৩ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:৫৯

স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট

তিন বছরের প্রকল্প ঠেকছে ৯ বছরে

এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব, তবুও অনিশ্চয়তা

করোনার ধাক্কা লেগেছে ‘প্রকিউরমেন্ট অব স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ প্রকল্পে। জাপানি পরামর্শকরা চলে যাওয়ায় এই মুহূর্তে বন্ধ আছে বাস্তবায়ন কাজ। এমন পরিস্থিতিতে মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ফলে তিন বছরের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে ৯ বছর। এরপরও বর্ধিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

তবে ব্যয় বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমানো হচ্ছে সিডি ভ্যাট খাতের খরচ। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে-বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর কারণে জাপানি পরামর্শকরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে জাপান ফিরে গেছেন। ফলে ফিক্সড টাইপ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের যন্ত্রাংশ স্থাপন, প্রশিক্ষণ, কমিশনিং, ট্রায়াল রানসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এসব কাজ জাপানি পরামর্শক ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে-নতুন কোনো অঙ্গ সংযোজন হয়নি। তবে কিছু অঙ্গের টাকার পরিমাণ কম বা বেশি হওয়ায় আন্তঃখাত সমন্বয় করা হয়েছে। এছাড়া সিডি ভ্যাট খাতের ব্যয় কমানো হয়েছে।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) এবিএম সফিকুল হায়দার সোমবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটির অধিকাংশ অর্থ অনুদান হিসাবে দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অরগানাইজেশন বা জিঙ্ক। শুরুর দিকে অনুদান চুক্তিসহ বিভিন্ন কারণে দেরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সব কিছু গুছিয়ে আনার পরই শুরু হয় কোভিড মহামারি। তাদের পরামর্শকরা হঠাৎ করেই জাপানে গিয়ে আমাদের জানিয়েছেন তারা কোভিড-১৯ এর কারণে ফিরে গেছেন। এখন তারা ফিরে না এলে কাজও করা যাচ্ছে না। তবে প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই হয়ে আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, ‘প্রকিউরমেন্ট অব স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’(২ টন ট্রাক মাউন্টেড) শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালের এপ্রিল হতে ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর পর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ ৯ মাস বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এতেও বাস্তবায়ন না হলে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

এ সময়ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়নি। এতেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয় মেয়াদ। আবারও ৯ মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। প্রথম সংশোধনীর পর চতুর্থ বার ফের এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় কোভিড-১৯। ফলে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পটি যখন অনুমোদন পায় তখন মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮৯ কোটি টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে ধরা হয় ১৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা কমিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে ১১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, লবণাক্ত পানিশোধনের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষদেরকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। এছাড়া লবণাক্ত পানি পরিশোধনের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য। প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে-৩০টি মোবাইল মোবাইল স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (২টন ট্র্যাক মাউন্টেড) সংগ্রহ করা। যেগুলো ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া ২১টি ফিক্সড টাইপ ডিস্যালাইনেশন ইউনিট সংগ্রহ ও স্থাপন করা। জেআইসিএস এজেন্টের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ব্যবহার ও দুর্যোগের ওপর স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া, শেড নির্মাণ এবং পানির ট্যাংক সরবরাহ করা হবে। পিইসি সভার কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীর আগে এতবার মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিক ব্যাখা সভায় উপস্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মতামত প্রয়োজন।

কিন্তু তা প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে যুক্ত করা হয়নি। প্রকল্পটি মূলত ৩০টি মোবাইল স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যাট নির্মাণের জন্য হলেও সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়ে ২১টি ফিক্সড স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কেনার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধিত হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো ডিটেইল সার্ভে রিপোর্ট ডিপিপিতে সংযোজন করা হয়নি। এছাড়া প্রস্তাবিত ডিপিপিতে লগফ্রেমে আউটপুটের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে সুপেয় পানির আওতায় আনা হবে তা নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

প্রস্তাবে ফিক্সড স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ করা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার সঙ্গে মূলধন খাতের ডিপিএ অংশের সাশ্রয় হওয়া ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা যোগ করে মোট ৬ কোটি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/449483