রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তে রোববার ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। ছবি: যুগান্তর
৯ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ১:০৯

বিধিনিষেধ আরও শিথিল

অফিস দোকান খুলছে বুধবার

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ আরও শিথিল করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের অফিস, ব্যাংক, গণপরিবহণ, শপিংমল ও খাবার রেস্তোরাঁ বুধবার থেকে খোলা যাবে। চালু করা যাবে শিল্প-কারখানা। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে সব আসনেই যাত্রী বহন করা যাবে।

শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। খাবার দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এসব নির্দেশনা সংবলিত অফিস আদেশ রোববার জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এতে সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এখনই পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্ট খোলা যাবে না।

বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১১ আগস্ট থেকে বিধিনিষেধ ধাপে ধাপে শিথিল করা হবে। কোনটি কখন খোলা হবে, কতটুকু পরিসরে খোলা হবে সেটা দেখতে হবে। তবে কঠোরভাবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন হয়, সেদিকে জোরালো ব্যবস্থা থাকবে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি নিুআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করেই ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাস্ক পরা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পাড়ামহল্লায় সচেতন কমিটি করা হবে।

করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তখন ২৩টি শর্ত দেওয়া হয়। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হয়। পরে সব শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়া ও অভ্যন্তরীণ বিমান চালু রেখে ওই বিধিনিষেধের মেয়াদ পাঁচ দিন বাড়ানো হয়।

আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় এ বিধিনিষেধ শেষ হবে। এ কারণে বুধবার থেকে বিধিনিষেধ আরও শিথিল করে অফিস আদেশ জারি করল সরকার।

এতে বলা হয়, ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে। আদালতগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

সড়ক, রেল ও নৌপথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ ও যানবাহন চলাচল করতে পারবে (প্রতি আসনে যাত্রী বহন করা যাবে)।

তবে সড়ক পথে গণপরিবহণ চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহণ সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।

এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, আজ থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা শুরু হবে।

দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে অফিস আদেশে বলা হয়, শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে। সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে।

খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। অফিস আদেশে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

গণপরিবহণ, বিভিন্ন দপ্তর, মার্কেট ও বাজারসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ অফিস আদেশ সব জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

অফিস আদেশ জারির আগে লকডাউন প্রসঙ্গ নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, যারা স্বল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অনেক দোকানের জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখনো বন্ধ, কখনো বিধিনিষেধের আওতায়, কখনো বিধিনিষেধ শিথিল করা-এটার মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে; যতদিন পর্যন্ত টিকা দিয়ে আমরা সে অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারি।

তিনি বলেন, যত কম জনবল নিয়ে অফিস আদালত চালু করা যায়, তাই করা হবে। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো হয়তো এখনই খুলবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গার্মেন্ট কারখানা বাস্তবতার নিরিখেই খুলে দিতে হয়েছে।

বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করে। স্থানীয়ভাবে যারা উপস্থিত আছেন তাদের নিয়ে কারখানা খোলার শর্তেই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সব শ্রমিক চলে এসেছে।

কাজের প্রয়োজনে যারা বাড়ির বাইরে আসছে, তাদের টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু দোকানপাট খুলতে হবে-সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানে সেদিকে আমাদের জোর থাকবে। গতকাল (শনিবার) থেকে গণটিকা চালু করেছি, এটি ১২ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে।

আমরা চাইব সবাই যেন মাস্ক পরেন। টিকা কার্যক্রমে দোকানদার, যাদের বাইরে যেতে হয়, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ড্রাইভার-হেল্পারদের প্রায়োরিটি দিয়েছি। ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করার চিন্তা আছে।

যারা মাস্ক পরবে না, তাদের জরিমানা করার ক্ষমতা পুলিশকে দেওয়ার পরিকল্পনার অগ্রগতি জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামীতে নির্দেশনা পাব, তার আলোকে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে, পাড়া, মহল্লা ও ওয়ার্ডে করোনা সচেতন কমিটি করব।

মানুষকে বোঝাব যাতে তারা মাস্ক পরেন, কারণ ছাড়া বাইরে না যান এবং জনসমাগম ঘটে এমন জায়গা এড়িয়ে চলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।

তখন দেওয়া হয় ২১টি নির্দেশনা। ওই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সব অফিস-আদালত বন্ধ, যান্ত্রিক যানবাহনে যাত্রী বহনও নিষিদ্ধ করা হয়। পরে বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই করা হয়। এরপর পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে বিধিনিষেধ ১৫ থেকে ২২ জুলাই শিথিল করা হয়।

সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩টি শর্ত সংযুক্ত করে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে আদেশ জারি করা হয়। পরে তা আরও ৫ দিন বাড়িয়ে কাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত করা হয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/451834