৬ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, ১২:২১

গ্রামে টেলিটক নেটওয়ার্ক

হাজার কোটি টাকা খরচ কমিয়ে ২ বছর পর প্রস্তাব

৭৩.২২ শতাংশ সাইটে বিটিএস টাওয়ারের ঘাটতি; বর্তমানে মার্কেট শেয়ার মাত্র ৩ শতাংশ

শহরের নাগরিকরা ইন্টারনেট সেবা গ্রহণে সক্ষম হলেও দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ এ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত রয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক নেটওয়ার্কও গ্রামে পৌঁছাতে পারেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি খাতের মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবা প্রদানে আগ্রহ কম থাকায় দেশে ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। টেলিটকের ৭৩.২২ শতাংশ সাইটে বেইজ ট্রান্সসিভার (বিটিএস) টাওয়ারের ঘাটতি রয়েছে। মার্কেট শেয়ার বর্তমানে মাত্র ৩ শতাংশ। গ্রামের মানুষগুলোকে সেবা দিতে প্রায় দুই বছর আগে টেলিটকের দেয়া প্রস্তাব ফেরত পাঠায় পরিকল্পনা কমিশন। তখন প্রকল্পে কিছু কিছু খাতে অস্বাভাবিক খরচের প্রাক্কলনে সায় দেয়নি ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। ফলে ৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা কমিয়ে নতুন করে সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় বলে ভৌত অবকাঠামো সূত্রে জানা গেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে আগামী বছর থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা ৫জি’র কার্যক্রম শুরু করতে চায় সরকার। গ্রামের মানুষগুলোকে ফোরজি নেটওয়ার্কের সুবিধার আওতায় আনতে চায়। ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক না হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তিখাতের মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবা দেয়ার আগ্রহ কম থাকায় দেশে ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। দেশব্যাপী টুজি, থ্রিজি, ও ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিশ্চিতকরণের জন্য টেলিটকের আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিসহ কমপক্ষে ১৮ হাজার ১৬০টি সাইটে বেইজ ট্রান্সসিভার (বিটিএস) টাওয়ার স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে। ফোরজি’র সম্প্রসারণ ও ৫জি উন্নয়নের মাধ্যমে টেলিটকের ৫০ শতাংশ সাইট উন্নয়ন করা হবে। তার জন্য ব্যয় হবে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের নাম হলো, গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পেশ হবে বলে একনেক সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বর্তমানে টেলিটকের মোট টাওয়ার সংখ্যা ৪ হাজার ৮৬৪টি। যা প্রয়োজনীয় বিটিএস টাওয়ারের ২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং মার্কেট শেয়ার মাত্র ৩ শতাংশ। এই ৪ হাজার ৮৬৪টি টাওয়ারে ২জি বিটিএস যন্ত্রপাতি স্থাপন করে ভয়েস সেবা দেয়া হলেও ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য ৩জি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে ৩ হাজার ৬২টিতে এবং ৪জি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে ১১০০টিতে। টেলিটকের বাস্তবায়নাধীন ৩জি প্রযুক্তি চালুকরণ ও ২ দশমিক ৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ শীর্ষক অপর একটি প্রকল্পের কাজ চলতি ২০২০ সালের জুনে শেষ হবে। ওই প্রকল্পের আওতায় টেলিটক বিদ্যমান বিটিএসগুলো আপগ্রেড করাসহ নতুন ৯০০টি ৩জি ও ৪জি বিটিএস টাওয়ার স্থাপন করেছে। চলমান এই প্রকল্পসহ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন অন্যান্য প্রকল্প সমাপ্তির পর টেলিটকের মোট টাওয়ারের সংখ্যা হবে ৫ হাজার ৯৭৭টি। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর টেলিটকের মোট সাইট সংখ্যা হবে ৮ হাজার ৯৭৭টি, যা এর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫০ শতাংশ। ৩জি ও ৪জি নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্প্রসারণের পাশাপাশি টেলিটকের বিদ্যমান সুইচিং কোর নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি ৮০ লাখের সাথে আরো ১০ লাখ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে টেলিটকের মার্কেট শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হবে।
প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম হচ্ছে, দেড় হাজারটি নতুন সাইটে বিটিএস টাওয়ার নির্মাণ ও শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অন্য দেড় হাজারটি টাওয়ারের যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্কের বিদ্যমান ৫০০টি বিটিএস টাওয়ারের যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন, নেটওয়ার্কের বিদ্যমান ৩১০০টি সাইটের বিটিএস টাওয়ারের ৩জি ও ৪জি ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ, নেটওয়ার্কের ২ হাজার ৩১০টি বিদ্যমান সাইটে ৪জি যন্ত্রপাতি স্থাপন, ৫জি প্রযুক্তি চালুকরণের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম হিসেবে ট্রান্সমিশন কোর নেটওয়ার্ক ১০জিবিপিএস হতে ১০০ জিবিপিএস উন্নীতকরণ এবং ৫০ হাজার সরকারি দফতর, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিপিই এবং বিভাগীয় শহরের ৫০০টি বহুতল ভবনে টেলিটকের ইন-বিল্ডিং কাভারেজ শক্তিশালীকরণ করা হবে। টেলিটক বলছে, প্রস্তাবিত ৩ হাজারটি বিটিএস টাওয়ারের মধ্যে দেড় হাজারটি টাওয়ার গ্রাম বা ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত হবে। এ সব স্থানে টাওয়ার কোম্পানিগুলোর কোনো টাওয়ার না থাকায় টেলিটক কর্তৃক ১৫০০টি টাওয়ার স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে বিটিআরসির গাইড লাইন অনুযায়ী টাওয়ারগুলো কোম্পানিদের মধ্যে ভাড়ায় বা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে।
প্রকল্পের ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল রশীদ জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের বিদ্যমান নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হবে। গ্রামের মানুষ টেলিটকের আধুনিক সেবা পাবেন। পাশাপাশি সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/599617