৭ আগস্ট ২০২১, শনিবার, ১২:২৮

পাল্টে গেছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব

২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রাথমিক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বলা হলেও চূড়ান্ত হিসাবে প্রকৃত জিডিপি অর্জন হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এদিকে করোনা মহামারির মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরের ৯ মাসে (২০২০-২১) বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে স্থির মূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে মাথাপিছু আয় ২০২৪ ডলার থেকে বেড়ে ২২২৭ ডলার দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। বাস্তবে ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিবিএসের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রাথমিক হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বলা হলেও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চূড়ান্ত হিসাব দেখা গেছে, ওই অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি অর্জন ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত জানান, ওই অর্থবছরে শিল্প ও রফতানি খাতের পরিস্থিতি ভালো ছিল, কৃষিখাতেও বড় কোনও সমস্যা ছিল না। তবে করোনায় সেবা খাত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পরিবহন ও নির্মাণ শিল্পে ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে।

বিবিএসের তথ্য বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর মাথাপিছু আয় ২০২৪ ডলার থেকে বেড়ে ২২২৭ ডলারে পৌঁছেছে। অবশ্য ২০২০-২১ অর্থবছরের নয় মাসের (২০২০ সালের ১ জুলাই-২০২১ সালের ৩০ মার্চ) হিসাব কষে এই তথ্য প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে, এর আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। স্থিরমূল্যে চূড়ান্ত হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। প্রাথমিক হিসাবে ওই অর্থবছরে জিডিপির আকার ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা হয়েছিল বলে এর আগে জানায় বিবিএস।

করোনাভাইরাস মহামারির কঠিন সময়ে গত অর্থবছর ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর ও ড. জায়েদ বখত। জায়েদ বখত জানান, বর্তমানে করোনা প্রভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চাপে থাকলেও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের পুরোটা সময় দেশ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। যে কারণে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, বাস্তবে আগের অর্থবছরের মতো তিন, সাড়ে তিন শতাংশ নেমে আসবে। তবে মহামারির এই মহাসংকটের সময়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, এই কঠিন সময়ে ৩-৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও যদি হয়, সেটাকেও আমি ‘অসম্ভব অর্জন’ বলে মনে করব।
প্রসঙ্গত, ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরেও (২০১৯-২০) একই লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে অবশ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরেছে সরকার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২০২৪ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১৯০৯ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১৭৫১ ডলার। তার আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১৬১০ ডলার।
প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসের দিকে ওই অর্থবছরের নয় মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপির একটি প্রাথমিক হিসাব তৈরি করে থাকে বিবিএস। পরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে পুরো অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত হাতে পেয়ে জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব করা হয়। তবে মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাব দেরিতে প্রকাশ করলো পরিসংখ্যান ব্যুরো।

https://dailysangram.com/post/460844