১৩ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, ১:৩৬

বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে ফুটপাথে পসরা সাজিয়েছে হকাররা

বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে আবারো ফুটপাথে পসরা সাজিয়েছে হকাররা। দীর্ঘ দিনের অনাহারী জীবনের বুঝি এবার অবসান হবে। আবারো তাদের হাঁকডাকÑ ‘এই বাইছা লন, দেইখা লন’। ‘যেডা লইবেন এক শ’, বাইছা লন এক শ’, দেইখা লন এক শ’। কোরবানির ঈদের পর থেকে রাজধানীর এই ফুটপাথ একেবারেই কোলাহলহীন ছিল। মনে হয়েছিল মৃত্যুপুরী। তবে হকাররা বলেছেন, নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে আবারো নতুন করে টাকা গুনতে হয়েছে। পজেশনের জন্য লাইনম্যানদের দিতে হয়েছে টাকা।

কোরবানির ঈদের আগ পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও কোথাও ফুটপাথে হকার দেখা গেছে। তবে সব এলাকায় নয়। এরপর শুরু হয় কঠোর লকডাউন। সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয় লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য। বন্ধ হয়ে যায় ফুটপাথের ব্যবসাও। অধিকাংশ হকার চলে যায় গ্রামে।

রাজধানীর মতিঝিলের এক হকার সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বলেন, কোরবানির আগে কয়েক দিন দোকানদারি করেছেন। এরপর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হয় কঠোর লকডাউন। লকডাউন শুরুর আগেই ২২ জুলাই গ্রামের বাড়ি চলে যান। দু’দিন আগে এসেছেন। আবারো ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন লকডাউনের কারণে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ থাকায় এই সময় দিন কেটেছে খেয়ে-না-খেয়ে। প্রথমে কয়েক দিন পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন। এরপর মানুষের কাছে ধারদেনা করেছেন। অনেক দিন আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়েছে। লকডাউন খুলে দেয়ার পরই গ্রাম থেকে চলে এসেছেন। মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে আবারো ফুটপাথে ব্যবসা শুরু করেছেন। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আবারো স্বপ্ন দেখছেন খেয়ে-পরে ভালোভাবে বেঁচে থাকার।

দীর্ঘ দিন পরে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথ আবারো জমজমাট দেখা গেছে। রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম , জিপিও, গুলিস্তান, নীলক্ষেত-নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথ আবারো জমে উঠেছে। যেমন হকার বসেছে, তেমনি ক্রেতারও ভিড় রয়েছে।

দৈনিক বাংলা এলাকার কাইউম নামের এক হকার বলেন, না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছিল। আবারো স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে হকার বসেছে। মানুষের আয় বাণিজ্য না থাকায় কেউ আর দেরি করেনি। সুযোগ পেয়েই বসে গেছে। তবে এখনো বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ দিকে ফুটপাথের চাঁদাবাজি সেই আগের নিয়মেই শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হকার বলেন, ফুটপাথে হকার বসেছে, আর চাঁদাবাজি হবে না; এমন কি হয়! হকার বসার সাথে সাথে চাঁদাবাজিও শুরু। ব্যবসা শুরু করার আগেই লাইনম্যানদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়েছে। দিন শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা তুলে দিতে হচ্ছে লাইনম্যানদের হাতে।

বাংলাদেশ হকারস ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, প্রায় সবগুলো ফুটপাথেই কমবেশি হকার ইতোমধ্যে বসেছে। লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দিন তারা দোকানদারি করতে না পেরে দারুণ কষ্টে ছিল। যে কারণে কেউ আর দেরি করেনি। সবাই যে যারা মতো নির্দিষ্ট স্থানে বসে গেছে। এম এ কাশেম বলেন, চাঁদাবাজরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজরাও দেরি করেনি। শুরু হয়ে গেছে তাদের মিশন। আগের নিয়মেই চলছে চাঁদাবাজি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/601200/