১৬ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ৭:২২

জলবায়ু বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে দেশের ২ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ

জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশসহ অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলো রয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব শিশুদের ওপরই বেশি পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ-ব্যাধিতে যতলোক আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই শিশু। এদিক দিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অত্যন্ত সংকটাপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধ্বংসী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য পরিবেশগত বিপর্যয়গুলো বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি শিশুর জীবন ও ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলছে। ইউনিসেফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২০টি জেলা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, আকস্মিক বন্যা, খরা প্রভৃতির তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপকূলীয় ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালি, কক্সবাজার, নোয়াখালি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা ঘূর্ণিঝড়ের বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা এবং হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। অন্য দিকে রাজশাহী ও নিলফামারী খরার এবং যশোর জলাবদ্ধতার ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে শিশুদের নিরাপদ রাখতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর ওপর প্রভাব হ্রাসে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাজ এ সিকিউরিটি থ্রেট শীর্ষক এক আলোচনায় বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার যাবতীয় বিশ্লেষণকে বোঝাচ্ছে। কিছু কিছু সংগঠন মানুষের কারণে সৃষ্ট পরিবর্তনগুলোকে মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বলে। তবে একথা অনস্বীকার্য, বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন শুধু প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও অত্যন্ত প্রকট।

গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ৮৭টি উপজেলার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল সরাসরি ভোগ করছে। ফলে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় এসব এলাকার শিশুরা থাকে সবচেয়ে ঝুঁকিতে। নদীভাঙন বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় আবাদি ফসল নষ্টসহ যেকোনো ঘটনার প্রভাবেই বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি। এ কাতারে নারীরাও শামিল।

এদিকে বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। অনেক সময় বন্যার কারণে নদী ভাঙন হয়। আবার নদী ভেঙেও লোকালয় প্লাবিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি, জমি ও সম্পদ বিনষ্ট এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। পানির লবণাক্ততাও একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের অনেক এলাকা এখন এই সমস্যায় আক্রান্ত।

ইউনিসেফের নতুন এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিরা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশংসনীয় ক্ষমতা অর্জন করলেও দেশটির নবীনতম নাগরিকদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপদ এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে আরও সম্পদ ও উদ্ভাবনীমূলক কর্মসূচি প্রয়োজন। বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা ফোর বলেন, বাংলাদেশের দরিদ্রতম কমিউনিটিগুলো পরিবেশগত যে হুমকির মোকাবেলা করছে তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, যার কারণে তারা তাদের সন্তানদের যথাযথভাবে রাখতে, খাওয়াতে এবং স্বাস্থ্যবান ও শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে না। বাংলাদেশে এবং বিশ্ব জুড়ে শিশুদের বাঁচিয়ে রাখা এবং তাদের উন্নয়নে দেশগুলোর অনেক অর্জন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ম্নান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২০টি জেলায় বসবাসকারী মোট ১ কোটি ৯৪ লক্ষ শিশু জলবায়ু পরিবর্তনের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক ফলাফলের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ৫০ লক্ষেরও বেশি। ৪৫ লাখ শিশু উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করছে, যারা নিয়মিতভাবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের শিকার; এদের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে, ভয়ঙ্কর ঝড় থেকে রক্ষা পাবার জন্য যাদের বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি দুর্বল কাঠামোয় গড়ে তোলা আশ্রয়স্থল ছাড়া আর কিছুই নেই। অনেক শিশুই বিদ্যালয় ছেড়ে, মুক্ত প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং নিরাপদ আবাসস্থল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবারের সাথে শহরের বস্তিতে চলে আসে।

প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের শিকার পরিবারগুলোর শিশু-কিশোর-তরুণরা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে আছে। তাদের সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয়সহ মৌলিক অধিকারসমূহ হুমকির মুখে পড়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলে এর পৃষ্ঠের যে উচ্চতা বাড়ছে তা পৃথিবীর দ্রুততম উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া সমুদ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।

