১৪ আগস্ট ২০২১, শনিবার, ৪:২৬

আগাম জামিন বন্ধ

ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত মানুষ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন শেষে দীর্ঘদিন পর আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে হাইকোর্টের সব বেঞ্চ খুলে দেয়া হয়েছে। নি¤œ আদালতেও স্বাভাবিক বিচারকার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে এখনো আগাম জামিনের দ্বার খোলেনি। হাইকোর্টে ফৌজদারি মামলা শুনানির এখতিয়ার সম্পন্ন যেসব বেঞ্চ রয়েছে তাদের আগাম জামিন আবেদন গ্রহণ করার এখতিয়ার দেয়া হয়নি। আইনজীবীদের অভিযোগÑ আগাম জামিন বন্ধ। কিন্তু মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড বন্ধ নেই। সবই চলছে। গ্রেফতার বন্ধ থাকলে আগাম জামিন বন্ধ থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। এতে মানুষের আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণœ করা হচ্ছে।

আইনজীবীরা জানান, পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে ইতঃপূর্বে ফৌজদারি মামলায় জড়িত বিচারপ্রার্থীরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেয়ার সুযোগ পেলেও গত ১৪ এপ্রিল থেকে হাইকোর্টে আগাম জামিন বন্ধ রয়েছে। এতে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তারা আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ সারা দেশে ফৌজদারি মামলায় বিচারপ্রার্থী মানুষ। আগাম জামিন বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীরা হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না। এ জন্য অবিলম্বে আগাম জামিন চালু করা জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এখন হাইকোর্টের সব বেঞ্চে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ শুরু হয়েছে। গত ১১ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের ৫৩ বেঞ্চে ভার্চুয়ালি এ বিচারকাজ শুরু হয়। অপর দিকে ৮ আগস্ট থেকেই আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ চলছে। গত ৯ আগস্ট ৫৩ ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠন করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি। ওই আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে আগামী ১১ আগস্ট বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য বেঞ্চ গঠন করা হলো।

অন্য দিকে দেশের সব অধঃস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে এখন থেকে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: আলী আকবর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সব অধঃস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা-মোকদ্দমায় বিচারক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতিতে অথবা আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এবং এই কোর্ট কর্তৃক জারি করা এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুসরণপূর্বক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সকল প্রকার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আইনজীবীদের অভিযোগÑ হাইকোর্টের সব বেঞ্চ খুলে দেয়া হলেও আগাম জামিন বন্ধ রাখা হয়েছে।

আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন শুনানির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি সুপ্রিম কোর্ট। তবে সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদসহ আইনজীবী দীর্ঘদিন থেকে হাইকোর্টে আগাম জামিন চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি, প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চে আগে আগাম জামিনের এখতিয়ার ছিল। হঠাৎ করে আগাম জামিন বন্ধ করে দেয়া হলো। এখন যাদের আগাম জামিন দরকার তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আগাম জামিনের দরকার। আগাম জামিন না থাকায় মানুষ মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে আমরা আগাম জামিনের বিধান চালু করতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি অবিলম্বে তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিনের বিধান চালু ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টে যত ক্রিমিনাল বেঞ্চ দেয়া হয়েছে সেগুলোর পাওয়ার উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে (আগাম জামিনের আবেদনপত্র ব্যতীত ডিভিশন বেঞ্চে গ্রহণযোগ্য ফৌজদারি মোশন)। আগাম জামিন শুনানির এখতিয়ার দেয়া হয়নি। আমি মনে করি অবিলম্বে আগাম জামিনের দ্বার খুলে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আগাম জামিন বন্ধ। কিন্তু মামলা, গ্রেফতার রিমান্ড বন্ধ নেই, সবই চলছে। গ্রেফতার বন্ধ থাকলে আগাম জামিন বন্ধ থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। এতে মানুষের আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণœ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রেফতার হয়রানি তো বিরোধী দলের লোক হচ্ছে। তাদের আইনগত অধিকার ক্ষুণœ করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা চাই আগাম জামিনের দ্বার খুলে দেয়া হোক। ভার্চুয়াল আদালতেও আগাম জামিনের শুনানি হতে পারে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/601413