১৩ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, ১:৩৫

ব্যাংকের বেশির ভাগ ঋণ আটকা বাণিজ্যিক খাতে

তৈরী পোশাক খাত দ্বিতীয় অবস্থানে

ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই আটকে আছে বাণিজ্যিক ঋণ খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, প্রায় ২৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ দখল করে রেখেছে এই খাত। আর প্রায় ১৩ শতাংশ ঋণ দখল করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তৈরী পোশাক খাত। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে দেশের টেক্সটাইল খাত।

দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ২০২০ সালের তথ্য উপাত্ত নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের প্রায় সময় জুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলেছে। এতে প্রথম অবস্থায় তৈরী পোশাকের অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। অনেক আদেশ স্থগিত করা হয়। এতে রফতানি আয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এ কারণেই তৈরী পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। যার প্রভাব পড়েছে খেলাপি ঋণের ওপর। যদিও গেল বছর কোনো ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে নতুন করে তাদেরকে খেলাপি করা হয়নি। তবে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ যুক্ত হওয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে এ দু’টি খাত। তবে পণ্য আমদানিসহ বাণিজ্যিক ঋণের কিছু খাত ছাড়া বেশির ভাগই তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এর পরেও বরাবরের মতো বাণিজ্যিক খাতের দখলে বেশির ভাগ খেলাপি ঋণ আটকে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে খাতভিত্তিক অন্যান্য খাতের মধ্যে গেল বছর মোট খেলাপি ঋণের পাঁচ ভাগ রয়েছে কৃষি খাতে, কৃষিভিত্তিক শিল্পে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ, অন্যান্য শিল্পের মধ্যে বৃহৎ শিল্পে রয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ, ৬ শতাংশের ওপর খেলাপি ঋণ রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে, কনস্ট্রাকশনে রয়েছে সোয়া ৫ শতাংশ। এ দিকে খাতভিত্তিক খেলাপি ঋণের পাশাপাশি ব্যাংকভেদে খেলাপি ঋণের অর্ধেক অর্থাৎ ৪৭ শতাংশ আটকে আছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের দখলে। আর শীর্ষ ১০ ব্যাংকের দখলে রয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের খেলাপি ঋণে সবচেয়ে বেশি আটকে আছে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের দুই-তৃতীয়াংশই ১০ ব্যাংকের দখলে রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু তার বেশির ভাগই পরিশোধ করছেন না। নানা প্রভাব খাটিয়ে বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেন। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ঋণের বড় অংশ ফেরত পাওয়া যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অনীহা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। আবার অন্য বড় উদ্যোক্তারাও ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অপর দিকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ করা হয়। অতীতেও এ ধরনের অনেক ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। আবার এসব ঋণ পরিশোধ না করারও প্রবণতাও বেশি। এর ফলে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদেরকে খেলাপি করা হয়নি। এর ফলে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। তবে আগের বছরের পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণের ধারাবাহিকতায় ব্যাংকগুলোর অবস্থান তেমন বদলায়নি। ব্যাংকারদের মতে, বিভিন্ন সময় বিনা ডাউন পেমেন্টেও ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সুদহারেও ছাড় দেয়া হয়। অর্থাৎ বেশি সুদে ঋণ নিলেও এ সুবিধার আওতায় এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরের ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। সবমিলেই আগের বছরের খেলাপি পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণই নতুন করে যুক্ত হয়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, যেসব খাত আগের বছরগুলোতে ভালো করছিল এমন অনেক খাতই খেলাপি ঋণে আটকে গেছে। যেমনÑ বিদায়ী বছরে পরিবহন খাতে মোট ঋণের ২১ হাজার ২১৫ কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার ৮২৮ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় লকডাউন, গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে উদ্যোক্তাদের আয় কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে এ খাতের খেলাপি ঋণের ওপর।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/601177/