১৬ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ৭:২৭

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় ভোগান্তি

এয়ারলাইন্সগুলো র‍্যাপিড টেস্ট অনুমোদন করছে না : ঢাকার সিভিল সার্জন

বিদেশগামী যাত্রীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু ওই সনদ জোগাড়ে তাদের হয়রানির শেষ নেই। ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনার সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেককেই চরম ভোগান্তি ও ফ্লাইট মিসের মতো কঠিন পরিণতির শিকার হচ্ছেন। এমনকি নমুনা জমা দেয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সনদ হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। আর নির্দিষ্ট সময়ে সনদ সংগ্রহ করতে না পেরে অনেকেই বিমানের ফ্লাইট মিস করছেন। এতে আর্থিক সংকটের মুখে পড়ছেন কেউ কেউ। এছাড়া সনদ সংগ্রহ করতে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বিদেশগামীদের। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে করোনা পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিদেশগামীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশ গমনেচ্ছুদের হয়রানি এড়াতে বিমানবন্দরে র‌্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা চালু করা। অন্যাথায় নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে আরটিপিসিআর টেস্টের রিপোর্ট দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে সব জটিলতা বিদ্যমান আছে তা দ্রæত দূর করতে হবে। অবশ্য সরকারিভাবে বলা হচ্ছে র‌্যাপিড টেস্ট করা গেলে বিষয়টি অনেক সহজ হতো। কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলো র‌্যাপিড টেস্ট অনুমোদন করছেনা। সূত্র মতে, বিদেশ গমনেচ্ছু বিদেশী নাগরিক/ বাংলাদেশী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিভিল সার্জনের তত্ত¡াবধানে আর্মি স্টেডিয়াম, ঢাকা সেনানিবাসে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া বরিশাল, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা,নারায়নগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট এবং নোয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস নমুনা সংগ্রহ করে। এদিকে মহাখালীর আইসিডিডিআরবিতে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশী সংস্থায় কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এগুলো ছাড়াও বেসরকারি ৪৭ প্রতিষ্ঠানকে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনার সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেককেই চরম ভোগান্তি ও ফ্লাইট মিসের মতো কঠিন পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামের বুথে গতকাল দেখা যায়, এখানে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫০০ প্রবাসী ভিড় জমান। তারা ফ্লাইটের তারিখের দু’দিন আগে এখানে এসে নমুনা দিয়ে যান। প্রথম দিন দিয়ে যান সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে। পরদিন দুপুর ২টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সনদ সংগ্রহ করতে পারেন। পরদিন ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে যেতে পারেন। এতেই সবাই মোটামুটি মানানসই হয়ে যায়। কেউ ইচ্ছে করলে বাসায় বসেও অনলাইনে সনদ দেখে প্রিন্ট কপি নিতে পারেন। এখানে কর্মরত একজন সেনা কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিনই বিদেশগামীরা আসছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলামতো সিরিয়াল নিয়ে ভেতরে যান। নমুনা দিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চলে যান। কেউ পরদিন এসে আবার একই কায়দায় সনদ নিয়ে যান। এ কেন্দ্রে এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের অনিয়ম বা জটিলতার অভিযোগ পাইনি।

রাজধানীর চিত্র মোটামুটি হলেও চট্টগ্রামে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিদিনই ফ্লাইট মিসের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে এক দর্শনার্থী জানান, তিনি তার এক আত্মীয়কে বিদায় জানাতে এসেছেন। তার আত্মীয় দুবাই যাবেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ফ্লাইট ধরার তারিখ ছিল গতকাল রোববার। কিন্তু পারেননি। ১৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও করোনা সনদ পাননি তিনি। প্রায় ২২ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে তিনি যখন করোনা সনদ পেলেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইট তখন আকাশে। এরপর স্বভাবতই ফ্লাইট মিস। তিনি বলেন, গত বছর দেশে এসে করোনার কারণে আটকে যাই। এমননিতেই আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। ধার-দেনা করে টিকিট করেছি। এখন আবার নতুন করে টিকিট করতে হবে। এ দায় কে নেবে?

বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশফেরত প্রবাসীরা বর্তমানে সংকটে আছেন। এর ওপর টেস্টের যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তাদের জন্য অনেক বেশি। এমনকি বাড়তি ফি নেয়া হলেও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। এ অবস্থায় সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রবাসীরা। শুধু টেস্ট নয়, যাতায়াত মিলিয়ে একেকজনের ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি সবসময় সচল রেখেছেন। তাদের জন্য এ খরচ অনেক বেশি। অন্যদিকে ৬৪টি জেলার মানুষের জন্য মাত্র ১৫ জেলায় টেস্টের ব্যবস্থা মোটেও পর্যাপ্ত নয়।

বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের করোনার নমুনা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসাইন মো. মঈনুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে দেশে রোগীদের নমুনা পরীক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। আর এখন রোগী বেশি হওয়ায় বিদেশ গামীদের জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কারো যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জরুরীভাবে টেস্ট রিপোর্ট দরকার হয় আমরা চেষ্টা করি। তবে অনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের ২৪ ঘন্টায় রিপোর্ট দেয়ার সুযোগের কথা বলা হয় না। এটা ৩৮ ঘন্টা বা ৪৮ ঘন্টা বলা হয়। তবে আমরা এর আগেই রিপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করি।

র‌্যাপিড টেস্টের বিষয়ে ডা. মো. মঈনুল হাসান বলেন, র‌্যাপিড টেস্ট করা গেলে বিষয়টি আমাদের এবং যাত্রীদের জন্য অনেক সহজ হতো। কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলো র‌্যাপিড টেস্ট অনুমোদন করছেনা। তাই বাধ্য হয়ে আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হচ্ছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/408631