৪ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৬:০৪

নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও জনশক্তি রফতানির লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি

ইবরাহীম খলিল : বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে জনশক্তি প্রেরণের কাজে সারাবছর তৎপর ছিল মন্ত্রণালয়। পুরনো বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি দেশের শ্রমশক্তি বিক্রির জন্য নতুন বাজার খোঁজার কাজটিও করেছে দেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তারা। এরপরও জনশক্তি প্রেরণের যে টার্গেট করা হয়েছিল সেই স্থানটিতে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে জনশক্তি প্রেরণের বর্তমান গতি ঠিক থাকলে অর্থবছর শেষে জনশক্তি প্রেরণের পরিমাণ ৭/৮ লাখ ছাড়াবে।

এদিকে ২০২১ সাল জুড়ে আলোচনায় ছিল মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর সিন্ডিকেট। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন বছরের (২০২২ সাল) জানুয়ারি মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ শুরু হবে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানো হবে। কর্মীরা ন্যূনতম খরচে সেখানে যেতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে (১৯ ডিসেম্বর)। এই চুক্তির ফলে প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ফের উন্মুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারও আগের মত ২০-২৫ টি এজেন্সির হাতে চলে যাবে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি। আর যদি তাই হয় তাহলে আবারও নানা প্রতারণার মুখে পড়বেন মালয়েশিয়ায় যেতে চাওয়া বাংলাদেশি বেকার যুবকেরা।

অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন স্বাক্ষরিত এমওইউ-এ অভিবাসন খরচ কত হবে তা বলা হয়নি। বলা হয়েছে নিয়োগকর্তাই সব খরচ বহন করবেন। আর এজেন্ট ঠিক করবে মালয়েশিয়ার সরকার। আর এই সুযোগে নিয়োগকর্তার নামে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়া হতে পারে। এবার রিক্রুটমেন্ট হবে অনলাইনে। সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে কারা সেটাও চূড়ান্ত হয়নি। বাছাই প্রক্রিয়া কী হবে তাও স্পষ্ট করা হয়নি। আর এইসব প্রক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার আগের সিন্ডিকেট ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে।

এখনো নিশ্চিত করা যায়নি যে, সব রিক্রুটিং এজেন্ট লোক পাঠাতে পারবে, না নির্দিষ্ট কয়েকটি এজন্সিকে কাজ দেয়া হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০-২৫টি এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়ে আরো ২০০-২৫০টি এজেন্সিকে সাব এজেন্ট নিয়োগ করা হবে। এজেন্ট এবং সাব এজেন্ট-এর এই পদ্ধতি অভিবাসন ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেবে।

ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০০২-২০০৩ সাল থেকে মালয়েশিয়া বেশ কয়েকবার নতুন চুক্তি করেছে আবার বাতিল করেছে। প্রতিবারই তারা বলেছে সিস্টেমের গলদের কারণে প্রতারণা হয়েছে। অনেক বেশি অর্থ আদায় করা হয়েছে। মানব পাচার হয়েছে। এসব অবৈধ কাজে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় অনেক বেড়ে যায় । যদি এবারও সিন্ডিকেট হয় তাহলে একই অবস্থা হবে।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর প্রত্যাশা এই সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে বহু সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এছাড়াও কর্মী প্রেরণের বিষয়ে গ্রীসের সাথে বাংলাদেশের একটি আগ্রহপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনুরূপভাবে আলবেনিয়া, মাল্টা ও বসনিয়ার সাথেও কর্মী প্রেরণের বিষয়ে স্বাক্ষরের বিষয়টি অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে নতুন শ্রম বাজার হিসেবে কম্বোডিয়া. উজবেকিস্তান, পোল্যান্ড, হঙ্গেরি, রোমানিয়াসহ আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ এবং জাপান, চীন, ক্রোয়েশিয়া, সেনেগাল, বুরুন্ডি, সিশেলস, মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রভৃতি দেশে কর্মী প্রেরণ শুরু হয়েছে।

মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে স্থগিতাদেশ আরোপ করে এবং পুনরায় কর্মী নিয়োগ শুরু করার লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুরের নিরলস পরিশ্রম ও অবিরাম কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে মালয়েশিয়া সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রদান করে।

এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনের আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে উভয় দেশ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের কর্মীরা যেমন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে যাচ্ছে যা উভয় দেশ স্বীকার করে। উভয় দেশের আইন, বিধি, প্রবিধান, জাতীয় নীতি এবং নির্দেশাবলীর আলোকে এই সমঝোতা স্মারকে কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদাকে অধিকতর সুরক্ষিত করা হয়েছে।

এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সকল খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন- রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত প্রেরণের খরচ বহন করবেন। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সকল ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা/ কোম্পানী বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায় কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।

প্রত্যেক কর্মীকে মালয়েশিয়ার এমপ্লয়িজ সোশ্যাল সিকিউরিটি এক্ট ১৯৬৯ এর আওতায় কর্মকালীন দূর্ঘটনা বা কাজের কারণে শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পাবে। ফলে কর্মী ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা, অস্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, স্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি ভাতা, ডিপেন্ডেন্ট বেনিফিট, পুনর্বাসন সুবিধাসহ মালয়েশিয়ার আইনানুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাদি পাবেন।

এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ কর্তৃক প্রেরিত বৈধ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিসমূহের তালিকা থেকে নিয়োগকারী মালয়েশীয় সরকারের বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশী এজেন্ট বেছে নিবেন। এ বিষয়ে মালয়েশীয় সরকার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনপূর্বক অচিরেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নতুন কর্মী নিয়োগ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এদিকে মহামারি করোনার রেশ কাটিয়ে প্রায় দেড় বছর পর জনশক্তি রফতানি বাড়তে শুরু করেছে। আগের বছরে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন কর্মী পাঠাতে পারলেও ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩০ জনে।

প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহীন জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার সাথে সাথে ২০২১/২২ অর্থ বছরের প্রথম চার মাসেই আড়াই লক্ষাধিক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এরমধ্যে নবেম্বর মাসেই ১ লক্ষ ২ হাজার ৮শ’ ৬৩ জন কর্মী বিদেশে গেছে। এধারা অব্যাহত থাকলে এ অর্থবছরে ৭/৮ লাখ লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান হবে।

তবে জনশক্তি রফতানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে শুরু হতে যাওয়া শ্রমবাজারে কোথাও কোথাও কাজের ধরনও পাল্টে গেছে। তাই এই বাজার ধরে রাখতে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিকল্প নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শ্রমবাজার ধরে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত দশ মাসে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩২ জন কর্মী বিদেশে যেতে পেরেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৫ হাজার ৭৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৯ হাজার ৫১০ জন, মার্চে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন, এপ্রিলে ৩৪ হাজার ১৪৫ জন, মে মাসে ১৪ হাজার ২০০ জন, জুনে ৪৮ হাজার ৫৬৭ জন, জুলাইয়ে ১২ হাজার ৩০০ জন, আগস্ট মাসে ১৯ হাজার ৬০৪ জন, সেপ্টেম্বরে ৪২ হাজার ০৮ জন এবং অক্টোবরে ৬৫ হাজার ২৩৩ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছে সৌদি আরবে গেছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৯০ জন। শতকরা ৭৮ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে ৫ হাজার ৮৫৭ জন, কুয়েতে ৪৭৬ জন, ওমান ২৯ হাজার ৩৮০ জন, কাতার ৮ হাজার ২৮৯ জন, বাহরাইনে মাত্র ৯ জন যেতে পেরেছে এরমধ্যে জানুয়ারিতে ২ জন আর এপ্রিল মাসে ৭ জন গেছে।

লেবাননে গেছে ১৫১ জন, জর্ডানে ১০ হাজার ২১০ জন, লিবিয়াতে তিন জন এদের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ২ জন আর মে মাসে গেছে ১ জন কর্মী।

সুদানে গেছে ১৭ জন, মালয়েশিয়া ১৮ জন, সিঙ্গাপুর ১৬ হাজার ১১১ জন, ইউকে ৬৬ জন, ইতালিতে ৩৮৯ জন, জাপানে ৩ জন, মিশরে একজন যেতে পারেনি, ব্রুনাইয়ে ১০ জন, মরিশাস ৫৮ জন, ইরাকে ৪ জন, অন্যান্য দেশ মিলিয়ে আরও গেছে ৫ হাজার ১৫৮ জন। সবচেয়ে কম কর্মী গেছে কুয়েত, বাহরাইন, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, মিশর, ইরাক, জাপান, ব্রুনাই, মরিশাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সমৃদ্ধ দেশগুলোতে।

