জাতীয় সংসদের নজরে আনার জন্য, যাতে সংসদ এ আইনটি সংশোধন করতে পারে।
মেয়র বুলবুলকে যে চারটি মামলার আসামি দেখিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছিল, ওই মামলায় কাউন্সিলরেরাও আসামি ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করেনি। ফলে এই আইনে ‘পিক অ্যান্ড চুজে’র সুযোগ রয়েছে বলে রিট আইনজীবী আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগও এ রায়টি বহাল রাখেন। ফলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি এখন নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়।
এর পরও রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জনপ্রতিনিধি বরখাস্তের অপসংস্কৃতির পক্ষে যেন নাছোড়বান্দা। দুই মেয়রের পক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। ফলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মাথায় নিয়েই গত বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার দফতরে বসেন। তার বিরুদ্ধে আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আপিল বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়। এ দিকে রাষ্ট্রপক্ষ বৃহস্পতিবার আরেকটি আবেদন করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ঠেকাতে। পরে এই আবেদনটিও গত বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে। সরকারপক্ষ পিছু হটে দু’টি আবেদনই রাষ্ট্রপক্ষ কার্যতালিকা থেকে ফিরিয়ে নেয়। ফলে বরখাস্তের ফেরে পড়া বিএনপি এ দুই মেয়রের নিজ পদে বহাল থাকতে আপাতত কোনো বাধা নেই।
দেশের মানুষ চায় অবিলম্বে স্থানীয় সরকার আইনের অগণতান্ত্রিক ১২(১) ধারা সংশোধিত হোক, সেই সাথে বন্ধ হোক জনপ্রতিনিধি বরখাস্তের এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি। সেই সাথে সরকার ফিরে আসুক গণতন্ত্রের মহাসড়কে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/210888