৬ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, ১২:২২

টিসিবির বাজারদর পর্যালোচনা

পণ্যের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৬২ শতাংশ

ভোজ্যতেল, চাল, পেঁয়াজ, চিনি, ডালের দাম বেশি বেড়েছে

করোনাকালে সব পেশার মানুষের আয় কমেছে। অনেকেরই চাকরি না থাকায় আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে বছরের ব্যবধানে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

চাল থেকে শুরু করে ডাল এমনকি ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে হুহু করে। সবজি, আটা-ময়দা, মাছ-মাংস, পেঁয়াজ, আদা-রসুনের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাশাপাশি চিনি ও লবণ কিনতেও ক্রেতাকে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খুচরা বাজারদরের তালিকা পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, গত বছর একই সময়ের তুলনায় রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রায় ২০ ধরনের নিত্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কেজিপ্রতি ২ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬২ দশমিক ৯৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার গত বছরের চেয়ে সরু চাল কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা। এতে গত বছরের চেয়ে দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মোটা চাল কেজিতে ৭ টাকা বেড়ে ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে গত বছরের চেয়ে বেড়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

বছরের ব্যবধানে খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন লিটারে ৪৫ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে দাম বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পাঁচ লিটারের সয়াবিনের বোতলে ২০০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বছরের ব্যবধানে ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাম তৈল (লুজ) প্রতি লিটারে ৫০ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকায়। এতে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

বড় দানার মশুর ডালে কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটা কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়ে ৩২-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ৫০ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানি করা রসুন কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি জিরা ৩০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেজপাতা কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া খুচরা বাজারে শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে ৬২০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনিতে ৭ টাকা বেড়ে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি লবণ বছরের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মাছ-মাংস বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি কেজি গরুর মাংসে ২০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি বছরের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছ কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ৩৫০-৩৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে এসেছেন ভ্যান চালক মো. গফুর। তিনি যুগান্তরকে বলেন, লকডাউনে আয় নেই। দুই দিন ধরে বাড়িতে খাবার নেই। আজ ভ্যান নিয়ে বের হয়ে কিছু টাকা উপার্জন করেছি। কিন্তু বাজারে এক কেজি চাল কিনতেই ৫০-৫৫ টাকা খরচ হয়ে যাবে। বাকি টাকা দিয়ে কী কিনব, বুঝেই উঠতে পারছি না। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। কমার কোনো লক্ষণ নেই। এমন চলতে থাকলে না খেয়ে মারা যেতে হবে।

সম্প্রতি ক্যাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। জীবনযাত্রার এ ব্যয় বৃদ্ধি ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় ভোক্তা বিড়ম্বনায় পড়েছে। করোনাকালে সব ধরনের ক্রেতার আয় কমেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যয় বাড়লে টিকে থাকতে কষ্টকর।

তিনি জানান, দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত খাদ্যের মজুত আছে। কী কারণে দাম বেড়েছে তদারকি সংস্থার বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

পাশাপাশি এখন দেশে কী পরিমাণ পণ্য আছে এবং কোন কোন পণ্য আগামভাবে এনে সরবরাহ ঠিক রাখা যাবে, সংশ্লিষ্টদের এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

দরকার হলে এখন থেকেই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমদানি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দরকার হলে তা করে পণ্য আনতে হবে। এতে সামনে ভোক্তা বিড়ম্বনায় পড়বে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আশা করি, তদারকির মাধ্যমে পণ্যের দাম কমবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/450778