এর মধ্যে নারী কর্মীদের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৬১৭ জন। এদিক থেকে সৌদি আরবে গমনের সংখ্যা ছিল বেশি ৩৯ হাজার ৪৫৭ জন। এরপরের অবস্থান জর্ডান, সেখানে নারী কর্মী পাঠানোর সংখ্যা ১০ হাজার ৮২ জন।

জনশক্তি রফতানির গত ৫ বছরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন, ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন, ২০১৯ সালে মাত্র ৭০ হাজার ১৫৯ জন, ২০২০ সালে গেছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন, আর চলতি বছরের দশ মাসে গেল ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩২ জন কর্মী বিদেশে গেছে। তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে মহামারি করোনার কারণে ২০১৯ ও ২০২০ সালে সবচেয়ে কম কর্মী পাঠানো গেছে।
বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর যখন শুরু হলো তখন বেশ কিছু দেশ শ্রমজীবী নিয়োগে তাদের পলিসিতেই পরিবর্তন এনেছে।

বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে তো প্রায় দুই বছর বন্ধই থাকল। এখন শ্রমবাজার একে একে খুলতে শুরু করেছে। সৌদি আরব এখন আগের মতোই জমজমাট হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমিক নেওয়া শুরু করেছে। সেখানে একটা বড় সুখের খবর। এ সব দেশে শ্রমিক যাওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত শেষ হতে যাচ্ছে। হয়ত ডিসেম্বরের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে। যে কারণে ভবিষ্যতে জনশক্তি রফতানির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
তবে জনশক্তি রফতানি নিয়ে কাজ করছে এমন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বলছে, করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠার পর দেখা যাচ্ছে শ্রমবাজারগুলোতে কাজে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আরও বেশি দক্ষ করে বাজারে পাঠানোর পরামর্শ তাদের।

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম- ওকাপ চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর শ্রমবাজারে বড় ধরনের ধ্বস যে নেমেছিল এটা বড় ফ্যাক্ট। আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে ধরনের শ্রমিক প্রয়োজন শ্রমবাজারে, সে ধরনের শ্রমিক আসলে আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। কারণ এখন অনেক দেশই তাদের বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিক ডিমান্ড করছে। আমাদের দেশে সাধারণত কম দক্ষ শ্রমিকরা যায়, যে কারণে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা যেখানে সে জায়গাটা ধরা যাচ্ছে না। এটি জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার বড় কারণ।

তিনি বলেন, আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে না পারি তাহলে করোনা পরবর্তী সময়ে এর চাহিদা কম হবে। অন্যদিকে আমাদের বড় একটা অংশ নারী শ্রমিক পাঠানো। তাদের ক্ষেত্রে সরকারকে আরো উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন নারী কর্মী পাঠানোর ২০১৫ সালে সৌদি আরবের সঙ্গে সরকার একটা সমঝোতা স্মারক সই করে। শুরুর দিকে কিছু কাজ হলেও পরবর্তীতে তার প্রতিফলন আমরা কখনও দেখিনি। যে সকল দেশে নারী শ্রমিক যাচ্ছে সেসব দেশে সরকারকে সমঝোতা স্মারক কিংবা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে হবে। যাতে করে দেশের নারী শ্রমিকরা কোনো ধরনের হয়রানি, প্রতারণা, নির্যাতনের শিকার না হয়।

শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম এনডিসি জানান বর্তমানে ৬৮টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪৮টি ট্রেড উন্নীত করে ৭৬ টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিএমইটির আওতায় ৪৮টি টিটিসিতে প্রশিক্ষণের মেয়াদ ২১ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন বাড়িয়ে হাউজ কিপিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হাউজ কিপিং এ আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছে।

আন্তর্জাতিকমানের কর্মী গড়ে তুলতে টিটিসি কর্তৃক বেশ কিছু কারিগরি প্রশিক্ষণ চলমান। এ ছাড়া শিক্ষামান উন্নয়নের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় আইডিবির আর্থিক সহায়তায় ঢাকা টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘করোনা মহামারি কাটিয়ে বর্তমানে বিদেশে কর্মী গমনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট দেড় লাখের বেশি কর্মী কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বিদেশে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র আসছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হার কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে এসেছে। এই প্রবাহ চলমান থাকলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমলেও খুব শিগগিরই এটি ঊর্ধ্বমুখী হবে। আমরা শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। নানামুখী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ চলমান।

https://dailysangram.info/post/476396