৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:৫৬

বিদ্যুৎ নিয়ে মহাপরিকল্পনার মধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছে সরকার

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের সফলতার গল্প ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলে ও এখনো বিদ্যুৎ পায় না দেশের প্রায় ৬কোটি মানুষ। এদিকে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব জনগোষ্ঠী রান্নায় অপ্রচলিত জ্বালানি তথা কাঠ, বাঁশ, পাটখড়ি, শুকনো গোবর ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বব্যাংক ও গ্লোবাল ট্র্যাকিং ফোরামের (জিটিএফ) যৌথ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ নিয়ে একের পর এক মহাপরিকল্পনার মধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, গত ছয় বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। শহরের পাশাপাশি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগী উল্লেখ যোগ্য হারে বাড়েনি।
সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশের ৬২ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। আর ৩৮ শতাংশ বা ছয় কোটি মানুষ এ সুবিধার বাইরে রয়েছে, বৈশ্বিক হিসাবে যা পঞ্চম শীর্ষ।
জিটিএফ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকায় বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে ভারত। আর ৫ম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ । ভারতের ৭৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আর বাংলাদেশে ৬২ শতাংশ জনগোষ্ঠি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ভারতে অত্যধিক জনসংখ্যার জন্য এখনও ২৮ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। আর বংলাদেশে বিদ্যুৎ সুবিধার বাহিরে রয়েছে ৬ কোটি। এছাড়া নাইজেরিয়া ৫৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে বিদ্যুতের বাইরে রয়েছে সাত কোটি ৩০ লাখ জনগণ। ইথিওপিয়ার সাত কোটি ২০ লাখ জনগণ বিদুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে।
পিডিবির তথ্যমতে, সব মিলিয়ে সারা দেশে বাসাবাড়ির সংখ্যা দুই কোটি ৯০ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৭। এর মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার ৮৮১টি বা ৬২ দশমিক ২৪ শতাংশ বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। আর বিদ্যুৎ পৌঁছেনি এক কোটি ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৬টি বা ৩৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাসাবাড়িতে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩১টি দেশ শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় রয়েছে। আর ২৩টি দেশ এখনও শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। এর মধ্যে শেষের দিক থেকে ৯-এ বাংলাদেশের অবস্থান। এরপর রয়েছে যথাক্রমে কম্বডিয়া, মিয়ানমার, কিরিবাটি, তৈমুর-লেস্তা সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, উত্তর কোরিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি।
তবে বিদ্যুৎ সুবিধা দ্রুত সম্প্রসারণে কয়েকটি দেশের প্রশংসা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑবাংলাদেশ, কেনিয়া, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, সুদান ও উগান্ডা। এতে দেখা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল ৩২ শতাংশ জনগোষ্ঠী। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫, ২০১২ তে ৫৯ ও ২০১৪তে ৬২ শতাংশ। এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের ৯১ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে।
এদিকে রান্নায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার সবার নিচে রয়েছে ভারত। দেশটির ৩৪ শতাংশ এ সুবিধা পেলেও এখনও ৮৮ কোটি মানুষ রান্নায় অপ্রচলিত জ্বালানি ব্যবহার করে। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটির ৫৭ শতাংশ মানুষ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে। ৫৮ কোটি জনগণ অপ্রচলিত জ্বালানি ব্যবহার করে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা নাইজেরিয়ার মাত্র দুই শতাংশ জনগোষ্ঠী পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করছে। আর ১৭ কোটি জনগণ এর বাইরে রয়েছে।
প্রতিবেদনের বলা হয়, বাংলাদেশের ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এ ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে। আর ১৪ কোটি মানুষ অপ্রচলিত জ্বালানি ব্যবহার করছে। তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির ১০ কোটি মানুষ অপ্রচলিত জ্বালানিকে রান্নার কাজে ব্যবহার করে। শীর্ষ ১০-এ এরপর রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, কঙ্গো, ফিলিপাইন ও তানজানিয়া।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মাত্র ১২টি দেশে শতভাগ জনগোষ্ঠী রান্নার কাজে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে। আর ৪২টি দেশ এখনও এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে শেষের দিক থেকে ৭-এ রয়েছে বাংলাদেশ। এক দশকের বেশি সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো উন্নীত হয়নি। ২০০০ সালে দেশের ১১ শতাংশ জনগোষ্ঠী রান্নায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করত। এক দশক পর ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে। এখনও ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই এ জ্বালানি ব্যবহার করছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থার জরিপেও একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। তবে সেটি করা হয়েছিল বাসাবাড়ির (হাউজ হোল্ড) ভিত্তিতে। তাতে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ হাউজ হোল্ড বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য একদিনের মধ্যে বাসাবাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে খুব দ্রুত সম্ভব দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ১৯ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে।

http://www.dailysangram.com/post/278899-