শিশু সুরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গিয়াস উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষকে আরও গরিব বানাচ্ছে এবং বাল্যবিবাহের পেছনে দারিদ্র্য একটি প্রধান কারণ। বস্তিগুলোতে ইউনিসেফ বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও সেখানে ছাত্রছাত্রীদের বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব হয় না। মেয়ে শিশুরা তৈরি পোশাক কারখানায় আর ছেলে শিশুরা বিভিন্ন দোকান, ব্যবসা বা অন্য কোনো কাজে লেগে যায়।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু-সুরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ওয়েসল্যান্ডের মতে, বাংলাদেশের আনুমানিক ৩৪.৫ লক্ষ শিশু শিশুশ্রমের সাথে জড়িত থাকার অন্যতম কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন। অত্যন্ত দূষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার সময় এ শিশুরা তীব্র শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। নদীভাঙ্গনের ফলে অনেক স্থানে বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। নতুন এলাকায় বিদ্যালয় ভবন তৈরি হলেও সেখানে উপস্থিতির হার থাকে কম। পুরাতন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে ক্লাস করতে যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানিবাহিত সংক্রামক ও অসংক্রামক বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে ব্রহ্মপুত্র নদের দুকূল ছাপানো বন্যায় প্রায় ৪৮০টি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্লাবিত হয়, ৫০ হাজারের বেশি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার শৌচাগার বিলীন হয়। বন্যা ও খরার সময় নিরাপদ খাবার পানির অভাবে শিশুরা পানিবাহিত অসুখ, যেমন – ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ ও কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়ে। এ সময় পানিতে পড়ে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ২০১৭ সালের বিধ্বংসী বন্যায় ২৫ লক্ষ শিশুর মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ, যা দরিদ্র বাংলাদেশিদের তাদের ঘরবাড়ি ও কমিউনিটি ফেলে অন্যত্র নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে ঢাকা ও অন্য বড় শহরগুলোতে যাচ্ছে, যেখানে শিশুদের বিপজ্জনক শ্রম বা শিশুবিয়ের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। গবেষণার কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৬০ লাখ জলবায়ুজনিত অভিবাসী রয়েছে, যে সংখ্যাটি ২০৫০ সালের মধ্যে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

ইউনিসেফের মতে, পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা ধরনের কারণে শিশুসহ তাদের পরিবারের মধ্যে হেপাটাইটিস এ, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া জ্বরসহ বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ে। শিশুর সুরক্ষা ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সব অর্জন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে জানান ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক। ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে নদীভাঙনের কারণে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একজনের জীবন ও ভবিষ্যৎ ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়ে বিশ্বকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘের শিশু-বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, গাইবান্ধা, নিলফামারী, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এই ২০ জেলার শিশুরা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করে ইউনিসেফ। নোয়াখালীতে সর্বোচ্চ ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৩ শিশুর অবস্থা বেশি নাজুক। এর মধ্যে চার লাখ ৫১ হাজার ৫৪০ জনের বয়স পাঁচ বছরের কম। জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগামী ২০ বছরে শতকরা ৩২০ ভাগ বাড়বে, বাড়বে শিশুমৃত্যুর হার। সেভ দ্য চিলড্রেন প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ শিশু ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

জাতীয় শিশুনীতি ২০১১-এর ৬ ধারায় শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা; দুর্যোগকালে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় শিশুদের বিপদ কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বস্তুগত সাহায্যের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় মনঃসামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরও শিশুবান্ধব করা এবং পরিচর্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এতিম ও অসহায় শিশুদের জরুরি অবস্থায় সুরক্ষার জন্য কর্মকৌশল প্রবর্তন করা এবং দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে শিশুরা যে কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ে বসবাস করে, সেই কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের সদস্যদের দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের কল্যাণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের শিকার পরিবারগুলোর শিশু-কিশোর-তরুণরা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে আছে। তাদের সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয়সহ মৌলিক অধিকারসমূহ হুমকির মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন ত্যাগ করে পেটের তাগিদে এ সকল শিশু-কিশোররা শিশুশ্রমিক হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশে রোজগারের জন্য কাজ করা শুরু করে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকায় বেশিরভাগ শিশু-কিশোর বা তরুণই ঝুঁকিপূর্ণ ও দূষিত পরিবেশে কোনো সুরক্ষা ছাড়াই অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য হয়। ইটভাটা, জাহাজ নির্মাণ কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে বা টোকাই হিসেবে কাজ করে তারা পরিবারকে সাহায্য করে। অন্যদিকে মা-বাবা কাজে গেলে মেয়েশিশুদের নিরাপত্তা দেয়া যায় না বলে অভিভাবকেরা মেয়েশিশুদের অপ্রাপ্ত বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। এতে অপ্রাপ্ত বয়সে মেয়েশিশুরা মা হয়। দারিদ্র্য, নির্যাতন, সামাজিক সংস্কারসহ নানা ঘটনার শিকার হয়ে অনেক মেয়েশিশু যৌনকর্মী হিসেবেও কাজ করতে বাধ্য হয়।

https://dailysangram.com/post/461798