চলতি শতাব্দীর শুরুর কথা। রাজধানীর ইস্কাটনকেন্দ্রিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিল ওই সময়ে। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে যাদের দাপটের কাছে কেউ টিকতো না। তাদের ছিল একচ্ছত্র ক্ষমতা। যে ক’টি সন্ত্রাসী গ্রুপ তখন ঢাকায় সক্রিয় ছিল তাদের মধ্যে ইস্কটনকেন্দ্রিক ওই গ্রুপটি ঢাকার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতো। এমনকি এফডিসির নায়ক-নায়িকাদেরও। তখন আলোচিত দুই নায়ক-নায়িকার বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় নায়িকা এই বিয়ে অস্বীকার করে বসেন। ওই নায়িকার বিয়ে অস্বীকারের পেছনে নাকি ওই সময়কার ইস্কাটনকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গ্রুপটির হাত ছিল। না হলে ওই নায়িকার ক্যারিয়ার এমনকি জীবন সংহারের সম্ভাবনার কথাও কেউ কেউ বলেছেন ওই সময়।
দীর্ঘদিন পরে আবারো নায়িকা পরীমণি এবং মডেল পিয়াসা ও মৌ গ্রেফতারের পর উঠে এলো আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনের কথা। আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়ারা তাদেরকে ব্যবহার করে আসছিল বলে জানা গেছে। আর আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনের কারণে তারাও ছিলেন অনেকটা বেপরোয়া। মাদক সেবন, পর্নো ভিডিও নির্মাণের মতো জঘন্য কাজ করতেও তারা দ্বিধা করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীমণির সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ মিলেছে। পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজের মাধ্যমেই এই নিষিদ্ধ জগতের সাথে পরীমণির পরিচয় ঘটেছে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদের টার্গেট ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে সম্পর্ক রেখে এফডিসিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। জানা গেছে, কাঁঠালবাগান কেন্দ্রিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রায় এক যুগ ধরে এফডিসি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সম্প্রতি ওই সন্ত্রাসী ইয়াবা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যান। এই গ্রুপটির সাথে রাজের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। রাজ ওই সন্ত্রাসীকে দিয়ে এফডিসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, পরীমণি যতটা না নায়িকা, তার চেয়ে বেশি ভাবে থাকতেন। তিনি বলেন, এত বছরে তার মাত্র দু’টি ছবি একটু ব্যবসা সফল হয়েছে। বাকি সব ছবিই ফ্লপ করেছে। কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনের কারণে বেশ ভাব নিয়ে চলাচল করতেন। তার বাসায় নিয়মিত আড্ডা বসতো, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক ভিড় জমাতেন। দেশী-বিদেশী অনেক সন্ত্রাসীর অপরাধ কর্মকাণ্ডের সমঝোতা হতো এই আড্ডায়।
অপর দিকে, পিয়াসা এবং মৌ-এর নিয়মিত আড্ডার মূল উপস্থিতিই ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক সন্ত্রাসী। এই আড্ডায় অনেক বড় বড় সমঝোতা হয়ে আসছিল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই গ্রুপটির সাথে ঢাকার অনেক সন্ত্রাসীর সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল। এদের মধ্যে দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত অনেক সন্ত্রাসীই রয়েছে। এদের মাধ্যমেই আগ্নেয়াস্ত্রেরও বিশাল চালান আসতো পিয়াসা-মৌ এর কাছে। পরে তাদের আড্ডায় বসেই এই অস্ত্রের কেনাবেচা হতো। এমনকি, বড় মাপের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিশন আদায় ও মাদকেরও বড় বড় চালানের সমঝোতাও হতো এই আড্ডায়। শোবিজ জগতের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পিয়াসা এবং মৌ কোন শ্রেণীর মডেল তা তাদের জানা নেই। তারা যতটা না মডেলিংয়ের জন্য পরিচিত তার চেয়ে বেশি পরিচিত বেলেল্লাপনা আর আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনের জন্য।