১৩ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, ১:৩৮

হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা

সয়াবিনের আড়ালে পাম অয়েল

৬ মাসে পাম অয়েল আমদানি ৭ লাখ ৬০ হাজার টন, সয়াবিন ৫ লাখ ৬০ হাজার টন

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন-এই ছয় মাসে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টন। একই সময়ে দেশে পাম অয়েল এসেছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ সয়াবিনের তুলনায় ২ লাখ টন বেশি পাম অয়েল আমদানি হয়েছে।

কিন্তু দেশের বাজারগুলোয় সয়লাব সয়াবিন তেলে। পাম অয়েল খুব একটা চোখে পড়ে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে সয়াবিনের নামে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পামতেল বা পাম অয়েল দেশের বেকারি শিল্প, শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট (ডালডা) তৈরিসহ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে খোলা সয়াবিনের নামে অধিকাংশ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে।

বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি মেশানো হচ্ছে সয়াবিনের সঙ্গে পাম অয়েল। একশ্রেণির ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিনের সঙ্গে পাম অয়েল মিশ্রণ করে সেটি সয়াবিন বলেই চালিয়ে দিচ্ছেন। এতে হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে-এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদদের।

জানা যায়, বাজারে সয়াবিন তেল চোখে বেশি পড়লেও পরিসংখ্যান বলছে পাম অয়েলের চাহিদা বেশি। ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্টের কৃষি বিভাগ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাম অয়েলের চাহিদা বৃদ্ধি নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

সেখানে দেখানো হয়, ২০১৩ সাল থেকে পাম অয়েলের ব্যবহার বাড়তে থাকে বাংলাদেশে। ২০১২ সালে দেশে পাম অয়েলের চাহিদা ছিল ১০ লাখ ৫০ হাজার টন। ২০১৩ সালে এর চাহিদা ১২ লাখ ১৫ হাজার টনে ওঠে।

পর্যায়ক্রমে ২০২০ সালে পাম অয়েলের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ১০ হাজার টনে। আর চলতি বছরে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টনের প্রয়োজন হবে বলে সেখানে বলা হয়।

পাম অয়েলের চাহিদা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ হলো ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে ভেজাল মিশ্রণের মাধ্যমে। কারণ সাধারণ মানুষ খুব সহজে খোলাবাজার থেকে পাম অয়েল ক্রয় করেন না।

বেশির ভাগই ব্যবহার করেন সয়াবিন তেল। কিন্তু কতিপয় ব্যবসায়ী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সয়াবিনের নামে পাম অয়েল দিচ্ছেন। যে কারণে দেশের অভ্যন্তরে এভাবে বাড়ছে পাম অয়েলের চাহিদা।

জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম যুগান্তরকে বলেন, ফুড প্রসেসিং শিল্পে ডালডা ব্যবহার হয়।

ডালডা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। আর ডালডা সয়াবিন ও পাম অয়েল উভয় দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যেহেতু পাম অয়েলের দাম তুলনামূলক কম, সেজন্য ডালডা তৈরির ক্ষেত্রে পাম অয়েল ব্যবহার হয় বেশি।

তিনি আরও বলেন, খোলাবাজারে পাম অয়েল খুঁজে পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ তেল সয়াবিন বলে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু দেশে বেশি আমদানি হচ্ছে পাম অয়েল।

মানবদেহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে ট্রান্স ফ্যাট (ডালডা)। এটি দুই উপায়ে তৈরি হয়। একটি প্রকৃতিক উপায়ে, অপরটি কৃত্রিমভাবে।

কৃত্রিমভাবে তৈরি হয় পাম ও সয়াবিন তেল যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আংশিক হাইড্রোজেনেশন করা হলে সেখান থেকে মাখনের মতো অর্ধকঠিন মারজারিন বা কঠিন ডালডা বা বনষ্পতি উৎপন্ন হয়।

এই প্রক্রিয়ায় ট্রান্স ফ্যাটও উৎপাদন হয়। শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট উচ্চমাত্রায় গ্রহণে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বছরে ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে একইভাবে মারা যাচ্ছেন বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার জন। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ হচ্ছে ট্রান্স ফ্যাটের কারণে। আর ট্রান্স ফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

এই ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার হয় বেকারি শিল্পসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যসামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে। আর এই ট্রান্স ফ্যাট (ডালডা) তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে পাম অয়েল। কারণ পাম অয়েলের দামও তুলনামূলক কম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যসামগ্রীতে মোট ফ্যাটের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বেশি নয়-এটি নিশ্চিত করতে বলেছে। আর এ নিয়ে কাজ করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

এজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলছে। এটি চূড়ান্ত করা গেলে ট্রান্স ফ্যাটের ব্যবহার কমবে। পাশাপাশি ট্রান্স ফ্যাট উৎপাদনে পাম অয়েলের ব্যবহার কমবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/453331/