নিরাপত্তার জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কের প্রবেশপথে লাগানো হয়েছে লোহার ফটক। ১. হাটখোলা রোড; ২. সেগুনবাগিচার একটি রাস্তা; ৩. সিদ্ধেশ্বরী রোড ও ৪. ওয়ারী লারমিনি স্ট্রিট : নাসিম সিকদার
৯ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১:৫৬

নিরাপত্তার নামে রাজধানীর অলিগলিতে গেট নির্মাণ

নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে রাজধানীতে গেট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে স্থায়ী-অস্থায়ী গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাগুলোর পর স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে তৈরি করছেন এসব গেট বা ফটক। ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, উত্তরার মতো এলাকা ছাড়াও সেগুনবাগিচা, খিলগাঁও, বাসাবো, মিরপুর, আদাবর, মোহাম্মদপুরসহ নানা এলাকার প্রবেশপথগুলোতে এখন চোখে পড়ে এসব গেট। কিছু এলাকায় আবার রীতিমতো নোটিশ দিয়ে রাত ১১টায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে প্রবেশপথ। এতে করে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা পড়ছে। তারা জানেন না এসব গেট নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কি না।
এক সময় মানুষ শুধু ঘরের দরজা লাগিয়েই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যেতেন। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ততই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে বাসার প্রবেশপথে গেট নির্মাণ করা শুরু হয়। রাতে গেটে দু-তিনটি তালা লাগিয়ে তারপর ঘুমাতে যান বাড়ির মালিকেরা। তবে এতেও আর কুলাচ্ছে না। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক। এ কারণে নগরবাসীর নিরাপত্তা বাড়াতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এলাকার সড়কগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাড়ির মালিকেরা নিজ উদ্যোগেও বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছেন। তবে এতেও নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন না নগরবাসী। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলির প্রবেশমুখে অস্থায়ী গেট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। অনেক এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে স্থায়ী গেট। বেশির ভাগ এলাকায় রাত ১১টার পর এসব গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে অনেক এলাকায় রাত ৯টার পর গেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাসহ ওইসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা পড়ছেন বিপাকে। বিশেষ করে যারা অফিসে রাতের ডিউটি করেন কিংবা ব্যবসার হিসাব মিলিয়ে একটু রাত করে বাসায় ফেরেন, তাদের বিপাকে পড়তে হয়। অনেক বাসা মালিক ভাড়াটিয়াদের রাত ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে নির্দেশ দেন। না হলে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়।
বাসাবো বৌদ্ধমন্দির সড়কের সালাম ডেয়ারির বিপরীত দিকে আহম্মদবাগ গলিতে সম্প্রীতি একটি স্থায়ী গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। এ জন্য নিরাপত্তা বাড়াতে এই গেট নির্মাণ। গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মোহাম্মদপুর ও কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, রাজধানীর এসব এলাকার সড়ক ও বাড়ির প্রবেশমুখে গেট স্থাপন এবং সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। গত ১ জুলাই হোলে আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর থেকে কূটনৈতিক জোন গুলশানের সাথে সংযুক্ত ৯টি সড়কের প্রবেশপথে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। ওই ৯টি প্রবেশপথেই স্থাপন করা হচ্ছে নতুন গেট। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বনানী, বারিধারাসহ আশপাশের এলাকা থেকে প্রবেশের ছোটখাটো পথগুলোও। এসব এলাকার রাস্তায় সিটি করপোরেশনের উদ্যাগে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
উত্তরার সব সেক্টরের বেশির ভাগ প্রবেশপথে গেট নির্মাণ করা হয়েছে। যেসব সড়কে গেট নেই, সেগুলোতে নতুন গেট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় কমিটি। এর মধ্যে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ২০টি গেট লাগানো হচ্ছে। অন্যান্য সেক্টরে লাগানো হয়েছে দুই থেকে পাঁচটি গেট। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা।
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার প্রায় সড়কেই গেট লাগানো হয়েছে। আগে ওই এলাকার দুই ডজনের বেশি গেট সারা রাত ধরেই খোলা থাকত। এখন রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ২০টির মতো গেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাতেও আবার পুলিশ ও স্থানীয় নিরাপত্তা রীদের নজরদারি রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ধানমন্ডিতে শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ধানমন্ডি কল্যাণ সমিতি, পুলিশ ও ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে আরো ৩০০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সেগুনবাগিচায় সম্প্রতি বেশ কিছু গেট নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ১০টির মতো গেট দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। বিজয়নগর পানির ট্যাংকির বিপরীত দিকের একটি গেট সড়কের ড্রেন নির্মাণকাজের জন্য বেশ কিছু দিন ধরে রাত-দিন বন্ধ রাখা হয়েছে।
রায়েরবাজারেও রাস্তায় গেট বসানো হয়েছে। রায়ের বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এবং বৈশাখী খেলার মাঠ ও মাজারের পাশের রাস্তায় সম্প্রতি গেট লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় শঙ্কর মসজিদের পেছনের সড়কেও গেট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয়রা।
মিরপুর-১২ এলাকায় আগে থেকেই গেট থাকায় রাত ১১টা বাজতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশির ভাগ গেট। সামর্থ্যবান বাড়ির মালিকেরা বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছেন।
গেট নির্মাণ করায় বেশির ভাগ এলাকায় রাত ১১টার পর সহজে এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় যাওয়া যাচ্ছে না। উত্তরার একজন বাসিন্দা জানালেন খানিকটা অসুবিধা হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এসব উদ্যোগ মেনে নিয়েছেন। তবে যেসব এলাকায় রাস্তায় গেট লাগানো হচ্ছে, তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কি না তা জানা যায়নি।
অবশ্য সেগুনবাগিচা এলাকার কমিউনিটি পুলিশের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন নয়া দিগন্তকে বলেন, এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে গেটগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। তমা কন্সট্রাকশন, নাভানা কন্সট্রাকশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় গেটগুলো নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাতে প্রয়োজন অনুসারে গেট বন্ধ রাখা হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/210744