রাসায়নিক হামলায় সিরিয়ার খান শাইখুনে নিহত জমজ সন্তানের লাশ কোলে নির্বাক বাবা : হিন্দুস্থান টাইমস
৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৫৫

বিশ্ববিবেক কোথায়

কাফনে মোড়া দু’টি শিশুর লাশ বুকে জাপটে ধরে থেকে থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন হতভাগা হতভাগ্য বাবা। আয়লান কুর্দির পর আহমেদ আর আইয়ার এর লাশের এই ছবি আরো একবার হতবাক করল গোটা দুনিয়াকে। সিরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ঘৃণ্য তৎপরতায় শিউরে উঠছে সোসাল সাইট। রাসায়নিক গ্যাস হামলায় মারা গেছে ওই মাসুম দু’টি শিশু।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ সিরিয়ার বিদ্রোহী অধ্যুষিত ইদলিব প্রদেশের খান শেখু শহরের আকাশে দেখা যায় যুদ্ধবিমান। অভিযোগ, সরকার বা রুশ সেনার সেই বিমান থেকেই দেয়া হয় সারিন ও কোরিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস। গন্ধ ও বর্ণহীন সারিন গ্যাস অজান্তেই সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে।
মনে করা হচ্ছে, বিষাক্ত সারিনেই দমবন্ধ হয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছে ৭২ জন। যাদের মধ্যে ২০টিই শিশু। মুখে গ্যাঁজলা উঠে অজ্ঞান হয়ে যান কেউ কেউ। অসুস্থদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হোয়াইট হেলমেট নামে সিরিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা চলছিল যে শিবিরে, সেখানেও যুদ্ধ বিমান হানা দেয় কিছুক্ষণের মধ্যে। রাশিয়ার মদদপুষ্ট সিরিয়ার আসাদ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০১৩ সালে ঘোউতায় সারিন গ্যাস হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৩০০ টন বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র হস্তান্তরে রাজি হয় সিরিয়া সরকার। সিরিয়ায় মার্কিন সেনা জোটের অভিযান ঠেকাতে আন্তর্জাতিক নজরদারির অধীনে রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতেও রাজি হয় তারা। সরকার এই চুক্তি মেনে চলছে কি না, তা জানতে তদন্ত করেছিল জাতিসঙ্ঘ ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গত অক্টোবরে তাদের রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে অন্তত তিনবার রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে সরকার। ২০১৫ সালে মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেট। অশান্ত সিরিয়া থেকে পালায় আয়লান কুর্দির পরিবার। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তুরস্ক থেকে পালানোর সময় ভূমধ্যসাগরে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে দেড় বছরের আয়লান। গ্রিসের সৈকতে তার লাশ ভেসে আসে। সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লানের সেই ছবি ভাইরাল হয়। জমে ওঠে ‘বিশ্ব-আরব গগনে মেঘ’। অথচ বেড়েই চলেছে শিশু হত্যার নারকীয় তাণ্ডব। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব বিবেক যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে। জাগ্রত বিবেকের একটাই প্রশ্নÑ কুম্ভকর্ণের এ ঘুম কি ভাঙবার নয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/210231