৮ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ১২:৪৮

ঢামেকে স্বজনদের আহাজারি

রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকান্ডে আরও ২১ লাশ হস্তান্তর

‘আমার মা কই? ও মা, কই গেলা? আম্মাগো...’। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে বাবাকে জড়িয়ে ধরে এভাবেই চিৎকার করে কাঁদছিল আট বছরের শিশু সুমা আক্তার। কিছুক্ষণ আগেই স্বজনরা তার মা উর্মিতা আক্তারের লাশ নিয়ে হবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মায়ের লাশটিও শেষবারের মতো দেখতে পারেনি ছোট্ট শিশু সুমা আক্তার।

শুধু সুমা আক্তার একা নয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ২১ জনের লাশ বুঝে নেয়ার সময় স্বজনদের কান্না, আহাজারি আর আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে ঢামেক মর্গ এলাকা।

গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও সিআইডির তত্ত্বাবধানে লাশগুলো স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়। লাশ বুঝিয়ে দেয়ার আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকাসহ লাশগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাশ বুঝে নেয়ার সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ মাটিতে লুটিয়ে কান্না জুড়ে দেন। তারা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের মালিকদের বিচার দাবি করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ নুরুন্নবী জানান, অগ্নিকান্ডে নিহতদের লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। গতকাল ২১টিসহ মোট ৪৫টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে সিআইডির ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত মোট ৪৫ জনের মধ্যে ৪ আগস্ট ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়। নিহত ৪৮ জনের মধ্যে বাকি তিনজনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় সেগুলো আপাতত ঢামেক মর্গেই থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৪৮টি লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় ১০ জুলাই একটি হত্যা মামলা করে পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। লাশ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় লাশ ও স্বজনদের কাছ থেকে নেয়া ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়।

https://www.dailyinqilab.com/article/406174