১৫ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৭:১৬

ভ্যাকসিন নিতে ঢাকায় প্রবাসীরা

দিনভর ভোগান্তি

সৌদি প্রবাসী ফয়সাল। চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন করোনাভাইরাসের টিকা নিতে। সকাল ৯টায় রাজধানীর পরীবাগে ডক্টর্স ডরমেটরি কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়ান। দীর্ঘ লাইন। লাইনে জায়গা না হওয়ায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। অনেকে টিকা নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন। তবে লাইন থেকে মানুষ কমছে না। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বেলা ১টার দিকে মডার্নার টিকা গ্রহণ করেন তিনি।

বলেন, আমরা প্রবাসী। বিএমইটির প্রবাসী অ্যাপসের মাধ্যমে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করি। এসএমএস পেয়ে আজ টিকা নিতে আসলাম। এসে দেখি আমার মতো বহু প্রবাসী ও স্থানীয়রা টিকা নিতে ভিড় করেছেন। কেন্দ্রটিতে কয়েকটি ভাগে টিকা দেয়া হলেও প্রথমদিকে সিরিয়াল মেনে টিকা দেয়া হয়নি। অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়েও বিভিন্ন পরিচয়ে আগে টিকা নিয়েছেন। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেন। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে। অনেকেই টিকা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। অনেকেই নিবন্ধন জটিলতায় পড়ে টিকা নিতে পারেন নি। আবার অনেকেই এসএমএস ছাড়াই টিকা নিতে এসেছেন। কেউ কেউ টিকাও নিয়েছেন। আবার এসএমএস পেয়েও টিকা নিতে পারেননি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। নোয়াখালী থেকে টিকা নিতে এসেছেন সৌদি প্রবাসী জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ ২ মাস আছে। এজন্য তড়িঘড়ি করে টিকা দিতে এসেছি। এসে নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছি।
দীর্ঘ সময় লাইনে পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৩
দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেলা ২টা পর্যন্ত টিকা পাইনি। আজ টিকা পাবো কিনা অনিশ্চয়তায় আছি। মানুষের চাপ যেন কমছেই না। এখানে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। যে যেভাবে পারছেন, আগে আগে টিকা নিয়ে যাচ্ছেন। আজ যদি টিকা নিতে না পারি, তাহলে ঢাকায় আরেকটা দিন থাকতে হবে। কাল ভোররাতে এসে লাইনে দাঁড়াবো।

কেরানীগঞ্জের আবুল হোসেন। সকাল ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ৭৬৪ নম্বর টোকেন পেয়েছেন। দুপুর ২টার দিকে ৫০০ পর্যন্ত টোকেনধারী পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন। তবে টিকা নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তিনি। অভিযোগ করে বলেন, এখানে প্রবাসীসহ বিভিন্ন পেশা ও স্থানীয়রা টিকা নিতে এসেছেন। সবাই সিরিয়াল মেনে টিকা নিতে আগ্রহ দেখালেও অনেকেই সিরিয়াল না মেনে, এখানকার স্টাফদের সহায়তায় পরে এসে আগে টিকা দিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে সরজমিন দেখা যায়, কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে সহস্রাধিক মানুষ টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকেই টিকার জন্য টোকেন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ আসছেন এসএমএস পেয়ে। আবার কেউ এসএমএস ছাড়া। লাইন ছাড়াও দেয়া হচ্ছে টিকা। তারা কেন্দ্রের দায়িত্বরত কয়েকজনের পরিচয়ে টিকা নিয়েছেন। এতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন কেউ কেউ।

এ ছাড়া অনেকেই রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত টিকা পাননি। কয়েকজন প্রবাসী বলেন, পাসপোর্ট দিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন নেয়নি। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেও মডার্নার টিকা পাইনি।

একই কেন্দ্রে সিনোফার্মের টিকাও দেয়া হচ্ছে। ওই বুথে কয়েকজন জানান, ৩/৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকা পাননি। মানুষের চেয়ে বুথের সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়া যে সংখ্যক লোক টিকা দিতে আসছেন সে তুলনায় পর্যাপ্ত বুথ ও লোকবল নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন সেখানে টিকার জন্য ভিড় করছেন। একই স্থানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রবাসীদেরও চাপ রয়েছে। এতে টিকা নিতে আসা মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

নরসিংদী থেকে আসা ইতালি প্রবাসী কামরুল ইসলাম বলেন, ভোররাতে রওয়ানা দিয়ে টিকা নিতে আসছি। এসে বেশ ভিড়। অনেক কষ্টে সিরিয়াল পেয়েছি। মানুষের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছি। টিকার জন্য সবাই আগে থেকে ভিড় করছেন। ভোগান্তির শিকার হলেও টিকা নিতে পারায় কষ্টের কথা ভুলে গেছি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তিকে টিকা নিতে আসতে বললে এত ভোগান্তি হতো না। এখন সবাই রেজিস্ট্রেশন করেই টিকা নেয়ার জন্য ভিড় করেন। ওই কেন্দ্রের বিশৃঙ্খলার বিষয়ে সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বরত কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

একইচিত্র দেখা যাচ্ছে প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত অন্য কেন্দ্রগুলোতেও। তবে যারা এসএমএস পেয়ে আসছেন দুর্ভোগ হলেও টিকা গ্রহণ করেই তারা ফিরছেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=288336&cat=2