৭ আগস্ট ২০২১, শনিবার, ১২:৩৩

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ বছরে কম

করোনায়ও মাথাপিছু আয় ২০৭ ডলার বেড়েছে

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি হলেও গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে কম। আর স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার স্থানীয় মুদ্রায় ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে উঠে এসেছে। ওই অর্থবছর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা মহামারীর কারণে পরবর্তীতে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। অন্য দিকে, করোনাকালীনও মানুষের মাথাপিছু আয় ২০৭ ডলার বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলার। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

বিবিএস তার তথ্যে বলছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। এই অর্থবছরের সরকারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছর ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক হিসাবে কৃষি খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্প খাতে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এটি ছিল ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সেবা খাতে গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

মাথাপিছু আয় : সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলারে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। অন্য দিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২৪ ডলার ছিল, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০৮ টাকা। সে হিসাবে এক অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২০৩ ডলার বা ১৭ হাজার ২৬৫ টাকা।
জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির ওপর। আর সে কারণেই কাক্সিক্ষত মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি গত দুটি অর্থবছরে। তারপরও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনাতেই এই দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। তিনি বলেন, করোনা মহামারীর কারণেই ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি এত কম হয়েছে। কেননা প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে দেশে যত বেশি উৎপাদন হবে, তার উপর। করোনা মহামারীর কারণে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা বাধা গ্রস্ত হয়। তাই প্রবৃদ্ধিও কম হয়েছে। আশা করছি সামনে আমরা সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবো।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব দিতে একটু দেরি হয়েছে। কারণ এটি বিভিন্ন পর্যায় থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ওই অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার প্রধান কারণই হলো করোনা মহামারী। এই মহামারীর অভিঘাতের কারণে ওই সময় দেশের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। আর সে কারণেই প্রবৃদ্ধি অনেক কম হয়েছে। তিনি বলেন, সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের মহামারী সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর সে কারণে প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/599917